বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

অসাম্প্রদায়িক দেশের বার্তা ছড়িয়ে দেয়ার আহ্বান

  •    
  • ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০ ১৫:৩৫

স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে বিশাল লাল সবুজ পতাকা নিয়ে এসেছেন রাজিবুল ইসলাম। বলেন, ‘এদেশের অসাম্প্রদায়িক চেতনা, স্বাধীনতার অর্জন সম্বন্ধে তরুণদের সচেতন করতেই পতাকা নিয়ে এসেছি। এ পতাকা তো তরুণদেরই বইতে হবে।’

মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের শ্রদ্ধা জানাতে গাজীপুর থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধে এসেছিলেন ষাট ছুঁই ছুঁই ইফতেখারুল ইসলাম। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বয়স ছিল সাত বছর। দেশ স্বাধীনের পর এমন কোনো বছর যায়নি, যেবার বিজয় দিবসে তিনি স্মৃতিসৌধে আসেননি।

বয়স কম থাকায় মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে না পারার আক্ষেপ রয়েছে ইফতেখারের। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বয়স কম থাকায় আব্বা-আম্মা যুদ্ধে যেতে দেয়নি। কিন্তু সুযোগ পেলেই মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করতাম।’

৪৯তম বিজয় দিবসে ইফতেখারুল ইসলামের মতো আরো অনেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধে এসেছিলেন জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি ভালোবাসা জানাতে।

সকালে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদনের পরই জনতার ঢল নামে জাতীয় স্মৃতিসৌধে। তবে করোনা মহামারির কারণে সাধারণের উপস্থিতি ছিল অন্যান্যবারের চেয়ে কম।

শ্রদ্ধা জানাতে আসে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠন। বেলা বাড়ার সঙ্গে বাড়তে থাকে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি। ফুলে ফুলে ভরে ওঠে স্মৃতিসৌধের বেদী। স্বাস্থ্যবিধি মানতে অনেকের মুখেই ছিল মাস্ক।

সাভার থেকে অমৃতদাস এসেছিলেন দুই সন্তানকে নিয়ে। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাচ্চারা এখানে আসার পর মুক্তিযুদ্ধ সম্বন্ধে বিভিন্ন প্রশ্ন করছে, জানতে ও বুঝতে চাচ্ছে। ওদের আনার উদ্দেশ্যই হলো তারা যেন মুক্তিযু্দ্ধ, স্বাধীনতার মর্ম উপলব্ধি করতে পারে।

‘এদেশ স্বাধীন হওয়ার পেছনে যে একটা করুণ ইতিহাস আছে, সেটাই তাদের বলতে চাই।’

স্ত্রী-সন্তান নিয়ে স্মৃতিসৌধে এসেছিলেন রতন হালদার। সবার কপালেই লাল-সবুজের পতাকার ব্যান্ড। সাম্প্রদায়িকতার উত্থান নিয়ে হতাশা ঝড়লো রতনের কন্ঠে। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দেশে এখন যে পরিস্থিতি তার মূল কারণ মানুষের মধ্যে স্বাধীনতার চেতনা নেই।

‘মানুষ ভুলে গেছে কোন অবস্থা থেকে তারা উঠে এসেছে। বাক স্বাধীনতাই বা পেয়েছে কীভাবে। সামনের প্রজন্ম যেন একই ভুল না করে তাই সন্তানকে নিয়ে এসেছি। তাকে জানতে হবে বাংলাদেশ হওয়ার পেছনের ইতিহাস।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমি আক্তার জানান, দেশকে অনুভব করতে স্মৃতিসৌধে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস যখন জেনেছি, তখন বুঝতে পারিনি। এখন বুঝতেও পারি, ধারণও করতে পারি।

‘সেই সময়ে ফিরে যাওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু তাদের (শহিদদের) স্মরণে রাখার সুযোগ আছে। সেজন্যই এখানে আসা। দেশটাকে অনুভব করার চেষ্টা করা।’

স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে বিশাল লাল সবুজ পতাকা নিয়ে এসেছেন রাজিবুল ইসলাম। জানালেন, তরুণদের কাছে স্বাধীনতার বার্তা পৌঁছে দিতে চান তিনি।

‘এদেশের অসাম্প্রদায়িক চেতনা, স্বাধীনতার অর্জন সম্বন্ধে তরুণদের সচেতন করতেই পতাকা নিয়ে এসেছি। এ পতাকা তো তরুণদেরই বইতে হবে।’

শ্রদ্ধা নিবেদনের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘এ দেশের মাটিতে কখনও সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি দীর্ঘস্থায়ী হবে না।

‘বাংলাদেশ তৈরি হওয়ার আগে থেকেই এদেশের মানুষের মনে একটি চেতনা ঐতিহাসিকভাবে কাজ করছে। সেটি হলো অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনা। এ কারণে এ মাটিতে কখনও কোনো উগ্রপন্থা বা সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।’

বিজয় দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকায় ছিল তিন স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা। স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে মোতায়েন করা হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর বিপুল সদস্য।

করোনা সংক্রমণের কারণে এবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিজয় উদযাপনের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও।

এ বিভাগের আরো খবর