জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ইস্যুতে ধর্মভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামকে মোকাবিলার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।
কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে হামলাকে এ দেশের স্বাধীনতার চেতনার উপর হামলা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী পুত্র বলেন, ‘একাত্তরে ছিল জামায়াত আর এখন তাদের স্থানে এসেছে হেফাজত। এদের মোকাবিলা আমরা করবই।’
শনিবার সন্ধ্যায় এক ওয়েবিনারে কথা বলছিলেন জয়। ডিজিটাল বাংলাদেশের ১২ বছর পূর্তিতে এই ওয়েবিনারের আয়োজন করা হয়।
রাজধানীর ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করছে কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও সংগঠন।
প্রথমে মাঠে নামে চরমোনাইয়ের পীরের দল ইসলামী আন্দোলনের নায়েবে আমির ফয়জুল করীম। পরে হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক হুমকি দেন, ভাস্কর্য নির্মাণ হলে তিনি আরেকটি শাপলা চত্বর পরিস্থিতি তৈরি করবেন।
সব শেষে হেফাজতের আমির জুনাইদ বাবুনগরী বলেন, ভাস্কর্য নির্মাণ হলে তারা টেনেহিঁচড়ে ফেলে দেবেন।
রাজধানীর ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ হলে হেনেহিঁচড়ে ফেলে দেয়ার হুমকি দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম
শুরুতে চুপ থাকলেও পরে সরকার সমর্থকরা মাঠে নামে। মৌলবাদী গোষ্ঠীকে প্রতিহতের ঘোষণা দেয়া হয়। ফয়জুল, বাবুনগরী, মামুনুলের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়েছে।
রাজনৈতিক শক্তির পাশাপাশি প্রশাসনের কর্মকর্তারও শনিবার সারাদেশে একযোগে সমাবেশ করে ভাস্কর্যবিরোধীদেরকে সতর্ক করে দিয়েছে। জাতির পিতার সম্মান অক্ষুণ্ন রাখার শপথও নেয়া হয়েছে। যদিও খবর ছড়িয়েছে সরকার ভাস্কর্যবিরোধীদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে।
বঙ্গবন্ধুর নাতি বলেন, ‘আজ তারা সাহস করেছে জাতির পিতার ভাস্কর্য ভাঙার। এটা কী? এটা আমাদের স্বাধীনতার চেতনায় হামলা। যারা এদেশের চেতনার বিরুদ্ধে, তারাই এ হামলা করেছে।’
হেফাজতের অবস্থানের সমালোচনা করে জয় বলেন, ‘যারা স্বাধীনতাবিরোধী তাদের আমরা কী ডাকি? তাদের আমরা রাজাকার ডাকি। একাত্তরে ছিল জামায়াত আর এখন হেফাজত নতুন জামায়াত হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
বাংলাদেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে তখন একটি শ্রেণি দেশকে পিছিয়ে নিতে চায় বলেও মন্তব্য করেন জয়। বলেন, ‘তারা হুমকি দিচ্ছে এদেশকে আফগানিস্তান বানাবে। আমরা সেটা কখনও হতে দেব না। আওয়ামী লীগ যতদিন ক্ষমতায় আছে এটা হতে দেয়া হবে না।
রাজধানীর ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণে কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক কয়েকটি দলের বিরোধিতার মধ্যে কুষ্টিয়ায় জাতির পিতার নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়েছে
‘মৌলবাদী শক্তিকে আমাদের মুছে দিতে হবে। তারা যদি আফগানিস্তান পছন্দ করে তাহলে তাদের সেখানেই পাঠিয়ে দেয়া উচিত।’
জয় বলেন, ‘আমরা দেশকে এগিয়ে নিচ্ছি, কাউকেই পিছিয়ে দিতে দেব না। উন্নয়ন হতে থাকবে। স্বাধীনতার চেতনা আমরা মুছতে দেব না। তাদেরও রাজাকারদের মতো বিচার করা হবে। যারা এ দেশের বিরুদ্ধে কথা বলবে তাদের মুছে ফেলা হবে।’
