বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

যেভাবে গ্রামীণফোন গ্রাহকের তথ্য প্রতারকের হাতে

  •    
  • ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০ ২০:২৩

‘প্রতিটি নম্বরের তথ্যের জন্য রুবেল দুই হাজার টাকা নিতেন। তার দেয়া তথ্যে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলতেন চক্রের নারী সদস্য পারভিন আক্তার নুপুর। এরপরই শুরু করতেন টাকা আদায়ের জন্য ব্ল্যাকমেইলিং।’

নিয়ম ভেঙে গ্রামীণফোন গ্রাহকের তথ্য প্রতারকচক্রের হাতে তুলে দেয়ার প্রক্রিয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ।

মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় মামলা করা হয়। বিকেলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার মো. হারুন অর রশীদ নিজ কার্যলয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে আটকদের দেয়া জবানবন্দি উদ্ধৃত করে কীভাবে তথ্য প্রতারকচক্রের হাতে তুলে দেয়া হতো- তা জানান তিনি।

হারুন অর রশীদ বলেন, 'বেশ কিছুদিন ধরে একটি প্রতারকচক্র বয়স্ক ও শিল্পপতিদের লক্ষ্য করে প্রতারণা করে আসছিল। একজন ভুক্তভোগীর অভিযোগ ধরে অনুসন্ধানে চক্রের তিন সদস্যকে আটক করা হয়। তাদের তথ্যে আটক করা হয় গ্রামীণফোনের কাস্টমার কেয়ার ম্যানেজার রুবেল মাহমুদ অনিককে। তিনিই গ্রাহকদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সেই চক্রকে সরবরাহ করতেন।

‘প্রতিটি নম্বরের তথ্যের জন্য রুবেল দুই হাজার টাকা নিতেন। তার দেয়া তথ্যে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলতেন চক্রের নারী সদস্য পারভিন আক্তার নুপুর। এরপরই শুরু করতেন টাকা আদায়ের জন্য ব্ল্যাকমেইলিং।’

প্রতারণার অভিযোগে ৩ ডিসেম্বর হাতিরঝিল থানায় একটি মামলা হয়। সেই মামলার অনুসন্ধানে সেই প্রতারকচক্রের পরিচয় সামনে আসে। পরে তাদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এক দিনের হেফাজতে নেয় পুলিশ। রিমান্ড শেষে আদালতে আসামি রুবেল ও পারভীন আক্তার নুপুর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

প্রতারক চক্রের এক সদস্য বাবু

সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ বলেন, ‘এই দায় গ্রামীণফোন এড়াতে পারে না। এখানে বিটিআরসির নিয়ম লঙ্ঘন করে গ্রাহকদের তথ্য পাচার করে প্রতিষ্ঠানটির কর্মী অনৈতিক কাজ করে আসছিল। এখানে প্রতিষ্ঠানটির গাফিলতি সুস্পষ্ট।

‘তাদের জবাবদিহীর আওতায় আনতে আমরা মামলা করেছি। প্রতিষ্ঠানটির কাছে গ্রাহকদের তথ্য নিরাপদ নয়, তাই এদের সাজার ব্যবস্থা করা হবে।’

গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে হাতিরঝিল থানায় মামলাটি হয়েছে টেলিযোগাযোগ আইনে, আসামি করা হয়েছে গ্রামীণফোন, কাস্টমার কেয়ার ম্যানেজার রুবেল মাহমুদ অনিক ও পারভীন আক্তার নুপুরকে।

হাতিরঝিল থানায় ৩ ডিসেম্বর করা প্রতারণার মামলায় শেফালী বেগম, বাবু, পারভীন আক্তার নুপুরকে বিভিন্ন সময় গ্রেফতার করা হয়। ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে ৪ ডিসেম্বর ওই তিন আসামিকে আদালতে পাঠালে ৬ ডিসেম্বর পারভীন আক্তার নুপুরকে এক দিনের রিমান্ড দেয় আদালত।

ডিসি হারুন জানান, ৬ ডিসেম্বর রাতে নুপুরের নিকেতনের বাসায় অভিযান চালিয়ে দুটি মোবাইল, দুটি পাসপোর্ট ও একটি ভাঁজ করা সাদা কাগজ উদ্ধার করা হয়। সেই কাগজে গ্রামীণফোন কাস্টমার ম্যানেজার রুবেলের হাতে লেখা ছয়টি মোবাইল নম্বর, জন্ম তারিখ ও জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর লেখা ছিল।

তিনি জানান, মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে টাকা আদায়ের জন্য নুপুর এই ছয়টি মোবাইল নম্বর ব্যবহারকারী ব্যক্তির মোবাইল সিম নিবন্ধনে ব্যবহৃত ব্যক্তিগত তথ্য (নাম, পিতার নাম, ঠিকানা, জন্মতারিখ, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর) সংগ্রহ করেছিল রুবেলের কাছ থেকে। সেই ছয় নম্বরের তথ্য পেতে রুবেলের সঙ্গে ১০ হাজার টাকায় চুক্তি করেন নুপুর।

