বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ফুলবাড়িয়া মার্কেটের দোকানিদের দুর্গতি কেন

  •    
  • ১১ ডিসেম্বর, ২০২০ ১৯:৫১

নকশা বহির্ভূত অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করে ৯১১ টি দোকান ভেঙে দিচ্ছে সিটি করপোরেশন। জীবিকার অবলম্বন হারিয়ে দুশ্চিন্তায় ব্যবসায়ীরা। বলছেন, টাকা দিয়ে সিটি করপোরেশন থেকে বরাদ্দ নিয়েছেন। সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন বলছেন, তাদের কথা সঠিক। তার আমলে করপোরেশনের সিদ্ধান্তকে সম্মান করছে না বর্তমান করপোরেশন।

ফুলবাড়িয়া সুপারমার্কেটের ৯১১টি দোকানের বরাদ্দ অবৈধ জানিয়ে দোকানিদেরকে উচ্ছেদ করছে সিটি করপোরেশন। দোকান হারিয়ে ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ সংসার চালাতে পণ্য নিয়ে ফুটপাতে।

তবে দোকানিরা জানান, দোকানগুলো তাদেরকে ২০০৯ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। আর এ জন্য সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে এককালীন টাকাও দেয়া হয়। তাদের হিসাবে তাদের মালিকানা বৈধ। হঠাৎ কীভাবে অবৈধ হয়ে গেল, সেটা বুঝতে পারছেন না।

মঙ্গলবার থেকে বিপণিবিতানের দোকানগুলো উচ্ছেদে অভিযান শুরু করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। তাদের দাবি, এগুলো নকশাবহির্ভূত। কিছু দোকান মূল বিপণিবিতানের শৌচাগার, লিফটের জায়গা ও মানুষের হাঁটার পথে তৈরি করা হয়েছে।

দোকানিদের অভিযোগ, সাঈদ খোকন মেয়র থাকাকালে এসব দোকান বৈধ করতে তারা তিন লাখ থেকে শুরু করে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত দিয়েছেন। দোকানগুলো থেকে সিটি করপোশন এত দিন ভাড়াও নিয়েছে।

সাবেক মেয়রও বলছেন, দোকানিদের দাবি ঠিক। এই উচ্ছেদ অভিযান অবৈধ। তারা ব্যবসায়ীদেরকে বৈধভাবেই দোকান বরাদ্দ দিয়েছেন।

দোকানিরা যা বলছেন?

জাকের প্লাজার বিএম এন্টারপ্রাইজের মালিক নিয়াজ আহমদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমিসহ আমার ব্লকের ১০০ দোকানি গত বছর মার্চ মাসে ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মীর সমীরকে তিন লাখ করে টাকা দিয়েছি। তখন তিনি আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন এই দোকান বৈধ করা হবে। কিছু দিনের মধ্যে বৈধ কাগজ দেয়া হবে এমন প্রতিশ্রুতি নিয়েই আমরা এখানে দোকান করে যাচ্ছি।’

তবে এ জন্য লিখিত কোনো চুক্তি হয়নি।

কাগজ ছাড়া কীভাবে চুক্তি করলেন?

আলমগীর হোসেন নামে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমি তো একা না। আমার সঙ্গে আরও ৯৯ জন আছে। আর তিনি স্থানীয় কাউন্সিলর। এখানে ৩০ বছর ধরে আছেন। আমাদেরকে এমন ভরসা দেয়া হয়েছিল। পরে করোনার জন্য এই বৈধ করার প্রক্রিয়া থেমে আছে বলে জানিয়েছিলেন কাউন্সিলর।’

নিয়াজ আহমদ বলেন, ‘আমাদেরকে উচ্ছেদের আগে সময়ও দিল না। সোমবার একবার করে মাইকিং করে গিয়েছে সিটি করপোরেশন। আমরা এরপর মীর সমীরেরে সিদ্দিক বাজার বাসায় গেলে তার দেখা পাওয়া যায়নি।’

আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আগের মেয়র থাকা অবস্থায় এই দোকানগুলোর বিনিময়ে আমাদের কাছ থেকে সাত থেকে ১৫ লাখ করে টাকা নিয়েছে তারা। আমি কারও নির্দিষ্ট কারও নাম বলতে চাই না। তবে যদি তারা আমাদের সঙ্গে আলোচনা করতে বসে, তাহলে আমরা আমাদের দেয়া কাগজ তাদেরকে দেখাতে পারব।’

তবে সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর মীর সমীর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি কোনো টাকা নেইনি। আমার বিরুদ্ধে কিছু লোক আছে যারা এমন কথা বলছে। আমি কোনো দোকান বৈধ করে দেয়ার প্রতিশ্রুতিও দেইনি।’

কারা টাকা নিয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যুবলীগের কিছু নেতা কর্মীরা তখন টাকা তুলে সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনকে দিয়েছিল। আমি যে দোকানগুলোর জন্য জন্য কাজ করেছি সেইগুলা একটিও ভাঙা হয়নি।’

৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর মো. মামুন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি ব্যবসায়ীদের পক্ষে। তারা বৈধভাবে ব্যবসা করে খাক। তবে টাকার বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আমি মাত্র চার মাস আগে দায়িত্ব বুঝে পেয়েছি। আজ এখানে এসে জানতে পারলাম টাকার বিনিময়ে এমন কিছু হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এখানকার দোকানের মালিকেরা প্রতি দোকান বাবদ সাত থেকে ১২ লাখ করে টাকা সিটি করপোরেশনকে দিয়েছেন বলে তারা দাবি করেছেন। কিন্তু সিটি করপোরেশনের কাছে এই টাকার কোনো হিসাব নেই।’

বর্তমান মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসা হতে পারে বলেও মন্তব্য করেন কাউন্সিলর।

ডিএসসিসি দোকান মালিক ফেডারেশনের সভাপতি দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহীন বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা এসব দোকানের বিপরীতে এককালীন লাখ লাখ টাকা দিয়েছেন। সিটি করপোরেশনের কিছু রিসিপট আমি দোকান মালিকদের কাছে দেখেছি। সেখানে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ভাড়া পরিশোধ করা হয়েছে। আসলে বিষয়টা পুরোটাই মানবিক। মধ্যস্বত্বভোগীরা মধ্যস্বত্ব ভোগ করে চলে গিয়েছে।’

কারা টাকা নিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যেহেতু সিটি করপোরেশনের রিসিপট দেখেছি, সে ক্ষেত্রে এটা নিশ্চিত সিটি করপোরেশন টাকা নিয়েছে। এ বিষয়ে আমরা মেয়রের সঙ্গে কথা বলব।’

বৈধভাবে দোকান বরাদ্দ পাওয়া এমনকি ট্যাক্স দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন বলেন, ‘তারা যদি সঠিক কাগজ জমা দিয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে তারা মেয়র মহোদয় বরাবর আবেদন করতে পারবেন। পরবর্তীতে সিটি করপোরেশন তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।’

অবৈধ দোকানের জন্য মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেনের অভিযোগ প্রসঙ্গে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘যারা মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েছে তাদের জন্য দুদক আছে, সরকারের অন্যান্য তদন্ত দল আছে। যারা টাকা দিয়েছে তারা অভিযোগ করতে পারে তাদের বিরুদ্ধে।’

সাঈদ খোকন যা বলছেন

দোকানগুলো যখন বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল তখন মেয়র ছিলেন সাঈদ খোকন। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘যে ৯১১টি দোকানের কথা বলা হচ্ছে তার মধ্যে ম্যাক্সিমাম বৈধ। এই দোকানিদের অনেকে আদালতে গিয়েছিলেন। আদালত থেকে একটা নির্দেশনা আসে তাদের সমস্যা নিষ্পত্তি করার জন্য।’

তিনি জানান, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী তারা সিটি করপোরেশনে বোর্ড সভা ডাকেন। সেখানে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মার্কেটের নকশা সংশোধনের উদ্যোগ নেন। আর যেগুলো দোকানের কারণে চলাচলের অসুবিধা হয় সেগুলো ভেঙে ফেলা হয়।

তিনি বলেন, ‘যেগুলো দোকানকে সে সময় বৈধতা দেয়া হয়েছে, সেগুলোকেও এখন সিটি করপোরেশন ভাঙছে। এটা অন্যায়। তাদেরকে অবিলম্বে পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ দেয়া উচিত।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমান কর্তৃপক্ষ দোকানিদের কথা শুনছে না, এটা আমার দৃষ্টিতে একদম সঠিক নয়। আমরা তাদেরকে একটা লিগ্যাল ডকুমেন্ট দিয়েছি। সেটা সিটি করপোরেশন থেকে দেয়া হয়েছে। এটাকে তো ডিজঅনার করতে পারে না তারা।’

টাকা নেয়ার অভিযোগের প্রশ্নে সাঈদ খোকন বলেন, ‘আমরা শুধু সাত মাসের ভাড়া নিয়েছি। ভাড়া নিয়ে রশিদ দিয়ে দিয়েছি। তাদের সঙ্গে আমাদের এই লেনদেন।’

‘কে কাকে কোথায় টাকা দিয়েছে এটা তারা বলতে পারবে। এটা আমাদের জানার বিষয় না’- বলেন সাবেক মেয়র।

এ বিভাগের আরো খবর