বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

প্রদীপের মাদক কারবার জেনে ফেলায় সিনহা হত্যা: র‌্যাব

  •    
  • ১৩ ডিসেম্বর, ২০২০ ১৬:০৯

গত ৭ জুলাই টেকনাফ থানায় ওসি প্রদীপের সাক্ষাৎকার নিতে যান মেজর সিনহা। তখন তাকে কক্সবাজার ছাড়তে হুমকি দেয়া হয়। হুমকি উপেক্ষা করে সিনহা তার কাজ চালিয়ে গেলে, তাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়।

টেকনাফ থানার বরখাস্ত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার দাশের পরিকল্পনায় অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদকে হত্যার কথা জানিয়েছে র‌্যাব

চার মাস ১০ দিন তদন্ত শেষে সংস্থাটি জানিয়েছে, মেজর সিনহা ভ্রমণ বিষয়ে ভিডিও তৈরির জন্য কক্সবাজার গেলেও সেখানে গিয়ে মাদক পাচার বিষয়ে কাজ করেন। আর তখন এর সঙ্গে ওসি প্রদীপের সম্পৃক্ততার তথ্য পান। আর এ নিয়ে তিনি প্রদীপের সাক্ষাৎকার নিতে যান। তখনই প্রদীপ তাকে হুমকি দেন।

মামলাটি তদন্ত করেছেন র‌্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. খাইরুল ইসলাম। রোববার সকালে কক্সবাজার আদালতে ২৬ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেছেন তিনি। আসামি করা হয়েছে ১৫ জনকে, যাদের ১৪ জন কারাগারে।

বিকালে ঢাকার কারওয়ানবাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ। তিনি জানান তদন্তের বিস্তারিত।

র‌্যাবের মুখপাত্র জানান, গত ৭ জুলাই টেকনাফ থানায় ওসি প্রদীপের সাক্ষাৎকার নিতে যান মেজর সিনহা। তখন তাকে কক্সবাজার ছাড়তে হুমকি দেয়া হয়। হুমকি উপেক্ষা করে সিনহা তার কাজ চালিয়ে গেলে, তাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়।

মেজর সিনহা হত্যা মামলার প্রধান আসামি টেকনাফ থানার সে সময়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার দাশ

আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘প্রদীপ ভেবেছিল, হুমকি দিলে সিনহা কক্সবাজার ত্যাগ করবে। কিন্তু কক্সবাজার ত্যাগ না করায় হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। তদন্ত কর্মকর্তা তদন্তে এমনটিই পেয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘এ মামলার তদন্তের মূল বিষয় হচ্ছে এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।… প্রদীপের স্বেচ্ছাচারিতা ও ইয়াবা বাণিজ্যের বিষয়টি সিনহা জেনে যাওয়ায় এই ঘটনা।’

আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘ওসি প্রদীপ তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে সাধারণদের উপর নির্যাতন করতেন। সরকারি অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার করে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করতেন। ইয়াবা ও মাদকের বাণিজ্যের সঙ্গে প্রদীপের সরাসরি সম্পৃক্ততা ছিল, ছিলেন মাদক কারবারীদের প্রশ্রয়দাতা।’

র‌্যাবের মুখপাত্র বলেন, ‘সিনহার কাছে ওসি প্রদীপ ও এস আই লিয়াকত আলীর অনেক অপকর্মের তথ্য প্রমাণ ছিল।’

গত ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশ কর্মকর্তা লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান।

কক্সবাজার আদালতে মেজর সিনহা হত্যা মামলার আসামি পুলিশ সদস্যরা

শুরুতে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, সিনহা তল্লাশি চৌকিতে বাধা দেন। আর তিনি পিস্তল বের করলে চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ তাকে গুলি করে।

তবে পুলিশের বক্তব্য নিয়ে সে সময় প্রশ্ন উঠে। আর সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস মামলা করেন নয় জনের বিরুদ্ধে।

মামলায় প্রধান আসামি করা হয় বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে। ওসি (বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার দাশকে করা হয় দুই নম্বর আসামি। মামলার তিন নম্বর আসামি করা হয় টেকনাফ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিতকে।

এরপর অভিযুক্ত সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে তদন্তে নেমে র‌্যাব স্থানীয় তিনজন, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্য এবং প্রদীপের দেহরক্ষীসহ মোট ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করে।