প্রতারকচক্রের প্রধান নুপুরের বড় বোন শেফালী বেগম

৬ ডিসেম্বর রাতে বাড্ডা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় রুবেলকে। তিনি নুপুরকে এসব তথ্য টাকার বিনিময়ে দেয়ার কথা স্বীকার করেন। একই সঙ্গে আগেও তিনি এভাবে তথ্য দিয়েছেন বলে জানান।

৭ ডিসেম্বর নুপুর ও রুবেলকে আসামি করে হাতিরঝিল থানায় আরেকটি মামলা হয় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে।

সংবাদ সম্মেলনে ডিসি হারুন জানান, প্রতারকচক্রের প্রধান ২৮ বছর বয়সী নুপুর। তার বড় বোন শেফালী, মতিঝিলের পারফেক্ট ট্রাভেল এজেন্সির কর্মচারী শামসুদ্দোহা খান ওরফে বাবু এবং গ্রামীণফোনের কাস্টমার সার্ভিস ম্যানেজার রুবেল। এ ছাড়া একজন নামসর্বস্ব আইনজীবীকে সহযোগিতায় প্রতারণাচক্রটি গড়েন নুপুর। নুপুর ও শেফালী ২০-২৫ জনকে ব্ল্যাকমেইল করার কথা স্বীকার করেছেন।

প্রতারণার শিকারদের মধ্যে আছেন চিকিৎসক, প্রকৌশলী, রাজনীতিবিদ, অবসরপ্রাপ্ত সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি। পাশাপাশি সিএনজি অটোরিকশা চালক, দর্জি, ফলমূল বিক্রেতার মতো পেশার লোকজনও আছেন।

টার্গেট করা ব্যক্তিদের সঙ্গে পরিচয়ের পর আলাপচারিতার রেকর্ড ওই ব্যক্তির স্ত্রী, সন্তান, পরিচিতজন ও অফিস কলিগদের কাছে পাঠিয়ে দেয়ার হুমকি দিতেন নুপুর। নুপুরের সঙ্গে ওই ব্যক্তির প্রেম বা বৈবাহিক সম্পর্ক রয়েছে, এমন দাবি পরিবারের কাছে করা হবে বলে সেসব ব্যক্তিদের হুমকি দেয়া হতো।

কে কী করতেন

বাবু মতিঝিলের পারফেক্ট ট্রাভেল এজেন্সিতে কাজের সুবাদে নিয়মিত বিদেশগামী ধনাঢ্য ব্যক্তিদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহের পাশাপাশি শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, পদস্থ চাকরিজীবীদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে নুপুরকে দিতেন। পারভীন নিজেকে কখনো সমাজকর্মী হিসেবে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য তহবিল সংগ্রহে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানাতে, কখনো চাকরি প্রার্থী বা সাংবাদিক পরিচয়ে সেসব ব্যক্তির সঙ্গে সরাসরি দেখা করতেন।

নানা অজুহাতে মোবাইলে কথা বলতেন, ব্যক্তিবিশেষে যা ৩-৪ মাস পর্যন্ত গড়াতো। এর মধ্যেই পরিকল্পনামাফিক স্পর্শকাতর বা গোপন ইঙ্গিতপূর্ণ আলাপ করে রেকর্ড করে রাখতেন।

যেভাবে ফাঁদ

টার্গেট ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্ককে বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য নুপুর তার পরিচিত দোকান বা শোরুম থেকে তার বাসায় থাকা ফার্নিচার, জিনিসপত্রের মিথ্যা বিল-ভাউচার তৈরি করতেন। যে ভাউচারে ক্রেতা হিসেবে টার্গেট ব্যক্তির নাম স্বামীর নামের জায়গায় বসাতেন। এমনকি তারা কোনো হাসপাতালের চিকিৎসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এমন ভুয়া প্রেসক্রিপশন তৈরি করে সেখানেও স্বামী হিসেবে টার্গেট করা ব্যক্তির নাম দিতেন।

পরে তাদের সামাজিকভাবে অপদস্ত করার হুমকি দিয়ে পাঁচ থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত দাবি করা হতো। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে পারভীনের বড় বোন শেফালী বেগম দৃশ্যপটে হাজির হয়ে ফোন করে মামলার হুমকি দিতেন। এমনকি নারী নির্যাতন মামলা করার জন্যও ভুয়া আইনজীবী হিসেবে ইসা নামের একজন ফোন করতেন বলেও জানান ডিসি হারুন।

এভাবে কয়েকজন মিলে এই চক্রটি তৈরি করে লাখ লাখ টাকার প্রতারণা করেছেন বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন বলে জানান ডিএমপির ওই কর্মকর্তা।

এ বিভাগের আরো খবর