কুষ্টিয়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় দুই ছাত্রের জড়িত থাকার বিষয়টি আদালতে স্বীকার করেছেন কুষ্টিয়ার ইবনি মাসউদ কওমি মাদ্রাসার দুই শিক্ষক।
শনিবার বিকেল চারটার দিকে কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে বিচারক দেলোয়ার হোসেনের এজলাসে মাদ্রাসার দুই শিক্ষক আল-আমিন ও ইউসুফ আলী এই স্বীকারোক্তি দেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ইউসুফ আলী আদালতকে জানান, তিনি হেফজ বিভাগে শিক্ষকতা করেন। ওই বিভাগের ছাত্র সংখ্যা ১৭ জন। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় অভিযুক্ত আবু বক্কর নাহিদ একই বিভাগের ছাত্র।
এই শিক্ষক জানান, ঘটনার দুই/তিন দিন আগে তিনি এবং দুই ছাত্র আবু বকর ও নাহিদ কুষ্টিয়ার মার্কেটে যান। এ সময় শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যটি তাদের নজরে আসে।
এরপর গত শনিবার সকালে ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় আবু বক্কর ও নাহিদের জড়িত থাকার বিষয়টি তিনি জানতে পারেন। পরে তাদের মাদ্রাসা থেকে নিজ নিজ বাড়ি চলে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
গত ৪ ডিসেম্বর প্রথম প্রহরে কুষ্টিয়ার পাঁচ রাস্তা মোড়ে বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্যটি ভাঙচুর করা হয় রাতের আঁধারে
রাজধানীর ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণে কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক কয়েকটি দল ও সংগঠনের বিরোধিতার মধ্যে ৪ ডিসেম্বর প্রথম প্রহরে কুষ্টিয়ায় পাঁচ রাস্তা মোড়ে বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্যটি ভাঙচুর করা হয়।
এ ঘটনায় কুষ্টিয়া পৌরসভার সচিব কামাল উদ্দিন কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলা করেন।
পুরো ঘটনাটি ধরা পড়েছে পুলিশের স্থাপন করা কয়েকটি সিসিটিভি ক্যামেরায়। আর ফুটেজ পর্যালোচনা করে ৭ ডিসেম্বর পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরে চরমোনাইয়ের পীরপন্থি মাদ্রাসাটির দুই ছাত্র ও দুই জন শিক্ষককে গ্রেফতার করে।
পুলিশ মাদ্রাসায় গিয়ে দুই শিক্ষার্থীর পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয়। তবে ছাত্ররা নিশ্চিত করলেও শিক্ষক ইউসুফ দাবি করেন, তিনি আবু বক্কর ও নাহিদকে চেনেন না।
পুলিশ জানিয়েছে, কুষ্টিয়ার ইবনি মাসউদ মাদ্রাসার এই দুই ছাত্র বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর করেছেন বলে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন ওই মাদ্রাসার দুই শিক্ষক
তবে শিক্ষক আল-আমিন বলেন, তিনিও অভিযুক্ত ওই দুই ছাত্রকে নিজ নিজ বাড়ি সরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। পরে সিসিটিভিতে ধারণ করা ফুটেজ নিয়ে পুলিশ তার কাছে জানতে চাইলে তিনি চুপ করে থাকেন।
কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এসএম তানভীর আরাফাত জানিয়েছেন, দুই মাদ্রাসা ছাত্রের জড়িত থাকার বিষয়টি জানা সত্ত্বেও ওই দুই শিক্ষক তা পুলিশের কাছে প্রকাশ করেননি। উল্টো তাদের পালিয়ে যেতে সহায়তা দিয়েছেন।
এই ঘটনায় মাদ্রাসার চার ছাত্র-শিক্ষককে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। আর জিজ্ঞাসাবাদের সময় দুই শিক্ষক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হন। জবানবন্দি শেষে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।