আইনজীবী তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষা বয়কটের ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষানবীশ আইনজীবীদের একটি বড় অংশ।
করোনা পরিস্থিতিতে ১৩ হাজারের মধ্যে আট হাজার শিক্ষানবীশ আইনজীবী এই পরীক্ষায় অংশ নেবে না বলে জানানো হয়েছে এক সংবাদ সম্মেলনে।
আগামী ১৯ ডিসেম্বর এই পরীক্ষার তারিখ দিয়েছে আইনজীবী তালিকাভুক্তির নিবন্ধন দেয়া বার কাউন্সিল।
করোনার কারণে এবারের লিখিত পরীক্ষা বাতিল করে মৌখিক পরীক্ষার ভিত্তি সনদ দেয়ার দাবিতে তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষানবীশ আইনজীবীরা।
তাদের আন্দোলনের মুখে একবার পরীক্ষা স্থগিত হয়েছে।
- আরও পড়ুন: ‘ভাইভার তারিখ চাই’
এই দাবিতে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী, আইনমন্ত্রীসহ আইনঅঙ্গনে নানা জনের আছে আবেদন জানিয়ে আসছিল তারা।
তবে বার কাউন্সিল পরীক্ষার তারিখ দেয়ার পাশাপাশি পরীক্ষা কেন্দ্রের নামও জানিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেন শিক্ষানবীশ আইনজীবীরা।
লিখিত বক্তব্য দেন ‘বাংলাদেশ সম্মিলিত শিক্ষানবীশ আইনজীবী পরিষদের’ আহ্বায়ক ফজলে রাব্বি স্মরণ।
মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে নিবন্ধনের দাবিতে সম্প্রতি আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাড়ি ঘেরাও করে শিক্ষানবীশ আইনজীবীরা
করোনাকালে পরীক্ষা গ্রহণ আইনসঙ্গত নয় দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দণ্ডবিধির ১৮৬০ এর ২৬৯ ও ২৭০ ধারা এবং সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ নিয়ন্ত্রণ নির্মূল) আইন ২০১৮ এর ২৪ ধারা অনুযায়ী এটি বেআইনি।
- আরও পড়ুন: ভাইভার বিষয়টি ‘দেখবেন’ আইনমন্ত্রী
স্মরণ বলেন, ‘চার বছর আমাদের কোনো পরীক্ষা হয়নি। এই করোনার সময়ে এসে তারা পরীক্ষার ডেট দিয়েছে। এই পরীক্ষা আমরা বর্জন করলাম।’
তিনি, আট হাজার শিক্ষার্থীর বর্জন করার তথ্য জানান। বলেন, বহু শিক্ষানবীশ আইনজীবী করোনায় আক্রান্ত। এই অবস্থায় তাদের সঙ্গে পরীক্ষা কেন্দ্রে বসে নিজের এবং পরিবারের স্বজনদের ঝুঁকি নিতে চান না তারা।
পরীক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় পাঁচশ করোনা রোগী আছেন উল্লেখ করে ফজলে রাব্বি বলেন, ‘বার কাউন্সিলকে বলব আমাদের প্রতিপক্ষ মনে করবেন না। আমাদের সন্তানের মতো মনে করেন।
‘এর মধ্যে সামনের সপ্তাহ থেকে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হবে। সব মিলিয়ে আমাদের দায়িত্ব নেবে কে? আমাদের ঘরেও পরিবার পরিজন আছে।’
লিখিতের বদলে মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে আইনজীবী সনদ দেয়ার দাবিতে কয়েক মাস ধরেই কর্মসূচি পালন করে আসছে শিক্ষানবীশ আইনজীবীরা
স্মরণ বলেন, ‘তাও যদি পরীক্ষায় বসতে হয়, তাহলে আমি আমার করোনা রোগী ভাইকে বুকে নিয়ে পরীক্ষা দিতে বসব। সেখানে বার কাউন্সিলের সদস্যদের, অ্যাটর্নি জেনারেলকে পরিদর্শন করে যেতে হবে। …আমাদের মৃত্যুর দিকে ধাবিত করছেন। আপনাদের সন্তান হলে সেটাই করতেন?’
- আরও পড়ুন: ‘আইন পড়াটাই ভুল হয়েছে’
লিখিত পরীক্ষায় আপত্তি থাকলেও মৌখিক পরীক্ষার ভিত্তিতে নিবন্ধনের দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
স্মরণ বলেন, ‘সারাদেশে শিক্ষাঙ্গনে অটো প্রমোশন দেয়া হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভার্চ্যুয়াল পরীক্ষা হচ্ছে। আমরা অটোও চাচ্ছি না, ভাইভা চাচ্ছি। আপনারা আমাদের সার্টিফিকেট না, লাইসেন্স দেবেন। বেতন ভাতা দেবেন না। গাড়ি দেবেন না, বাড়ি দেবেন না।’
লিখিত পরীক্ষায় দুর্নীতি হয় অভিযোগ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, পরীক্ষার খাতা পাল্টে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে বহুবার। এ জন্য খাতার মধ্যে ওএমআর শিট রাখা হয় না। হালকা আঠায় আলগা কাগজ লাগানো থাকে।
প্রধানমন্ত্রীকে দায়িত্ব গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘পরীক্ষার নামে এই বাণিজ্য পরীক্ষা বন্ধ করুন। …বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে আমাদের এই হাল হতো না।’