সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যের বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে যাচ্ছে বলে খবর ছড়ালেও এর সত্যতা পাওয়া যায়নি।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর ছড়িয়েছে, রোববার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সরকারের পক্ষ থেকে এই বৈঠক করতে যাচ্ছেন। যদিও মন্ত্রীর একান্ত সচিব জানিয়েছেন, এমন তথ্য সত্য নয়।
প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চেয়ে কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক দল ও সংগঠনের পক্ষ থেকে যারা চিঠি দিয়েছিলেন, তারাও বলছেন, জবাব আসেনি। আর করোনাকালে এই ধরনের কোনো বৈঠক সম্ভব না বলেও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা।
রাজধানীর ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণে কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক কয়েকটি দল ও সংগঠনের বিরোধিতা নিয়ে নিস্তরঙ্গ রাজনীতিতে কয়েক দিন ধরে উত্তাপ ছড়িয়েছে।
এর মধ্যে আবার কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন একটি ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়েছে, যা সরকারকে ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। শুরুতে সরকারপন্থিরা চুপচাপ থাকলেও চট্টগ্রামে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ মাঠে নামার পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়।
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ করা হলে হেনেহিঁচড়ে ফেলে দেয়ার হুমকি দেয়া হেফাজত নেতারা প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চেয়ে চিঠি দিয়েছেন
সরকারি দল সমর্থক বিভিন্ন সংগঠন ও আওয়ামী লীগের নেতারা মুখ খোলার পাশাপাশি শনিবার দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় সমাবেশ করে কঠোর বার্তা দিয়েছে প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
জাতির পিতার সম্মান অম্লান রাখার ঘোষণা দিয়ে এসব কর্মসূচিতে বলা হয়েছে, বঙ্গবন্ধুর বিরোধিতা করা সংবিধানের বিরোধিতা। এসব সহ্য করা হবে না।
সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক সরকারকে ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরের তাণ্ডবের ঘটনায় হেফাজতের বিরুদ্ধে করা ৮৩টি মামলা আবার সচল করার পরামর্শ দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ও এক ওয়েবিনারে স্পষ্ট করে বলেছেন, হেফাজতে ইসলামকে মোকাবিলা করবেন তারা।
জয় বলেন, ‘আজ তারা সাহস করেছে জাতির পিতার ভাস্কর্য ভাঙার। এটা কী? এটা আমাদের স্বাধীনতার চেতনায় হামলা। যারা এ দেশের চেতনার বিরুদ্ধে, তারাই এ হামলা করেছে।…তারা হুমকি দিচ্ছে এ দেশকে আফগানিস্তান বানাবে। আমরা সেটা কখনও হতে দেব না। আওয়ামী লীগ যতদিন ক্ষমতায় আছে এটা হতে দেয়া হবে না।’
শুরুর দিকে চুপ থাকলেও পরে ভাস্কর্যবিরোধীদের বিরুদ্ধে মাঠে নামে সরকারপন্থি সংগঠনগুলো
অবশ্য চার দিক থেকে চাপের মুখে কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক দলগুলো এখন সুর নরম করেছে। তারা ৫ ডিসেম্বর নিজেরা বৈঠক করে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চেয়ে চিঠি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সে চিঠি দেয়াও হয়েছে।
সরকারপ্রধান সাক্ষাৎ দেবেন কি না জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কোভিড সিচুয়েশনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তো সরাসরি দেখা করতে পারেন না। উনার প্রতিনিধি হিসেবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অথবা অন্য কোনো মন্ত্রী হয়তো বিষয়টি দেখবেন।’
‘তাহলে কি বৈঠক হতে যাচ্ছে?’ এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’
প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেয়ার কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন হেফাজত ও খেলাফত মজলিসের নেতা মাওলানা মাহফুজুল হক।
‘কোনো বৈঠক কি হতে যাচ্ছে?’ এমন প্রশ্নে ভাস্কর্য ইস্যুতে প্রতিরোধের মুখে পড়া হেফাজত নেতা মামুনুল হকের বড় ভাই বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক এখনও নিশ্চিত হয়নি।’
জাতির পিতার সম্মান অম্লান রাখার অঙ্গীকার নিয়ে শনিবার সারাদেশে একযোগে সমাবেশ করেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা
সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘যোগাযোগ আছে। তবে বৈঠকের সময় এখন ফাইনাল হয়নি।’
কেন দেখা করতে চান জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সরকারের যে একটা ভুল বোঝাবুঝি যে, আমরা বঙ্গবন্ধুর বিরোধিতা করছি। আমরা তো এই বিষয়টা পরিষ্কার করতে চাই। এর পর বৈঠকে বসলে অনেক কথা হবে।’
দল ও সংগঠনগুলো যখন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করছে, তখন রংপুরে বেগম রোকেয়ার একটি ভাস্কর্য উদ্বোধন করা হয়েছে। এটি নিয়ে যদিও কোনো সংগঠন প্রতিবাদ জানায়নি।
বিরোধিতা কেবল বঙ্গবন্ধুর বেলায় কেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের বক্তব্য রাজনৈতিক না। আমরা সকল ভাস্কর্য নিয়েই কথা বলেছি। আমাদের মূল বক্তব্য হলো মানুষ ও প্রাণীর ভাস্কর্য নিয়ে। এখানে কোনো ব্যক্তি বিশেষের কথা বলা হয়নি।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলেমদের বৈঠক নিয়ে যে কথা ছড়িয়েছে, সে সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা কিছু জানি না।’
স্বারাষ্ট্রমন্ত্রীর একান্ত সচিব দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘না না না না না।’