বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ফিসফাস ছেড়ে বলাৎকার নিয়ে আওয়াজ

  •    
  • ১২ ডিসেম্বর, ২০২০ ০৮:৫১

আড়ালে আবডালে আলোচনা হলেও ইদানীং মাদ্রাসায় বলাৎকার সমস্যা নিয়ে সোচ্চার হচ্ছে বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ পর্যালোচনা করে একটি সংগঠন জানিয়েছে, গত এক মাসে ৪০টি ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছেন মাদ্রাসার শিক্ষকরা। মারা গেছে দুটি শিশু, আত্মহত্যা করেছে একজন। তবে কওমিপন্থি সংগঠনের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য আসছে না।

৪ ডিসেম্বর। বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে আলহাজ্ব রহমাতিয়া (রহম আলী) স্মৃতি শিশু সদন হাফেজি ও কওমি মাদ্রাসার পাশে ১১ বছর বয়সী এক শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেফতার হন মাদ্রাসার শিক্ষক ও ইমাম হাফিজুর রহমান। ধারণা করা হচ্ছে, বলাৎকারের কারণে মারা গেছে শিশুটি।

এর আগে ১৪ নভেম্বর বলাৎকারের অভিযোগে গ্রেফতার হন কুমিল্লার দেবিদ্বারের জামিয়া ইসলামিয়া বাইতুল নূর মাদ্রাসার কারি মো. শাহজালাল।

গত ৮ নভেম্বর ছাত্রকে বলাৎকারের অভিযোগে গ্রেফতার হন নারায়ণগঞ্জের জামিয়াতুল ইমান মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক মিজানুর রহমান।

মাদ্রাসায় এ রকম যৌন নির্যাতনের অভিযোগ পুরনো। এ নিয়ে সমাজে ফিসফাস থাকলেও প্রকাশ্যে আলোচনা হয়েছে কমই। তবে সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে, সভা-সমাবেশে এ নিয়ে কথা উঠছে। তথ্যচিত্র প্রদর্শন হচ্ছে।

দেশে অপরাধ, নির্যাতন নিয়ে সারা বছর নানা ধরনের জরিপ প্রকাশ হলেও এতদিন মাদ্রাসায় কতসংখ্যক বলাৎকারের খবর গণমাধ্যমে আসে তা জানা যায়নি কেউ লিপিবদ্ধ না করায়। তবে গত এক মাসে প্রকাশিত সংবাদগুলো সংকলন করে ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’ নামে একটি সংগঠন জানতে পেরেছে, ৩০ দিনে ৪০টি বলাৎকারের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে দুটি ঘটনায় মারা গেছে দুটি শিশু। একটি শিশু লাঞ্ছনা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে।

মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের জয়েন্ট সেক্রেটারি হামজা রহমান অন্তর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যত ঘটনা ঘটে তার খুব সামান্যই মিডিয়াতে আসে। কারণ এই বলাৎকারের বিষয়টিকে পবিত্র কোরআন, হাদিসের ভয় দেখিয়ে বাচ্চাদেরকে মুখ না খুলতে ভয় দেখানো হয়। আর এই ঘটনাগুলোতে কেবল গ্রেফতার হয়েছে। আপনারা সহজেই বুঝতে পারেন আসলে কী হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ছোটবেলা থেকেই এসব নিয়ে জানতাম, নিজেরা নিজেরা কথা বলতাম। কিন্তু এতদিন প্রকাশ্যে বলা হয়নি। কিন্তু যথেষ্ট হয়েছে। এ নিয়ে আর চুপ থাকার সুযোগ নেই।’

মাদ্রাসায় বলাৎকারের সমস্যা নিয়ে সোচ্চার হওয়ার শুরু মূলত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ইস্যুতে। রাজধানীর ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্ নির্মাণের বিরুদ্ধে কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক কয়েকটি রাজনৈতিক দলের অবস্থানের পর পাল্টা কর্মসূচিতে এই বিষয়টি সামনে এনে ব্যাখ্যা চাওয়া হচ্ছে।

তবে আক্রমণের মুখেও কওমি আলেমরা এ নিয়ে কোনো জবাব দিচ্ছেন না। যদিও তারা বলছেন, আলেমদের দুর্নাম করা হচ্ছে। এ নিয়ে সতর্কও করে দিয়েছেন তারা। যদিও কী নিয়ে দুর্নাম করা হচ্ছে, সে ব্যাখ্যা দেয়নি ধর্মভিত্তিক কোনো দল ও সংগঠন।

কেবল ধর্মভিত্তিক দলগুলোর সমালোচক না, গত কয়েক বছর ধরে নানা বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে তাদের কাছাকাছি আসা গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরীও। তিনি বলেছেন, মাদ্রাসায় যৌন নির্যাতনে মৌলভী সাহেবদের সম্মান কমছে। আবার বলেছেন, ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করার আগে আলেমদের বলাৎকার সমস্যার সমাধান করা উচিত।

