গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে আট শিক্ষকের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা সনদ জালিয়াতির প্রমাণ মিলেছে এক বছর আগে। অথচ জড়িতদের বিরুদ্ধে এখনও নেয়া হয়নি কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। স্বপদে থেকে তারা নিয়মিত বেতনভাতা তুলছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের নেতাসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষ। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বলছেন, জালিয়াতিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
যাদের বিরুদ্ধে সনদ জালিয়াতির প্রমাণ মিলেছে তারা হলেন গোবিন্দগঞ্জের মহিমাগঞ্জের নূরে হাবিব ও তার বোন রাফিয়া মোর্শেদা, মাস্টারপাড়ার নুরনাহার বেগম, তার বোন গুল বাহার ও সুলতানা পারভিন, সোনাতলা গ্রামের মুন্নি খাতুন, গাড়ামারা গ্রামের আম্বিয়া খাতুন এবং ঘোষপাড়ার জেসমিন ওরফে কবিতা।
২০১৯ সালের ১৯ নভেম্বর গোবিন্দগঞ্জের আজেদুর রহমান নামের এক ব্যক্তি ওই আট শিক্ষকের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন। এতে বলা হয়, বিভিন্ন সময়ে বাবা-নানাকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে ভুয়া সনদ দেখিয়ে তারা চাকরি নেন। তাদের জালিয়াতির কারণে বঞ্চিত হয়েছেন প্রকৃত মেধাবীরা।
অভিযোগ খতিয়ে দেখতে ২৫ নভেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রামকৃষ্ণ বর্মনকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রশাসন। গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর তদন্ত শেষে প্রতিবেদন জেলা শিক্ষা অফিসে পাঠান ইউএনও।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রামকৃষ্ণ বর্মন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তদন্ত কমিটি সনদ জালিয়াতির সত্যতা পায়। তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মন্ত্রণালয় পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদনটি বর্তমানে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর পর্যালোচনা করছে।’
তদন্ত শুরুর পর থেকেই গা ঢাকা দিয়েছেন ওই আট জন। তবে মাস্টারপাড়ার বাড়িতে পাওয়া যায় বামন হাজরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সুলতানা পারভিনকে। বাবার নামে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ ব্যবহার করেন তিনি। কোন সেক্টর থেকে তার বাবা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল এ প্রশ্নের কোনো তথ্য দিতে পারেননি সুলতানা।
মুক্তিযোদ্ধার সনদ জালিয়াতির ঘটনায় ক্ষুব্ধ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও শিক্ষা কমিটির সভাপতি আব্দুল লতিফ প্রধান। বলেন, ‘এটা মানা যায় না। সংশ্লিষ্ট দপ্তর দ্রুত জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন বলে মনে করি।’
জেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক শাহজাহান সোহেল বলেন, ‘চাকরির আশায় শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় এমন জালিয়াতি কীভাবে সম্ভব। মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট জালিয়াতির এই চক্রকে দ্রুত চিহ্নিত করা দরকার।’
অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় মামলা হওয়া উচিৎ বলে মনে করেন সোহেল।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রমজান আলী বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। তাদের চাকুরিচ্যুত করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগও করা হয়েছে।’
জালিয়াতির প্রমাণ মেলার পরও স্বপদে থেকে বেতনভাতা উত্তোলন প্রসঙ্গে ইউএনও রামকৃষ্ণ বর্মন বলেন, ‘এটা ডিপার্টমেন্টাল প্রসেসিং। অধিদপ্তর বেতন ভাতার বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন।’