করোনা পরিস্থিতির কারণে বিজয় দিবসের রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতায় উপস্থিত থাকেননি প্রধানমন্ত্রী। দলের আলোচনা সভাতেও তিনি অংশ নিয়েছেন বাসভবন থেকে ভার্চুয়ালি।
এই পরিস্থিতি ভালো লাগছে না বঙ্গবন্ধু কন্যার। মনে হচ্ছে তিনি বন্দি শিবিরে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘খুব কষ্ট লাগছে, দুঃখ লাগছে। সবাই ওখানে বসে আছে আর আমি দূরে বন্দিশিবিরে আরেকটা জেলখানার মতো বসে আছি।’
বুধবার বিজয় দিবসে আওয়ামী লীগের আলোচনায় বক্তব্য রাখছিলেন দলের সভাপতি। সভাটি হয় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের দলীয় কার্যালয়ে। আর প্রধানমন্ত্রী এতে অংশ নেন গণভবন থেকে।
অবশ্য এই পরিস্থিতি অচিরেই কেটে যাবে বলে আশাবাদী প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘করোনা নামক বন্দিশিবির থেকে কবে মুক্তি পাবে সারা বিশ্ব!…এখান থেকে কীভাবে মুক্তি আসবে সেটাই বড় কথা। তবে ভ্যাকসিন আসার ব্যবস্থা আমরা করেছি। ইতোমধ্যে আমাদের চুক্তিও হয়ে গেছে। আমরা আশা করি, তাড়াতাড়ি ভ্যাকসিন পেয়ে যাব।’
স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, ‘করোনা ভাইরাসে সবাই সুস্থ থাকার চেষ্টা করবেন, মাস্কটা পরে রাখবেন। একটু দূরত্ব বজায় রাখবেন। স্বাস্থ্য সুরক্ষা রেখে মানুষের সেবা করবেন।’
করোনা পরিস্থিতিতে জনগণের পাশে দাঁড়ানোয় নেতা-কর্মীদের ধন্যবাদও জানান শেখ হাসিনা। বলেন, ‘আমাদের প্রতিটি সংগঠনের নেতাকর্মীরা মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, ফলে অনেক মানুষের সেবা করতে গিয়ে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। অনেকে মৃত্যুবরণ করেছেন।’
মানুষের সেবা করাই আওয়ামী লীগের কাজ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সেই সেবা আমরা করে যাচ্ছি, সেই সেবা আমরা করে যাব।’
‘সহনশীলতার সঙ্গে মোকাবিলা’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে কোনো পরিস্থিতি সহনশীলতার সঙ্গে মোকাবিলা করা হবে। কে কী বলল, না বলল সেগুলো শোনার থেকে আমরা কতটুকু দেশের জন্য করতে পারলাম সেটিই আমাদের চিন্তায় থাকবে। তাহলে আমরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারব, সঠিক কাজ করতে পারব। সেই ভাবে আমরা করে যাচ্ছি।’
এবারের বিজয় দিবস পালিত হচ্ছে এমন এক পরিস্থিতিতে যখন জাতির পিতার ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করে কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক কয়েকটি দল ও সংগঠন মাঠে নেমেছে।
এর প্রতিক্রিয়ায় নানা ঘটনাপ্রবাহের পর ১৫ ডিসেম্বর জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধর্মের নামে কোনো বিশৃঙ্খলা করতে দেব না।’আওয়ামী লীগের আলোচনায় শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে কথা ওঠার চেষ্টা হয়েছে। বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। বাংলাদেশে সকল ধর্মের মানুষ সমান সুযোগ নিয়ে চলবে।
‘একটা কথা বলব। এই মাটিতে হিন্দু, মুসলমান, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ সকল ধর্ম; অর্থাৎ আমরা মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ আছি বলে অন্য ধর্মের মানুষকে অবহেলার চোখে দেখব তা নয়। মনে রাখতে হবে, সকলে এক হয়ে মুক্তিযুদ্ধে রক্ত ঢেলে দিয়ে এ দেশ স্বাধীন করেছে। এদেশের মাটিতে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলে সমান অধিকার নিয়ে বাস করবে। যার যার ধর্ম পালনের অধিকার সকলের থাকবে। সেই চেতনায় আমরা বিশ্বাস করি।
‘ইসলাম আমাদের সেই শিক্ষাই দিয়ে থাকে। নবী করিম (স.) আমাদের সেই শিক্ষাই দিয়ে থাকেন।’
সংগঠনকে শক্তিশালী করার আহ্বান
এই আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতার আদর্শকে মানুষের কাছে নিয়ে যেতে হবে। যে নামটি ৭৫ এর পর মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল, … ইউনেস্কো ঘোষণা দিয়েছে যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে আন্তর্জাতিক পুরস্কার দেয়া হবে; অর্থনীতিতে যারা অবদান রাখতে পারবে তাদের। মুজিব শতবর্ষে জাতির জন্য এটা বড় উপহার বলে মনে করি।’
আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।বেগম মতিয়া চৌধুরী, আব্দুর রাজ্জাক, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, হাছান মাহমুদ, আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, মির্জা আজমও এ সময় বক্তব্য রাখেন।
সভাটি সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ।