পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে বিয়ে করে কানাডা ও আমেরিকা নেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ‘বিপুল’ টাকা আত্মসাৎকারী চক্রের হোতাসহ চারজনকে গ্রেফতারের কথা জানিয়েছে পুলিশ।
তারা হলেন- সাদিয়া জান্নাত (৩০), সিরাজুল ইসলাম সিরাজ (৪০), ফিরোজ মিয়া (৪০) ও মোসা. তামান্না (২৭)।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) বলছে, ১৭ সেপ্টেম্বর চক্রের প্রধান সাদিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। এর পর দুই পুরুষ সদস্য সিরাজ ও ফিরোজকে গ্রেফতার করেন। তাদের দেয়া তথ্যে সবশেষে সোমবার বিকালে এই চক্রের পাত্রী তামান্নাকে গ্রেফতার করা হয়।
মঙ্গলবার বিকালে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন সিআইডির সিনিয়র এএসপি (মিডিয়া) জিসানুল হক জিসান।
তিনি বলেন, ‘চলতি বছরের ৯ জুলাই দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায়া সাদিয়া বিজ্ঞাপন দেন যে, প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী কানাডার সিটিজেন ডিভোর্সি সন্তানহীন ৩৭-৫-৩ নামাজি পাত্রীর জন্য ব্যবসার দায়িত্ব নিতে আগ্রহী বয়স্ক পাত্র চাই।’
সিআইডি কর্মকর্তা জিসান জানান, বিজ্ঞাপনে যোগাযোগের জন্য বারিধারার একটি বাসার নম্বর ও একটি মোবাইল ফোন নম্বর দেয়া হয়।
বিজ্ঞাপন দেখে নাজির হোসেন নামে এক ব্যক্তি ১২ জুলাই গুলশান-২ এর একটি রেস্টুরেন্টে সাদিয়ার সঙ্গে দেখা করেন এবং প্রাথমিকভাবে দেড় লাখ টাকা ও পাসপোর্ট দেন। পরবর্তীতে সাদিয়া নাজিরকে জানান, তার কানাডায় ২০০ কোটি টাকার ব্যবসা আছে।
সাদিয়ার বক্তব্য উদ্ধৃত করে তিনি জানান, ‘কানাডায় অনেক শীত তুমি থাকতে পারবা না, আমার টাকাগুলো তোমার নামে বাংলাদেশে নিয়ে আসি। তুমি ব্যবসা করবা ওই টাকা দিয়ে।’
এই প্রলোভন দেখিয়ে নাজিরের কাছ থেকে বিভিন্ন তারিখে ট্যাক্স, ভ্যাট, ডিএইচএল বিল ইত্যাদির খরচের কথা বলে এক কোটি ৭৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে ফোন বন্ধ করে দেন।
সিআইডি কর্মকর্তা জিসান জানান, নাজির এই বিষয়ে সিআইডির কাছে অভিযোগ জানানোর পর তদন্ত শুরু হয়। এক পর্যায়ে দেখা যায়, সাদিয়া এভাবে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে অনেককে কানাডা নেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে মোবাইলে যোগাযোগ এবং দেখা করেছেন। এভাবে ২৫-৩০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।
সাদিয়া গত ১৭ সেপ্টেম্বর এমন আরেক জনের কাছ থেকে টাকা নেয়ার জন্য দেখা করতে চাইলে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
এ সময় তার কাছ থেকে তিন জন ভুক্তভোগীর পাসপোর্ট, ১০টি মোবাইল ফোন, তিনটি মেমোরি কার্ড, সাতটি সিল, অসংখ্য ব্যবহৃত সিম কার্ড ও হিসাবের খাতা এবং ২ সেপ্টেম্বর ব্যাংক এশিয়ায় ৪৮ লাখ টাকা জমার স্লিপ উদ্ধার করা হয়।
সাদিয়া ১০ বছর ধরে এভাবে অনেকের সঙ্গে প্রতারণ করে বিপুল টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে তার হিসাবের খাতা পর্যালোচনা করে।
চক্রের সদস্যদের ঢাকাসহ ঢাকার আশপাশে প্রায় ২০ কোটি টাকার জমিসহ সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে বলেও জানান সিআইডির সিনিয়র এএসপি জিসান।