হেফাজতে ইসলামের সাবেক আমির শাহ আহমদ শফীকে হত্যার অভিযোগে মামলা হয়েছে। এতে সংগঠনটির যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকসহ ৩৬ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে চট্টগ্রামের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শিবলু কুমার দের আদালতে মামলাটি করেন শফীর শ্যালক মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন।
মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব নাছির উদ্দিন মুনির, মীর ইদ্রিস, সহকারী যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উল্লাহ, আহসান উল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী, প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া নোমান ফয়েজী।
বাদীর আইনজীবী মোহাম্মদ আবু হানিফ নিউজবাংলাকে জানান, আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছে।
আবু হানিফ বলেন, মামলায় বাদী অভিযোগ করেন, শাহ আহমদ শফীকে গৃহবন্দি করে নির্যাতনের মাধ্যমে শাহাদাত বরণ করতে বাধ্য করা হয়েছে। মৃত্যুর কয়েক দিন আগে থেকে খাবার, ওষুধ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তাকে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশ করে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে।
মামলায় বাদীসহ ৬ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর আল্লামা শফীর মাদ্রাসায় ব্যাপক হাঙ্গামা হয়, যাতে তিনি মাদ্রাসা প্রধানের পদ ছাড়তে বাধ্য জন। এরপর অসুস্থ হয়ে পড়েন
গত ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার একটি হাসপাতালে আনার পর মারা যান আল্লামা শফি। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। তবে তার মৃ্ত্যুর দুই দিন আগে চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় ব্যাপক হাঙ্গামা হয়, যার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি মাদ্রাসা প্রধানের পদ থেকে সরে যেতে বাধ্য হন।
শফীর পাশাপাশি তার ছেলে আনাস মাদানীকে হেফাজতে ইসলামের প্রচার সম্পাদক ও মাদ্রাসার পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
শফীর মৃত্যুর পর অভিযোগ উঠে, মাদ্রাসায় হাঙ্গামার সময় তার অফিসে হামলা হয়েছে, এমনকি সময় মতো হাসপাতালে আসতে দেয়া হয়নি। অক্সিজেনের নল খুলে ফেলা হয়, এক পর্যায়ে অক্সিজেনের তার ছিড়ে ফেলা হয়।
গত ১৫ নভেম্বর হেফাজতে ইসলামের একাংশের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, আল্লামা শফীকে হত্যা করা হয়েছে।
ওই সংবাদ সম্মেলনটি করেন শফীর শ্যালক মঈন উদ্দিন ও গত কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মঈনুদ্দীন রুহী।
মাদ্রাসায় যারা হাঙ্গামা করেন তারা আল্লামা শফির কার্যালয়-কক্ষে ব্যাপক ভাঙচুর করেন, অভিযোগ আছে তাকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়
রুহী সেদিন হাটহাজারী মাদ্রাসার ঘটনাবলী উল্লেখ করে বলেন, ‘এতে তিনি (আল্লামা শফী) ভীষণভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসুস্থ অবস্থায় হজরতের অক্সিজেন লাইন বারবার খুলে দেয়ায় তিনি মৃত্যুর দিকে ঝুঁকে পড়েন এবং কোমায় চলে যান।
‘অনেক কষ্ট করে চিকিৎসার জন্য বের করা হলেও রাস্তায় পরিকল্পিতভাবে অ্যাম্বুলেন্স আটকিয়ে সময়ক্ষেপণ করে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়।’
আহমদ শফীর শ্যালক মঈন উদ্দিন বলেন, ‘আল্লামা শাহ আহমদ শফী হুজুর জামায়াত-শিবিরের পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের শিকার।’
এরপর ডিসেম্বরের শুরুতে নাতি মাওলানা আরশাদ ও আল্লামা শফীর দেখভালের দায়িত্বে থাকা খাদেম হোজাইফা আহমদের জবানবন্দি বিবৃত করে ‘হাটহাজারীতে জীবনের শেষ তিন দিন’ নামে ৩২ পৃষ্ঠার একটি পুস্তিকা প্রকাশ করা হয়। তাতেও দাবি করা হয়, আল্লামা শফীকে মেরে ফেলা হয়েছে।
মাদ্রাসায় হাঙ্গামায় আল্লামা শফী অসুস্থ হয়ে গেলে তাকে চিকিৎসা না দেয়ার অভিযোগ আছে। এক পর্যায়ে অ্যাম্বুলেন্স আসতে দেয়া হলেও অক্সিজেনের নল ছিড়ে ফেলা হয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে পরিবারের পক্ষ থেকে
ওই পুস্তিকায় বলা হয়, শফীর কার্যালয়ে হামলার পর তিনি সুস্থ আছেন, এমন ভিডিও তৈরি করে তা অনলাইনে প্রচার করতে তার নাতিকে বাধ্য করা হয়।
এই দুই জনের অভিযোগ, আল্লামা শফীকে ওষুধ খেতে দেয়া হয়নি, তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করা হয়েছে, তাকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে, তার জিনিসপত্র ভাঙচুর করা হয়েছে, তাকে অ্যাম্বুলেন্সে উঠতে বাধা দেয়া হয়েছে।
হেফাজতের বর্তমান আমির জুনাইদ বাবুনগরীসহ অব্যাহতি দেয়া তিন শিক্ষককে ফিরিয়ে আনাসহ ছয় দফা দাবিতে ১৬ সেপ্টেম্বর জোহরের নামাজের পর বিক্ষোভ শুরু হয়। সেটি চলে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
পুস্তিকায় বলা হয়, দুই দিনের হাঙ্গামা শেষে ‘রাত দেড়টায় আল্লামা শফীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা বলেন দেরি হয়ে গেছে। অক্সিজেন না থাকার কারণে হুজুরের যে ক্ষতি হয়েছে, তা তাদের পক্ষে চিকিৎসা দ্বারা পূরণ করা সম্ভব নয়।’
১৮ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টায় ডাক্তাররা বোর্ড মিটিংয়ে বসেন। তারা নাতি আরশাদকে জানান, তাদের চেষ্টা ব্যর্থ।’
পুস্তিকার তথ্য অনুযাযী, বিকেল সোয়া চারটায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে পুরান ঢাকার আসগর আলী হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হন শফীর অনুসারীরা। সন্ধ্যা ৬টার আগেই তাকে হাসপাতালে জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়। কিছুক্ষণ পর তিনি মারা যান।