পদ্মা সেতু দেখতে মাগুরা থেকে বাসে করে এসেছেন অন্তত ৫০ জন। তারা সারা দিন পদ্মা সেতু এক্সপ্রেসওয়ে ঘুরে শেষ বেলায় এসেছেন সেতুর ৪১তম স্প্যানের কাছে। তাদের সঙ্গে পাঁচ জন তরুণীও রয়েছেন।
তাদের এক জনের নাম সেতু আক্তার। তিনি আবেগে থরথর। বলেন, ‘সেতু আবার দোতলা। জীবনে প্রথম দেখলাম। এত বড় সেতু, ভাবতেই তাজ্জব লাগে। সেতুর নিচতলা দিয়ে যাবে ট্রেন। আর ওপরতলা দিয়ে চলাচল করবে যানবাহন। বাংলাদেশের জন্য এ এক বিরাট ঘটনা।’
সেতু এলাকায় আরও সময় থাকতে চান তিনি। কিন্তু উপায় নেই। এবার ফেরার পালা। তিনি বলেন, ‘আবার সময় করে আসব। পুরো এলাকা মনোর মতো করে ঘুরে দেখব।’
পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যান বসানো হয় বৃহস্পতিবার। এর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় সেতুর ৬.১৫ কিলোমিটার। পদ্মার দুই তীর এক করে এই সেতু। আর এ দৃশ্য দেখার সুযোগবঞ্চিত হাজারও মানুষ শুক্রবার ছুটির দিনে ভিড় করেন পদ্মার পারে।
এদিকে শরীয়তপুরের স্থানীয় বাসিন্দারা সেতুর জাজিরা প্রান্তে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সড়কে মোমবাতি জ্বালিয়ে ও আতশবাজি পুড়িয়ে উদ্যাপন করেন। বেলুন আর ফানুস উড়ানো হয় আকাশে।
খুলনা, বরিশাল, যশোর ও ফরিদপুর থেকে যানবাহনে করে শুক্রবার সকালেই আসতে শুরু করেন নানা শ্রেণিপেশার মানুষ। তরুণরা আসেন মোটরবাইকের বহর নিয়ে। পদ্মার এপার-ওপার যুক্ত করা সেতুর কাছে যে যার মতো আনন্দ উপভোগ করেন। সেতুর সঙ্গে সেলফি তোলায় ব্যস্ত ছিলেন অনেকে।
খুলনা থেকে মাইক্রোবাসে করে এসেছেন আফজাল হোসেন ও তার বন্ধুরা। তারা মাইক্রোবাস থেকে নেমেই চিৎকার করে বলে ওঠেন, ‘আমাদের আরেক বিজয় হয়ে গেছে। পদ্মা সেতু আর স্বপ্ন না, এখন বাস্তব।’
আফজাল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখন আর কোনো বাধা রইল না। দুই তীরের মিলন হয়ে গেছে। এখন বাকি শুধু পারাপার। এক বছর দেখতে না দেখতেই চলে যাবে।’
মোটরসাইকেলের বহরের এক তরুণ বেশ উৎফুল্ল। তিনি বলেন, ‘এ তো দেখি ইউরোপ আমেরিকার সড়ক। এত প্রশস্ত আর সুন্দর সড়ক বাংলাদেশে আর দেখিনি। নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস হতো না।’
জাজিরা প্রান্তের গোলচত্বর এলাকায় আকাশে উড়ানো হয়েছে বেলুন আর ফানুস। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে সড়কজুড়ে জ্বালানো হয় অসংখ্য মোমবাতি। এরপর একের পর এক পোড়ানো হয় আতশবাজি। ঝিলিক দিয়ে ওঠে নাওডোবার আকাশ। এ সময় শত শত মানুষ আনন্দে চিৎকার দিয়ে ওঠেন। হাততালি দেন।
জাজিরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোবারক আলী সিকদার আয়োজকদের এক জন। তিনি বলেন, ‘মহান বিজয়ের এই মাসে পদ্মা সেতু এখন পুরোটাই দৃশ্যমান। যারা সংশয় আর প্রপাগান্ডা ছড়িয়েছেন, এখন তারা দেখুক কত বড় সেতু নিজেদের পয়সা বানানো হইছে। বিশ্বদরবারে আবারও প্রমাণিত হলো আমরা বাঙালিরা বীরের জাতি। আর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে।’
ময়মনসিংহে আওয়ামী লীগ-বিএনপির মিশ্র প্রতিক্রিয়া
আমাদের ময়মনসিংহ প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর আকন্দ জানিয়েছেন, নানা বাধা টপকে পদ্মা সেতু নির্মাণকে সরকারের বিরাট বড় এক সাফল্য বলে মনে করছেন ময়মনসিংহ আওয়ামী লীগের নেতা ও সুশীল সমাজের লোকজন।
তবে বিএনপির নেতারা বলছেন, জনগণের টাকায় সেতু নির্মাণ, এতে আওয়ামী লীগের কোনো সফলতা নেই।
সাবেক ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের ছেলে মোহিত উর রহমান শান্ত। তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। শান্ত বলেন, ‘দেশ স্বাবলম্বী হওয়ার সবচেয়ে বড় সাফল্য এই পদ্মা সেতু। বঙ্গবন্ধু যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন। পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে তা অনেকখানি পূরণ হয়েছে।’
জেলা জনউদ্যোগের আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম চুন্নু বলেন, ‘পদ্মা সেতু নির্মাণ ঠেকাতে একটা কুচক্রী মহল অনেক বাধা দিয়েছিল। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেই বাধা উপেক্ষা করে পদ্মা সেতুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছেন। এ জন্য সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ।’
জেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ইশতেয়াক আহম্মেদ ইমন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর এই বিস্ময়কর সাফল্যে আশা রাখতে পারি আমরা এক দিন চীন এবং মালয়েশিয়াকে ছাড়িয়ে যাব। সেই দিন খুব দূরে নয়।’
সেতু নির্মাণে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন হবে মন্তব্য করে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবু ওয়াহাব আকন্দ বলেন, জনগণের টাকায় সেতু হয়েছে।
এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের সাফল্যের কিছু দেখছেন না তিনি। বলেন, ‘এতে বিএনপিসহ সর্ব সাধারণের অবদান রয়েছে। বিএনপি সব সময় দেশের উন্নয়নের পক্ষে। সেতু নির্মাণকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের নেতাদের কথাবার্তায় লাগাম টানা উচিত।’