বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘জননী’র সঙ্গে বিশৃঙ্খলা কেন, হেফাজতকে প্রশ্ন

  •    
  • ১৩ ডিসেম্বর, ২০২০ ১৪:৩৫

সরকার কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ সনদ দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমান দেয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা দিয়ে কওমি জননী উপাধি দেয়া হয়। সেই কথার উল্লেখ করে ‘হক্কানী আলেম সমাজ’ বলেছে, ‘জননীর সঙ্গে সন্তানের হবে মধুর সম্পর্ক। আর একজন সন্তান তো তার জননীর বিরুদ্ধে কথা বলতে পারে না। আজ আপনারা যে ভাবে কথা বলছেন সেটা কি ঠিক? আপনি কেন এই ভাস্কর্য ইস্যুতে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাইছেন?’

কওমি সনদের স্বীকৃতি পেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘কওমি জননী’ উপাধি নিয়ে এখন কেন ভাস্কর্য ইস্যুতে বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন একজন আলেম।

রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘হক্কানী আলেম সমাজ’ ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনে এই প্রশ্ন তোলা হয়।

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করে হেফাজতে ইসলাম হুমকি দিয়েছিল এটি নির্মাণ হলে টেনেহিঁচড়ে ফেলে দেবে তারা। তবে সরকার সমর্থকরা মাঠে নামার পর সুর নরম হয়েছে কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক সংগঠনটির।

হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে উদ্দেশ করে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন গাজীপুর কাশিমপুর মাদ্রাসার সিনিয়র প্রিন্সিপাল মাওলানা আবদুল হাকিম চৌধুরী।

মামুনুল হুমকি দিয়েছিলেন, ধোলাইপাড়ে ভাস্কর্য বসালে আরেকটি শাপলা চত্বর তৈরি করবেন তিনি। যদিও ছাত্র ও যুবলীগের প্রতিরোধের কারণে চট্টগ্রামে একটি মাহফিলে যোগ দিতে না পেরে পরে তিনি বলেছেন, সরকারের সঙ্গে ‘যুদ্ধে’ যাবেন না তিনি।

মাওলানা হাকিম বলেন, ‘আমি মামুনুল হককে বলছি, আপনার বাবা তো অনেক বিখ্যাত ছিলেন। আমরা তাকে সঙ্গে নিয়ে এই কওমি মাদ্রাসাকে স্বীকৃতির জন্য আন্দোলন করেছি। অনশন করেছি। কিন্তু তখন তো কেউ আমাদের অনশন ভাঙতে আসেনি। কিন্তু শেখ হাসিনার কাছে তো কোনো আন্দোলন করা লাগেনি। তিনি এমনি থেকেই দিয়ে দিয়েছেন। তিনি মূল্যায়ন দিলেন। এই জন্য তাকে আমরা কওমি জননী বলি।

‘জননীর সঙ্গে সন্তানের হবে মধুর সম্পর্ক। আর একজন সন্তান তো তার জননীর বিরুদ্ধে কথা বলতে পারে না। আজ আপনারা যে ভাবে কথা বলছেন সেটা কি ঠিক? আপনি কেন এই ভাস্কর্য ইস্যুতে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাইছেন?’

‘হেফাজতকে কেউ ইসলামের দায়িত্ব নিতে বলেনি’

ভাস্কর্য নিয়ে দেশে চলমান অস্থিরতার জন্য হেফাজত ইসলামকে দায়ী করা হয় সংবাদ সম্মেলনে। এতে বলা হয় ভাস্কর্য নিয়ে হেফাজতের বক্তব্যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে। তারা অস্থিরতা তৈরি করতে চায়।

মাওলানা হাকিম বলেন, ‘আমি বলব না ভাস্কর্য জায়েজ। তবে আপনি যদি বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে থাকেন তবে ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা পাবেন। হেফাজত ইসলাম ভাস্কর্য নিয়ে যে বিভ্রান্তি তৈরি করছে তা কখনই কাম্য না। তাদের হাতে তো ইসলামের দায়িত্ব দেয়া যাবে না।

