একাত্তরের শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর আনুষ্ঠানিকতা। তবে কিছু মানুষ যা করেছেন, তা হয়ে গেছে অশ্রদ্ধা।
রাজনৈতিক কর্মী, শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষের অনেকে খামখেয়ালিপনায় পদদলিত করেছেন জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের সমাধিস্থল। কেউ বা স্মৃতি স্তম্ভের চূড়ায় উঠে সেলফি ও ফটোসেশন করেছেন।
বুধবার সকালে মহান বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সামরিক সচিবরা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। করোনা মহামারির কারণে রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান এই আয়োজনে যাননি।
এর পর স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, বিদেশি কূটনৈতিকদের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয় সৌধ প্রাঙ্গণ।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শ্রমিক সংগঠন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জাতির বীর সন্তানদের শ্রদ্ধা জানান।
এ সময় শহীদদের গণকবর অবমাননা ও জাতীয় স্মৃতিসৌধের মিনারকে অবজ্ঞার বিষয়টি দেখা যায়।
জুতা পায়ে গণকবর ও সৌধ মিনারের চুড়ায় উঠে তরুণ-কিশোরদের সেলফি, ফটোসেশন বা টিকটক ভিডিও বানাতেও দেখা যায়।
পরে এ নিয়ে প্রশ্নে মুখে কয়েকজন বলেছেন, তারা জানতেন না, একজন বলেছেন ভুল হয়েছে আর এমন হবে না। ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ। বলেছেন, সৌধ কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা ও প্রশাসনের নজরদারি থাকা উচিত ছিল।
জুতা পড়ে সৌধ মিনারের চূড়ায় উঠে যারা যারা ছবি ও সেলফি তুলেছেন, তাদের একজন আশুলিয়া থানা যুবলীগ কর্মী মারুফ হোসেন।
এটা কেন করলেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘মানুষ তো অনেক কিছুই করে। স্মৃতিসৌধের মিনারে উঠলে অসম্মান হবে এরকম তো কিছু না। এ রকম যদি কিছু হতো, তাহলে তো এ কথা কোথাও না কোথাও লেখা থাকত। একটা সাইনবোর্ড থাকত যে, এটা করা যাবে না, এখানে ওঠা নিষেধ। এরকম কিছু নাই বিধায় আমরা উঠেছি এখানে।’
এটা তো কেবল শহিদদের প্রতি অবমাননা-এমন না। নিজের জীবনের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ। এমন প্রশ্নে যুবলীগ কর্মী মারুফ বলেন, ‘এটা যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমি যদি না উঠতে পারি আমি উঠব না। আমি জানি যে, উঠতে পারব, আমার কিছু হবে না। তাই আমি উঠলাম।’
পোশাক শ্রমিক আজিজুর রহমান অবশ্য এই কাজ করে অনুতপ্ত। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘অনেককেই উঠতে দেখে আমিও উঠছে। পরে বুঝতে পাইরা নাইমা আসছি। আমার ভুল হয়ে গেছে।’
শহিদদের কবরের উপর দাঁড়িয়ে ছবি তুলছিলেন ঢাকার ধামরাইয়ের ঢুলিভিটা এলাকার মাদ্রাসা শিক্ষার্থী রাকিব হাসান।
এটা শহিদের অবমাননা হয় কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বন্ধুরে দিয়া কয়ডা তুলছি। শুধু এটা যে শহিদদের কবর, আমি জানতাম না। জানলে এখানে উঠতাম না।’
তবে কবরে শহিদদের নামফলকও আছে। সেটা পড়েননি কেন?- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘চোখে পড়েনি। যেটা আমার মতো অনেকেই না দেখে কবরের উপর উঠে পড়ছে।’
তার মতে কবরের উপরে প্ল্যাকার্ড বসালে সবাই বুঝতে পারতেন।
এসব বিষয়ে জানতে জাতীয় স্মৃতিসৌধের অভ্যন্তরে দ্বায়িত্বে থাকা গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমানের অফিসে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তার মোবাইলফোনটিও বন্ধ পাওয়া গেছে।