জাতির পিতার সম্মান অম্লান রাখার ঘোষণা দিয়ে সারা দেশে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
‘গুজব ঠেকাতে নতুন আইন’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ঠেকাতে নতুন আইন করা হবে বলেও জানান সজীব ওয়াজেদ। বলেন, ‘আমরা এ ধরনের অপরাধের বিচারের জন্য ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন করেছি। এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ঠেকাতে নতুন একটি আইন করার পরিকল্পনা আমরা করছি।’
জয়ের মতে, ‘গুজব এখন বৈশ্বিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে।’
বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রেও ফেসবুক ও গুগলের মতো প্রতিষ্ঠানকে সে দেশের আইনসভা জিজ্ঞেস করেছে গুজব ঠেকাতে তারা কী করছে। আমাদের দেশে আমরা দুটো পদক্ষেপ নিয়েছি। একটি হলো ৩৩৩ হটলাইন। এখানে কোনো বিষয়ে যদি কারো প্রশ্ন থাকে তিনি ফোন করে সঠিক তথ্য পেতে পরেন।
‘আরেকটি হচ্ছ জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সম্বন্ধে যেন সঠিক তথ্য পাওয়া যায় সেজন্য নিয়মিত রেডিও ও টেলিভিশনের মাধ্যমে তথ্য প্রবাহ ঠিক রাখা।’
‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে নেতৃত্ব দেবে বাংলাদেশ’
এই মন্তব্য করে জয় বলেন, ‘এর জন্য অনেকগুলো পলিসি আমরা কেবিনেট থেকে পাস করিয়েছি। আমরা এখন রোবোটিক্স কিংবা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো ভবিষ্যত প্রযুক্তিগুলোতে গুরুত্ব দিচ্ছি। এ বিষয়গুলোতে আমরা এগিয়ে যেতে পারি। আমরা নতুন কিছু করব এটাই আমার বিশ্বাস।’
ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে ওয়েবিনারে অংশ নেয়া সজীব ওয়াজেদ জয়সহ অন্যান্যরা
জয় বলেন, ‘গত ১২ বছরে আপনারা সরকারের কার্যক্রম দেখেছেন, আগামী ১২ বছরও দেখবেন। আমরা এটা সম্ভব করব। আওয়ামী লীগ সরকারই এটা সম্ভব করবে।’
তিনি বলেন, ‘আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এমন একটি সেক্টর যেখানে আমরা দ্রুত এগোতে পারি। আর এর জন্য প্রয়োজন হবে গবেষণা।
‘সেটা মাথায় রেখে আইসিটির উপরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ৪০টিরও বেশি গবেষণা সেল করা হয়েছে। স্কুল থেকেই শিশুরা যেন প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত হতে পারে, এজন্য প্রাথমিক পর্যায় থেকে তাদের প্রোগ্রামিং শেখানো হচ্ছে।‘
ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল বর্ণনা করে জয় বলেন, ‘করোনা মহামারির মধ্যে আমরা অস্বাভাবিক একটি সময় কাটাচ্ছি। সামনাসামনি থাকতে না পারলেও ভার্চুয়ালি আমরা এক সঙ্গে আছি। আট হাজার মাইল দূরে থেকেও মন হচ্ছে আমরা কত কাছে আছি। ২০০৮ সালে যখন আমাদের সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলেছে তখনও কেউ ভাবেনি এটা সম্ভব হবে।’
গত ১২ বছর ধরে ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রস্তুতি চলছে জানিয়ে তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের স্বপ্ন ছিল এ দেশ সম্পূর্ণ ডিজিটাইজ হবে, যাতে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষও এর সুবিধা নিতে পারে। আর এর জন্য সারাদেশে ৪০ হাজার মাল্টিমিডিয়া ক্লাশরুম, ই-নথি, গ্রামের মানুষের কাছে সেবা পৌঁছে দিতে সাড়ে আট হাজার ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে।’