বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বুদ্ধিজীবী হত্যা: আশরাফ, মুঈনুদ্দীন কোথায়

  •    
  • ১৪ ডিসেম্বর, ২০২০ ০১:৩১

বুদ্ধিজীবী হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২০১৩ সালে ৩ নভেম্বর দুই আলবদর নেতাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের রায় দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তবে দেশের বাইরে থাকায় সে রায় এখনো বাস্তবায়ন করা যায়নি।

একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মুঈনুদ্দীনকে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সরকারের অসহযোগিতায় দেশে ফিরিয়ে আনা যাচ্ছে না।

সরকারের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী, আলবদর নেতা চৌধুরী মুঈনুদ্দীন আছেন যুক্তরাজ্যের লন্ডনে আর আশরাফুজ্জামান খান অবস্থান করছেন যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়াতে। এই দুই দেশের নাগরিকত্ব থাকায় তারা সেখানে আছেন বহাল তবিয়তে, নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্থানীয় মুসলিম সংগঠনের।

১৯৭১ সালে বিজয়ের প্রাক্কালে বুদ্ধিজীবীদের হত্যার নীল নকশা করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী, যেটি বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দেয় তৎকালীন কুখ্যাত আলবদর বাহিনী। আলবদরের শীর্ষ নেতা ছিলেন আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মুঈনুদ্দীন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নয় জন শিক্ষক, ছয় জন সাংবাদিক ও তিনজন চিকিৎসকসহ অন্তত ১৮ বুদ্ধিজীবীকে অপহরণের পর হত্যা করেন এই দুজন।

বুদ্ধিজীবী হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২০১৩ সালে ৩ নভেম্বর দুই আলবদর নেতাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের রায় দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তবে দেশের বাইরে থাকায় সে রায় এখনো বাস্তবায়ন করা যায়নি।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রানা দাস গুপ্ত নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ দুই আসামির বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের চূড়ান্ত রায় হয়ে গেছে। তারা বিদেশে পালিয়ে থাকায় এখন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে তাদের দেশে ফেরাতে হবে। আইন মন্ত্রণালয় আইনের দিকটি দেখবে অর্থাৎ আপিলে বিলম্ব মওকুফের আবেদন এই দুজন করতে পারবে কিনা।’

পলাতক দুই খুনিকে ফিরিয়ে আনতে কী করা হচ্ছে জানতে চাইলে পুলিশ সদরদপ্তরের গণমাধ্যম শাখার এআইজি সোহেল রানা নিউজবাংলাকে জানান, ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাদের ফেরত আনার প্রক্রিয়া চলমান।

‘অনেক আগেই তাদের ফেরাতে ইন্টারপোলের সাহায্য চাওয়া হয়েছে। ইন্টারপোল রেড নোটিশও জারি করেছিল। এরপরের দায়িত্ব বর্তায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে উপর। তারা বিনিময় চুক্তির মাধ্যমে দুজনকে ফেরত আনার প্রক্রিয়া চালাবে।’

আশরাফুজ্জামান ও মুঈনুদ্দীনকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সব পলাতক খুনিকে বিচারের মুখোমুখি করতে চাই, এটা আমাদের স্ট্যান্ডিং পলিসি। কিন্তু এরা যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে পালিয়ে সে দেশের নাগরিকত্ব নিয়েছে, আর এ কারণে সে দেশগুলো তাদের ফেরত পাঠাচ্ছে না।

‘উন্নত দেশ যারা রুল অব ল এর কথা বলে, তারাই এটা মানছে না। তারাই আইনের শাসনে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। খুনিদের ফেরত পাঠাতে টালবাহানা করছে। এটা খুব দুঃখজনক। আমরা আমাদের মতো করে চেষ্টা করছি যেন তাদের ফেরত আনা যায়।’

দুই যুদ্ধাপরাধীর সবশেষ অবস্থান সম্বন্ধে কী তথ্য আছে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘চৌধুরী মুঈনুদ্দীন এখন অবস্থান করছেন লন্ডনে। তিনি সেখানে বিভিন্ন ইসলামি সংগঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

‘আর আশরাফুজ্জামান খানের অবস্থান কিছুদিন আগেও ছিল নিউইয়র্কে। সে সেখানে একটি মসজিদ কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্রে ইকনা নামে মুসলিমদের একটি সংগঠন আছে, আশরাফ কোনো একভাবে সেই সংগঠনেরও প্রেসিডেন্ট হয়ে যান।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, ‘প্রবাসী বাংলাদেশিরা আফরাফের পরিচয় জানার পর প্রায়ই তার বাসার সামনে বিক্ষোভ করত। পরে ইকনা থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর সে প্রবাসীদের ক্ষোভ থেকে বাঁচতে চলে যায় পেনসিলভানিয়াতে।’

আফরাফুজ্জামান এখন পেনসিলভানিয়াতেই আছেন বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।

তিনি বলেন, ‘তবে সে (আফরাফুজ্জামান) পেনসিলভানিয়ায় কোথায় আছে সে সংক্রান্ত কোনো তথ্য আমরা পাচ্ছি না। আমরা চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি, কোনো এক সময় হয়ত এদের দেশে ফিরিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা যাবে।’

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে বুদ্ধিজীবী হত্যায় আশরাফুজ্জামান খানকে ‘চিফ এক্সিকিউটর’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। আর চৌধুরী মুঈনুদ্দীনকে বলা হয়েছে পরিকল্পনার ‘অপারেশন ইনচার্জ’।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আশরাফুজ্জামানের নাখালপাড়ার বাসা থেকে উদ্ধার করা তার ব্যক্তিগত দিনপঞ্জিতে এই হত্যার পরিকল্পনা ও একটি তালিকা পাওয়ার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে আদালতের রায়ে।

এই দুই আল বদর নেতা ও তাদের সহযোগীদের হাতে শহিদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও নাট্যকার মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, ড. সিরাজুল হক খান, ড. আবুল খায়ের, ড. ফয়জুল মহিউদ্দিন, অধ্যাপক রাশিদুল হাসান, অধ্যাপক আনোয়ার পাশা ও ড. সন্তোষ ভট্টাচার্য।

সাংবাদিক সিরাজ উদ্দিন হোসেন, সৈয়দ নাজমুল হক, এএনএম গোলাম মুস্তাফা, নাজিম উদ্দিন আহমেদ, সেলিনা পারভীন, শহীদুল্লাহ কায়সার এবং চিকিৎসক মো. মর্তুজা, মো. ফজলে রাব্বি ও আলিম চৌধুরীকেও হত্যার পর গুম করেন তারা।

আশরাফুজ্জামান খান ১৯৪৮ সালে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের চিলেরপাড় গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৭ সালে সিদ্ধেশ্বরী ডিগ্রি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাসের পর তিনি ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামি স্টাডিজ বিভাগে। ওই বিভাগ থেকেই ১৯৭০ সালে স্নাতক ডিগ্রি পান সে সময়ের ইসলামি ছাত্র সংঘের কেন্দ্রীয় নেতা আশরাফুজ্জামান।

মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকায় আল বদর বাহিনীর নেতৃত্ব দেন আশরাফুজ্জামান। বুদ্ধিজীবী হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী এবং বাস্তবায়নকারী নেতা হিসাবেও তাকে অভিযুক্ত করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

দেশ স্বাধীনের পর তিনি পালিয়ে পাকিস্তানে চলে যান। সেখানে কিছুদিন রেডিও পাকিস্তানে কাজ করার পর চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে।

চৌধুরী মুঈনুদ্দীন ১৯৪৮ সালের নভেম্বরে ফেনীর দাগনভূঞা থানার চানপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

১৯৭১ সালে মুঈনুদ্দীন ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী। দৈনিক পূর্বদেশের নিজস্ব প্রতিবেদক হিসাবেও তিনি কাজ করেছেন।

বুদ্ধিজীবী হত্যায় সরাসরি নেতৃত্ব দেয়া মুঈনুদ্দীন দেশ স্বাধীনের পর পাকিস্তান হয়ে যুক্তরাজ্যে চলে যান।

এ বিভাগের আরো খবর