বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ইস্যুতে বিরোধিতাকারী কওমি মাদ্রসাকেন্দ্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর সমালোচনা করেছে ধর্মভিত্তিক একটি দল।
ইউনাইটেড ইসিলামিক পার্টি নামে এই দলটি বলেছে, ভাস্কর্যের বিরোধিতা করে যে ভাষায় বক্তব্য এসেছে, সেটি ইসলামের ভাষা নয়।
শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘ভাস্কর্য নিয়ে অপব্যাখ্যার প্রতিবাদে’ মানববন্ধনে এসব কথা বলা হয় দলটির পক্ষ থেকে। দলটি ভাস্কর্য ইস্যুতে বাড়াবাড়ি না করে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করার আহ্বান জানায়।
বাংলাদেশ ইউনাইটেড ইসলামী পার্টির চেয়ারম্যান মাওলানা মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘এ দেশে অনেক ভাস্কর্য আছে। স্বাধীনতার পর থেকে প্রত্যেকটি উপজেলায় ও জেলায় ভাস্কর্য তৈরি হয়েছে। সেগুলো নিয়ে তো কোন হুংকার শুনলাম না? ইন্দোনেশিয়া পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মুসলিম দেশ, সেখানেও অনেক ভাস্কর্য আছে। পাকিস্তানেও আছে, ইরানেও আছে।’
ভাস্কর্যবিরোধী দল ও সংগঠনের নেতাদের উত্তেজক বক্তব্যের সমালোচনাও করা হয় মানববন্ধনে।
মাওলানা ইসমাইল বলেন, ‘যারা হুংকার দিয়ে ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে কথা বলছেন, তাদের মনে রাখতে হবে, হুংকার দিয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়নি। মানুষকে বোঝাতে হবে।’
কুষ্টিয়ায় ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের দাবি জানানো হয় মানববন্ধনে। পাশাপাশি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের আবেগি হয়ে কোন কাজ না করার আহ্বান জানানো হয়।
রাজধানীর ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করছে কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক কয়েকটি দল ও সংগঠন। শুরুতে তারা ভাস্কর্য হলে তা বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেয়া বা টেনেহিঁচড়ে ফেলে দেয়ার হুমকি দিয়েছিল। যদিও পরে তাদের সমালোচনা করে বিভিন্ন সংগঠন মাঠে নামার পর সুর নরম করেছে দলগুলো।
এর মধ্যে আবার কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন একটি ভাস্কর্যে ভাঙচুর চালানো হয়েছে এবং এই ঘটনায় স্থানীয় একটি কওমি মাদ্রাসার চার ছাত্র-শিক্ষককে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।
বিরোধিতাকারী সংগঠনগুলো এই ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। রোববার সরকারের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে।
ইউনাইটেড ইসলামিক পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী একজন ধর্মভীরু। বঙ্গবন্ধু ইসলামের পক্ষের লোক ছিলেন। তিনি আলেমদের সম্মান করতেন। প্রধানমন্ত্রীও ওলামায়ে কেরামদের সম্মান করেন। আমরা চাই, প্রধানমন্ত্রী দেশের শীর্ষস্থানীয় ওলামায়ে কেরামদের ডেকে এই ইস্যুর সমাধান করবেন। ভাস্কর্য ইস্যুতে আর যেনো কেউ অপব্যাখ্যা না দেয়।’
মানববন্ধনে স্বাধীনতার পক্ষে থাকা দেশের ওলামাদের কথা শোনারও দাবিও জানানো হয়।
মাওলানা ইসমাইল বলেন, ভাস্কর্য নিয়ে আলেম সমাজের অনেকেই অপব্যাখ্যা দিচ্ছেন, উসকানিমূলক কথাবার্তা বলছেন। অন্যদিকে আলেম সমাজকে এ ইস্যুতে গালিগালাজ করা হচ্ছে। তারা এ দুটোর কোনোটারই পক্ষে নন।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন আল্লামা হযরত মাওলানা মুফতি শাহাদাত হোসেন, মাওলানা আজিজুর রহমান বুলবুলী, কাজী মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম, মাওলানা তাহেরুল ইসলামসহ আরও অনেকে।