দেশের বৃহত্তম পদ্মা সেতু এখন বাস্তবতা। গত বৃহস্পতিবার শেষ স্প্যান বসানোর মধ্যে দিয়ে পুরোপুরি দৃশ্যমান হয়েছে সেতুটি। সংযুক্ত হয়েছে পদ্মার দুই পার।
আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে সেতুতে যান চলাচল শুরু হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। সেই আশায় বুক বেঁধে নতুন স্বপ্ন দেখা শুরু করেছেন দক্ষিণাঞ্চলের জেলা বরিশালের বাসমালিকরা।
পদ্মা সেতু চালুর পরপরই বরিশাল-ঢাকা রুটে বিলাসবহুল গাড়ি চালানোর পরিকল্পনা করেছেন তারা। ভাবছেন বিলাসবহুল গাড়ি কেনার কথা। এরই মধ্যে অনেকে নিয়েছেন প্রস্তুতিও।
ফেরিতে পারাপারের কারণে বরিশালের কোনো বাসমালিকই এতদিন ঢাকা-বরিশাল রুটে বাস চালাতে আগ্রহী ছিলেন না। সময় বেশি লাগায় যাত্রী কম, ফেরি পারাপারে গাড়ির মান ধরে রাখতে সমস্যাসহ নানা কারণেই তারা অনাগ্রহী ছিলেন। সেতু চালু হলে তারা এই রুটে বাসের ব্যবসায় ফিরতে চান। সেই সঙ্গে যাত্রীসেবায় অনন্য নজির স্থাপন করতে চান। সে কারণেই নানা পরিকল্পনা তাদের।
বাসমালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে বরিশাল থেকে ঢাকা রুটে সাকুরা পরিবহন, হানিফ, গ্রিন লাইন ও গোল্ডেন লাইনসহ কয়েকটি কোম্পানির বাস চলছে। এই সংখ্যা অর্ধশতাধিক।
অন্যদিকে বরিশাল-মাওয়া রুটে চলছে ৩০টি বাস। পদ্মা সেতু চালু হলে মাওয়া পর্যন্ত চলা বাস সরাসরি ঢাকায় যাবে বলে জানিয়েছেন বাসচালকরা।
বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের নিয়ন্ত্রণাধীন কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নথুল্লাবাদের স্ট্যান্ড সেক্রেটারি ও ঝিনুক পরিবহনের মালিক অমল চন্দ্র দাস জানান, বর্তমান সরকারের বড় ধরনের সাফল্য পদ্মা সেতু। সেতু চালু হলে পরিবহন খাতে আমূল পরিবর্তন আসবে। তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টার মধ্যে যখন সড়কপথে বাসে করে বরিশাল-ঢাকা ও ঢাকা-বরিশালে যাতায়াত সম্ভব হবে, তখন সাধারণ মানুষ এমনিতেই বাসে যেতে আগ্রহী হবেন। এমন হলে যাত্রীসেবার মান উন্নয়ন করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা অলরেডি প্রস্তুতি নিয়েছি। যাত্রী সেবার মান অক্ষুণ্ন রাখতে ভালো মানের বাসের বিকল্প নেই। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মালিকরাও ভালো মানের বাস ঢাকা-বরিশাল রুটের জন্য কিনবে।’
আরেক বাসমালিক বলেন, ‘ঢাকা-বরিশাল রুটে যেসব বাস চলে সেগুলোর মান একেবারেই খারাপ। অন্য রুটে চলাচলের পর পুরাতন হলে এই রুটে দেয়। ফেরির কারণেই এমনটা হয়। পদ্মা সেতু হলে এমন পুরাতন বাস বদলে নতুন বাস আনতে বাধ্য হবেন মালিকরা।’
বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দে বলেন, ‘আগে ফেরির সমস্যা ছিল। বরিশাল থেকে ঢাকা যেতে সময় লাগত অনেক, যা নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। ফেরির ওপর নির্ভর করে যাতায়াত করতে হতো যাত্রীবাহী পরিবহনগুলোকে।
‘পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এই সমস্যা আর থাকবে না। তখন সাড়ে তিন ঘণ্টার মধ্যেই বরিশাল থেকে ঢাকায় যাওয়া যাবে। সে কারণে পরিবহন মালিকরাও বেশ নড়েচড়ে বসেছেন। এই রুটে বিলাসবহুল নতুন বাস কেনার প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা নিয়েছেন বরিশালের মালিকরা।’