বিজয়ের অর্থ জানা নেই ছোট্ট সানজিদার। পাঁচ বছরের এ শিশু বোঝে না রক্ত দিয়ে পাওয়া এই বাংলার গৌরবগাঁথা।
তবে আজ যে বিশেষ দিন, তা সে ঠিকই টের পেয়েছে। লাল-সবুজ জামা গায়ে খাতায় এঁকে ফেলল লাল সবুজ পতাকা। আর তাতেই আনন্দে আত্মহারা সানজিদা।
সানজিদা থাকে রাজধানীর বেগুনবাড়ির বস্তিতে। সুবিধাপ্রাপ্ত অন্য শিশুদের মতো বেড়ে ওঠা তার ভাগ্যে নেই। কিন্তু আজ সে ভীষণ খুশি।
সানজিদার মতো ওই বস্তির ১১০ শিশুকে নিয়ে বিজয় উৎসবে মেতেছে ‘কাঠপেন্সিল’ নামের একটি সংগঠন। চার থেকে সাত বছরের এ শিশুদের চোখেমুখে বিজয়ের অন্যরকম আনন্দ।
তিন বছরের রোজা আপন মনে আঁকছিল তার ছবি। সে দৃশ্য দেখছিলেন তার বাবা জুয়েল মিয়া। মেয়ের হাতের তুলির আঁচড় ভিজিয়ে তোলে বাবার চোখ।
চোখের পানি শুকালে কথা হয় জুয়েলের সঙ্গে। বলেন, ‘আমি তো ভাবি নাই কখনো আমার মাইয়া পেন্সিল ধরতে পারব। এখানে আইসা অনেক ভালা লাগছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের জীবনে তো বিজয় নাই। ওরা যদি একটু জানে পড়ে, তাইলেই আমাগো শান্তি।’
জুয়েলের মতো অনেক অভিভাবক ভিড় করেছেন সন্তানের আঁকাআঁকি দেখতে। তাদের প্রতিভায় মুগ্ধ তারা।
হাতিরঝিলের ফাঁকা এ অংশ দেখে মনে হবে যেন তারার মেলা বসেছে।
প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার বাইরে গিয়ে শিশুদের সৃজনশীলতার দিকে মনোযোগী কাঠপেন্সিল। সাত বছর ধরে বস্তির শিশুদের উন্নয়নে কাজ করছে সংগঠনটি।
২০১৩ সালে নাদিয়া আনোয়ারের হাত ধরে যাত্রা শুরু হয় কাঠপেন্সিলের। এরপর সারোয়ার হোসেন ও শাহানা সারোয়ার দম্পতি শিশুদের দেখভাল করেন। সঙ্গে আছে কয়েক জন স্বেচ্ছাসেবী।
স্বেচ্ছাসেবী সাকিব হাদী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিজয়ের দিন সম্পর্কে শিশুদের ভিন্ন ধারণা দিতে চাই। ওরা জানে না বিজয় কী। কিন্তু ওরা বোঝে আজ কোনো বিশেষ দিন। তাই সবাই বাইরে ঘোরাঘুরি করছে। আমরা চাই, বস্তিতে থেকেও বাংলাদেশ ও তার জন্মের ইতিহাস তারা ধীরে ধীরে জানুক।’
সাকিব বলেন, ‘আজ ওদের নিয়ে ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা হচ্ছে। তারপর মূল্যায়ন করা হবে তাদের ছবি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ওদের ছবিগুলো পোস্ট করে মানুষের সমর্থনের বিষয়টি দেখা হবে।’
শাহানা সারোয়ার বলেন, ‘বিজয়ের মূল্য বোঝার বয়স ওদের হয়নি। একটু আলাদা ধরনের আয়োজন করলে ওদের মধ্যে আস্তে আস্তে মূল্যবোধের জায়গা তৈরি হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা শিশুদের প্রাইমারি শিক্ষা দিই না। ছবি আঁকা, গান, কারুশিল্পের কাজ, নাটক, ইংরেজির মতো বিষয় একটু আলাদাভাবে পড়াই।
‘২০১৩ সালে যখন কাজ শুরু করি, তখন যেসব বাচ্চারা এখানে পড়াশোনা করেছে, তারাই আজ শিশুদের দায়িত্ব নিচ্ছে। পাশাপাশি তারা তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে।’