‘আপনাদের বাড়িতে মা-বাবার ছবি থাকে, খেলার পুতুল থাকে সেটাও কিন্তু ভাস্কর্য।…কিছু কিছু জিনিস আমাদের সংস্কৃতির অংশ। তার সঙ্গে ধর্মকে মেলানো ঠিক না। কিন্তু হেফাজত ইসলাম যা করছে তা সঠিক নয়। তাদের কেউ তো ইসলামের দায়িত্ব নিতে বলেনি, রক্ষা করতে বলেনি।’

ধর্মের পাশাপাশি প্রত্যেক জাতির একটা নিজস্ব সংস্কৃতি থাকে উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘ভাস্কর্য মানুষের পুরনো শিল্পচর্চার মাধ্যম। ভাস্কর্যকে মূর্তি হিসেবে আখ্যা দেয়া সঠিক নয়। মূর্তি উপাসনার জন্য আর ভাস্কর্য শিল্প, সংস্কৃতি, ইতিহাসের অংশ।’

মাওলানা হাকিম বলেন, ‘ইসলামের জায়গা থেকে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) উদার সাম্প্রদায়িক নীতিতে আমরা ধর্ম পালন করব। ধর্ম নিয়ে আমরা জাতিসত্তাকে বাধাগ্রস্ত করব না। ধর্ম দিয়ে আমরা ফেতনা ফ্যাসাদ তৈরি করব না।’

তিনি বলেন, ‘আমরা দেশের আলেম সমাজ। আমরা চাই না সমাজে কোনো বিশৃঙ্খলা হোক। ইসলাম কোনো বিশৃঙ্খলা সমর্থন করে না।’

‘আল্লামা শফীকে কবরে পৌঁছে দেয়া হয়েছে’

হেফাজতে ইসলামের প্রয়াত আমির শাহ আহমেদ শফীর মৃত্যু স্বাভাবিক ছিল না বলেও অভিযোগ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।

মাওলানা হাকিম বলেন, ‘তাকে আজাব দিয়ে কবরে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। তাই আপনাদের হাতে তো আমরা ইসলামকে ছেড়ে দিতে পারি না। আমরা সতর্ক করে দিতে চাই যে গুটিকয়েক আলেম যারা কিছু মাদ্রাসার ছাত্র নিয়ে দেশে অস্থিরতা করতে চাইছেন আপনাদের কখনই ভালো হবে না।’

‘ভাস্কর্য তো জিয়ারও আছে’

আপত্তি কেবল বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে কেন- এই প্রশ্ন তুলেছেন মুফতি সোলায়মান বিন কাশেমী।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে বহু আগে থেকেই ভাস্কর্য আছে। জিয়ারও ভাস্কর্য আছে। কিন্তু কেউ তো কখনো ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার কথা বলেনি। হঠাৎ করে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে ফেলা বা বিরোধিতা করে কেউ কেউ সমাজে ফেতনা ফ্যাসাদ তৈরি করতে চাচ্ছে।’

ভাস্কর্যবিরোধীদের মুক্তিযুদ্ধকালীন ভূমিকা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যারা ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে এমন কথা বলে তারা মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের বিধর্মী ও কাফের বলেছিল।’

তিনি বলেন, ‘এক সময় মানুষের চাঁদে যাওয়া বিশ্বাস করতে ও টেলিভিশন দেখতে কেউ কেউ বাধা দিয়েছিল। ইংরেজি শিক্ষাকেও হারাম বলেছিল। এমনকি পবিত্র হজে যাওয়ার জন্য ছবি তোলাকেও হারাম বলেছিল, যা পরে ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে সঠিক বলে প্রতীয়মান হয়।’

ওলামা লীগের মহাসচিব মুফতি মাসুম বিল্লাহ, মাওলানা লোকমান সাইফী প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

এ বিভাগের আরো খবর