সে সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি দল তদন্ত করে। যদিও সে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি।

বিষয়টি নিয়ে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের ফোরাম রাওয়া উচ্চকিত হয়। আর তদন্তের ভার দেয়া হয় র‌্যাবকে।

এই ঘটনায় সে সময় কক্সবাজারের পুরো পুলিশ প্রশাসনকে পাল্টে দেয়া হয়।

কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো রাশেদ

র‌্যাব তদন্তের দায়িত্ব পেয়ে ওসি প্রদীপ, ইনস্পেক্টর লিয়াকতসহ ১৪ জনকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়। আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন ১২ জন। তবে ওসি প্রদীপ ও কনস্টেবল রবিন শর্মা জবানবন্দি দেননি। আর একজন আসামি পলাতক।

র‌্যাবের মুখপাত্র বলেন, ‘ঘটনার সাক্ষী, আলামত, আসামিদের জবানবন্দির মাধ্যমে বস্তুনিষ্ঠভাবে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নিশ্চিত হয়েছেন যে, এই পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের পর টেকনাফ থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার দাস হত্যাকাণ্ডকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য এবং ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছেন।

‘প্রদীপ কুমার দাসের প্রত্যক্ষ ষড়যন্ত্রে অংশগ্রহণ করেন অপর আসামি এসআই লিয়াকত আলী, মো. নুরুল আমিন, পুলিশের সোর্স মুহাম্মদ আয়াজ ও মোহাম্মদ নিজামউদ্দিন।

‘আবার লিয়াকত আলীকে সহযোগিতা করেন আরেক পুলিশ সদস্য নন্দ দুলাল। পাশাপাশি এপিবিএনর তিন সদস্যদের সহায়তায় এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। পরবর্তীতে ওই ফাঁড়ির আরও পুলিশ সদস্য সিনহার মৃত্যু নিশ্চিত করতে এবং ঘটনা প্রবাহের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সেই সঙ্গে বাহারছড়া ক্যাম্পের পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ বাকি আসামিদের নিয়ে মাদক উদ্ধারের নাটক সাজান ওসি প্রদীপ।’

সিনহার সঙ্গে কক্সবাজারে ভিডিও ধারণে কক্সবাজারে যাওয়া শফিকুল ইসলাম সিফাত ও শীপ্রা দেবনাথ

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সিনহাকে গুলি করার পর তার মৃত্যু নিশ্চিত করতেই হাসপাতালে নিতে সময়ক্ষেপণ করা হয়। পরে লোক দেখাতে হাসপাতালে নেয়া হয়।

আশিক বিল্লাহ জানান, অভিযোগপত্রে যাদের আসামি করা হয়েছে, তাদের মধ্যে ৯ জন টেকনাফ থানার বরখাস্ত পুলিশ, তিন জন এপিবিএন বরখাস্ত সদস্য ও তিন জন পুলিশের সোর্স। এদের ১৪ জনই হাজতে আছেন। একমাত্র পলাতক আসামি কনস্টেবল সাগর দেব।

সিফাত ও শীপ্রার বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ মেলেনি।

দেশ জুড়ে আলোচিত এই ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকেও মেজর সিনহার সঙ্গে থাকা শফিকুল ইসলাম সিফাত ও শীপ্রা দেবনাথের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।

সিফাত ছিলেন মেজর সিনহার গাড়িতে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় সরকারি কাজে বাধা দেয়ার।

শিপ্রা ছিলেন রামুর নিলীমা রিসোর্টে। তাকে আটক করে মাদক উদ্ধারের কথা জানায় পুলিশ। মামলা হয় রামু থানায়।

তবে এই দুই মামলার কোনোটির প্রমাণ পায়নি র‌্যাব। দুই জনকেই অব্যাহতি দেয়ার আবেদন করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা।

সিনহাকে হত্যার পর তাদের মোবাইল ফোন, ক্যামেরা, ল্যাপটপসহ যা যা পুলিশ জব্দ করেছিল, সেগুলো র‌্যাবের হাতে যাওয়ার পর তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। আশিক বিল্লাহ বলেন, তার ধারণা, ডিজিটাল কনটেন্ট যা ছিল, তা আগেই ধ্বংস করা হয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর