এক বছর ধরে নানা রোগ বাসা বেঁধেছে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোশাররফ হোসেনের শরীরে। করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরুর আগে বিছানায় পড়েছিলেন অনেকদিন। নিজের দৈনন্দিন স্বাভাবিক কাজটুকু করতে পারতেন না।
তবে বেশ কিছু দিন ধরে একটু ভালো বোধ করছেন। তাই বাড়ির কারও কথা না শুনে অসুস্থ শরীরেই লাঠিতে ভর দিয়ে গিয়েছেন জাতীয় স্মৃতিসৌধে।
যদিও মানুষের ভিড়ের কারণে ভিতরে ঢুকতে পারছিলেন না বয়স ও রোগে ন্যুজ জাতির এই বীর সন্তান। তবে দুই কিশোরের সাহায্যে নিয়ে ঘুরেছেনে পুরো সৌধ এলাকা।
বিজয়ের ৪৯তম বছর উদযাপনের সকালে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে দেখা মেলে ৭৫ বয়সী মুক্তিযোদ্ধা মোশাররফ হোসেনের। স্মৃতিসৌধের গেট থেকে স্তম্ভ পর্যন্ত শত কষ্ট সত্ত্বেও ঘুরে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের।
প্রতি বছরেই বিজয় ও স্বাধীনতা দিবসে স্মৃতিসৌধে আসেন মুক্তিযোদ্ধা মোশাররফ হোসেন।
তিনি আশুলিয়ার কুঁরগাও পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন বরিশাল বিভাগের নয় নম্বর সেক্টরে।
নিউজবাংলাকে মোশাররফ বলেন, ‘বছর খানেক আগে অসুস্থতার জন্য উঠতে- বসতে পারতাম না। সবকিছুই মানুষ দিয়ে করাতে হতো। তবে এখন আগের থেকে ভালো। তাই আজ সকালে একাই রিকশা নিয়ে স্মৃতিসৌধের গেটে আসছি।
‘কিন্তু অনেক মানুষের ভিড়ের কারণে ভেতরে ঢুকতে পারছিলাম না। তখন ওরা দুইজন (ছবির দুই কিশোর) মানুষ ঠেলে ঠেলে আমাকে ভিতরে নিছে।’
এই দিনটিতে কেমন লাগে, জানতে চাইলে এই বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ‘সারা মাস রোজা থাকার পর যদি ঈদের দিনে মানুষ খায় তখন কী রকম লাগে? নয় মাস কষ্ট করে যুদ্ধ করার পরে আজকে এই বিজয় দিবস। রণাঙ্গণে যারা আমার সাথী ওখানে গেলে তাদের সাথেও আমার দেখা হয়। সৌধে আসলে যুদ্ধের দিনগুলো একান্তে স্মরণ করতে পারি। তখন অনেক ভালো লাগে, গর্ব হয়। এজন্য শরীরের কষ্ট আমার কোন কষ্টই মনে হয় না।’
জাতির এই বীর সেনা বলেন, ‘দুর্নীতিটা দূর হলে দেশ আরো সুন্দর হবে। আরো উন্নতি হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের যা কিছু দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। এই প্রধানমন্ত্রীর আমলেই মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান হইছে। এর আগে তো কেউ জিজ্ঞাসাও করে নাই।’
তার বিবেচনায় মুক্তিযোদ্ধা ও দেশের ভালোর জন্য যা করছে তা আওয়ামী লীগ সরকারই করছে। বলেন, ‘দেশে যারা দুর্নীতির মতো অপরাধ করতেছে এটাকে যদি প্রধানমন্ত্রী প্রতিহত করতে পারেন, তাহলে তিনি অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবেস। তাহলে অনেক ভালো হবে। ওনার জন্যও মানুষ জীবন দেবে।’
এই মুক্তিযোদ্ধার ছেলে মোয়াজ্জেম হোসেন মিরন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বয়স হওয়াতে ওনার ডায়েবেটিস ও অ্যাজমার প্রবলেম আছে। তারপরও জোর করে আজ স্মৃতিসৌধে গেছেন। মুরুব্বি মানুষতো তাই বেশি ফোর্স করা যায় না। আমি বাসায় ছিলাম না। অন্যান্যবার আমি অথবা পরিবারের অন্য কেউ তাকে নিয়ে যেত। এমনিতে প্রতি বছরেই ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে সে স্মৃতিসৌধে যান বাবা।’