বিজয় দিবসে জাতীয় শহিদ মিনারে একাত্তরের শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ধামরাইয়ের মাদ্রাসাতুল আল-নুর থেকে একদল শিক্ষার্থী। মাদ্রাসাটির একজন শিক্ষকের নেতৃত্বে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে আসেন ২০ জন শিক্ষার্থী।
এই মাদ্রাসা থেকে যারা স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানান, তাদের একজন মো. জাহিদুল ইসলাম। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এখানে এসে শহিদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছি। বাংলাদেশি হিসেবে মনের কোণে এই দিনটায় আবেগ অনুভব করি, এ জন্যই এখানে এসেছি। এতো মানুষ দেখে বেশ ভালো লাগছে।’
জাতীয় স্মৃতিসৌধ বা কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতায় কওমি মাদ্রাসার পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানোর আয়োজন থাকে না বললেই চলে। মাদ্রাসা শিক্ষকদের ব্যাখ্যা, এভাবে শ্রদ্ধা জানানো ধর্ম অনুমোদন করে না। যদিও গত কয়েক বছর ধরে কারও কারও মধ্যে এসব ব্যাখ্যা না মানার প্রবণতা তৈরি হয়েছে।
ইদানীং কিছু কওমি মাদ্রাসায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সংগীত পরিবেশ করা হয়, যদিও সিংহভাগ মাদ্রাসাতেই এসব আনুষ্ঠানিকতা পালন করা হয় না।
এবারের বিজয় দিবস পালিত হচ্ছে এক ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। কারোনাকাল বলে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধার আয়োজন সীমিত। বুধবার ভোরে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রীয় যে আনুষ্ঠানিকতা, তাতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাননি। তাদের পক্ষ থেকে যান তাদের সামরিক সচিবরা।
তবে সাধারণ মানুষের ঢলের কমতি ছিল না। যাদের প্রাণের বিনিময়ে এই দেশ মুক্ত হয়েছে, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে দলে দলে আসে মানুষ।
নানা সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক দল ও সংগঠন সেখানে শ্রদ্ধা জানালেও ধর্মভিত্তিক দল বা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল নগণ্য। কেবল মাজারকেন্দ্রিক রাজনৈতিক দল তরীকত ফেডারেশনের একদল নেতা-কর্মী বাদ্য বাজনা বাজিয়ে গেছেন শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর আয়োজনে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় ধর্মভিত্তিক যেসব দল ও সংগঠন ছিল, তাদের সিংহভাগই পাকিস্তানের পক্ষে অস্ত্র ধারণ করেছে, বা মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তবে মাজারগুলোর একটি বড় অংশ মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করেছে।
তরীকত ফেডারেশনের নেতা হেদায়েতউল্লাহ জাফর স্মৃতিসৌধে বলেন, ‘যার যার মনোভাব তার তার। কিন্তু দেশ তো একটাই। দেশের জন্য এখানে এসেছি। আমাদের সম্পর্কে ভুল বোঝা হয়। আমাদেরকে কোণায় ফেলে রাখা হয়। সে জন্য জাঁকজমক করে ঢোল পিটিয়ে বলতে চাই দেশ আমাদের জিকিরে।’