করোনা মহামারির কারণে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ বন্ধ ছিল দীর্ঘ আট মাস। করোনার কারণে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসের আনুষ্ঠানিকতাও সরকারিভাবে স্থগিত করা হয়। তবে ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্মৃতিসৌধে জাতির বীর সন্তানদের শ্রদ্ধা জানানোর আয়োজন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে গণপূর্ত অধিদপ্তর।
গণপূর্ত অধিদপ্তর জানায়, করোনার কারণে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী এবার শ্রদ্ধা জানাতে আসছেন না। তবে তাদের পক্ষে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাবেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিবরা। তাই গত প্রায় ১৫ দিন ধরে ধুয়েমুছে ও বাহারি ফুল দিয়ে সাজিয়ে প্রস্তুত করে তোলা হয়েছে সৌধ প্রাঙ্গণ।
লাল-ইটের হেরিংবন্ডে এরই মধ্যে লেগেছে সাদা রঙের ছোঁয়া। বিভিন্ন স্থানে লাল টকটকে ফুলের টবে শোভা পাচ্ছে বাহারি ফুল গাছ। আগেভাগেই ছেঁটে দৃষ্টিনন্দন করে তোলা হয়েছে গাছপালা। সৌধ বেদির সামনের অংশে গাছ দিয়ে বানানো হয়েছে জাতীয় পতাকা। লেকের পানিতে নতুন করে রোপন করা হয়েছে লাল শাপলা। এ ছাড়া জাতির বীর সন্তানদের শ্রদ্ধা জানাতে ইতিমধ্যেই সশস্ত্র তিন বাহিনীর চৌকস দল তাদের কুচকাওয়াজের অনুশীলন শেষ করেছেন।
জাতীয় স্মৃতিসৌধের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে নিয়োজিতরা জানান, প্রতি বছর মহান স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে তারা স্মৃতিসৌধ ধুয়েমুছে পরিষ্কার করেন। কিন্তু ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে করোনার কারণে কোনো অনুষ্ঠান হয়নি। ওই সময় তাদের কোনো কাজ ছিল না। কিন্তু ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে গত ১৫ দিন ধরে ২০-২৫ জন মিলে তারা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করছেন। যদিও অন্যান্য বছর এক মাস আগে থেকেই প্রায় শতাধিক লোক এই কাজ করে থাকেন।
এ জন্য ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকেই সৌধ ও এর আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে ঢাকা জেলা পুলিশ। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সিসি ক্যামেরার পাশাপাশি বসানো হয়েছে অস্থায়ী ওয়াচ টাওয়ার।
নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় ঢাকা জেলা পুলিশ নিরাপত্তা দিয়ে থাকে। এটা আমাদের জন্য গর্ব ও অহংকারের বিষয়। আমরা চেষ্টা করি নিজেদের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে এই নিরাপত্তাকে জোরদার করা। প্রতি বছর যেভাবে নিরাপত্তা দিয়ে থাকি এ বছরও আমরা সেই রকম নিরাপত্তা দেব।
‘আমাদের সাদা পোশাকে ও ইউনিফর্মে পুলিশ থাকবে, সিসি ক্যামেরাও থাকবে। অনুষ্ঠান শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এই ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।‘
পুলিশ সুপার আরো বলেন, ‘এবার করোনাভাইরাসের কারণে সারা পৃথিবী পর্যুদস্ত। এ জন্য আমরা প্রত্যাশা করি যে স্মৃতিসৌধে যারা আসবেন তারা সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে আসবেন। তাই সবাইকে মাস্ক পরে আসার বিনীত অনুরোধ করছি। কারণ আমরা চাই না এখানে আসার কারণে কেউ করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হোক। এ বছর স্মৃতিসৌধে পুলিশ সদস্যরাও স্বাস্থ্যবিধি মেনে দায়িত্ব পালন করবেন।’
গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী শামীম আকতার নিউজবাংলাকে জানান, ১৬ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সামরিক সচিবরা প্রথমে ফুল দেবেন। এরপর স্পিকার,মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ, কূটনৈতিক, রাজনৈতিক ও সরকারি কর্মকর্তারা ফুল দেবেন। এরপর সাধারণ মানুষের জন্য স্মৃতিসৌধ উন্মুক্ত করে দেয়া হবে।