তবে যাদেরকে ঘিরে আক্রমণ সেই কওমি আলেমরা এই সমালোচনার কোনো জবাব দিচ্ছেন না।

গত ৮ ডিসেম্বর চরমোনাই পীরের ডাকা সংবাদ সম্মেলনে এ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তার ছোট ভাই সৈয়দ ফয়জুল করীম এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, এই অপবাদ তাদের ওপর আসতে পারে না।

তিনি বলেন, “আজকে দেখেন হুমায়ূন আহমেদের ‘ঘেটুপুত্র কমলা’র মাধ্যমে এটা (বলাৎকার) গোটা দুনিয়ায় ছড়িয়ে দেয়ার অপচেষ্টা তারা করছে। কাজেই এই অপবাদ তো তাদের উপরে আসবে। আমাদের উপরে কেন আসবে?’

হেফাজতে ইসলামের আমির জুনাইদ বাবুনগরীকে বারবার বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে বলা হলেও তিনি মুখ খুলছেন না।

কেন কথা বলেন না জানতে চাইলে কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক সংগঠনটির নায়েবে আমির আব্দুর রব ইউসুফী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বলাৎকার নিয়ে আমরা কথা বলি না এটা আসলে যথার্থ নয়। আমরাই এ বিষয়ে আসলে বেশি বলি। বিশেষ করে ধর্ষণ ও বলাৎকার নিয়ে আমরা জোরালো বক্তব্য রেখে আসছি।’

তবে ইউসুফী এও বলেছেন, বলাৎকার নিয়ে সম্প্রতি যেসব কথাবার্তা বলা হচ্ছে, তার পেছনে অন্য উদ্দেশ্য রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের মানসিকভাবে দুর্বল করার জন্য তারা এসব কথাবার্তা বলে। তবে এসব অভিযোগ এনে ভাস্কর্যকে হালাল বা জায়েজ করা যাবে না। আমরা এর বিরুদ্ধে বলেই যাব। এ ছাড়া নির্দিষ্ট কোন অন্যায় অপরাধ সামনে আসলে আমরা তার বিরুদ্ধেও বলব। আমরা অন্যায়-অবিচারকে প্রশ্রয় দেয়ার পক্ষে নই।’

‘তাহলে কি আপনারা ভাস্কর্যের পাশাপাশি বলাৎকার নিয়ে সমানভাবে বলবেন?’

উত্তরে হেফাজতের এ নেতা বলেন, ‘এখন ভাস্কর্য হলো প্রথম ইস্যু। যখন যেটা প্রথম ইস্যু হয়, সেটা নিয়েই বেশি বলতে হয়।’

তিনি বলেন, ‘একটা অন্যায়কে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য আর একটা অন্যায়কে সামনে নিয়ে আসা উচিত নয়।‘

হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের রাজনৈতিক দল খেলাফত মজলিসের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব জালাল উদ্দিন আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভাস্কর্যর মধ্যে বলাৎকার ঢুকিয়ে দেওয়াটাকে আমি মনে করি ইসলাম বিদ্বেষের একটা অংশ। বলাৎকারের কথা বলে ওলামায়ে কেরামকে ঘায়েল করার চেষ্টা হচ্ছে।…একটা ইস্যুর মধ্যে আর একটা ইস্যু ঢুকিয়ে দেয়াটা আমি মনে করি চক্রান্ত।’

‘তাহলে কি মাদ্রাসায় এই সমস্যা নেই?’

এমন প্রশ্নে এই কওমি আলেম বলেন, ‘এটা শুধু আমাদের মহলে আছে বিষয়টা এমন না। এটা সব মহলে আছে। আমাদের তো হঠাৎ দুই একটা ধরা পড়ে যায়। কিন্তু এর বাইরে অনেক আছে। আমরা সবসময় এর বিরুদ্ধে বলে আসতেছি।’

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রচার সম্পাদক মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা বলাৎকারের বিরুদ্ধে অবশ্যই কথা বলছি। বলাৎকার যেখানে হয়েছে সেখানেই আমরা এ নিয়ে কথা বলতেছি। আর ধর্ষণ নিয়ে তো আমরা কথা বলেছি। তবে দেশে কিন্তু বলাৎকারের চাইতে ধর্ষণ বেশি হইছে।‘

তিনি বলেন, ‘বলাৎকারের বিষয়ে আমরা বলেছি, প্রচলিত আইনে এর যে বিচার আছে, যদি প্রমাণিত হয় তবে তাই দিতে হবে।’

তবে এই নেতা এমনও মনে করেন, বলাৎকারের সংখ্যা খুবই কম। তিনি বলেন, ‘বলাৎকার তো ধর্ষণকে ছাড়িয়ে যায়নি। বলাৎকারে ঘটনা সারা দেশে হইছে দুইটা কিংবা তিনটা।’

এ বিভাগের আরো খবর