বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আরেকটি চুড়িহাট্টা থেকে রক্ষা

  •    
  • ১১ ডিসেম্বর, ২০২০ ১৬:৪৩

চুড়িহাট্টায় আগুনের পর পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিকের গুদাম অপসারণে টানা ১১দিন অভিযান চালিয়েছিল বিভিন্ন সেবা সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত টাস্কফোর্স। আশপাশের ভবনের বাসিন্দারা বলছেন, সেই অভিযানে সময় নোয়াখালী বিল্ডিংয়েও তালা লাগিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যে আবার তা চালু হয়। এর পর থেকে তারা সব সময় ভয়ে ভয়েই থাকতেন।

সরু গলির পাশে বয়সের ভারে জর্জর চারতলা ভবনটি এমনিতেই ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। তা সত্বেও এর শতাধিক কক্ষ ব্যবহার করা হচ্ছিল দাহ্য প্লাস্টিক দানার গুদাম হিসেবে।

ভবনের মাঝের অংশে এক চিলতে জায়গায় অন্তত ১৫টি কারখানায় চলছিল পুরনো প্লাস্টিক প্রক্রিয়া করে এমন দানা উৎপাদনের কাজ।

শেষ রাতে চকবাজারের উর্দু রোডে ‘নোয়াখালি বিল্ডিং’ নামে পরিচিত এই ভবনটিতে আগুন লাগে। এতে প্রাণহানির কোনো ঘটনা না ঘটলেও তা এখানকার বাসিন্দাদের মনে ফিরিয়ে এনেছে চুড়িহাট্টার ভয়াবহ আগুনের সেই আতঙ্ক।

গত রাতের আগুনে ইংরেজি ইউ আকৃতির এই ভবনের নিচে থাকা কারখানাগুলো পুড়ে যায়। আগুন ছড়িয়ে পড়ে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ তলার কয়েকটি কক্ষে।

টের পেয়ে আশপাশের ভবনের আতঙ্কিত বাসিন্দারা রাস্তায় নেমে আসেন। ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে লালবাগ ফায়ার স্টেশন থেকে দমকল কর্মীরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু করে।

পরে ভয়াবহতা বুঝে পলাশী, হাজারীবাগ ও সিদ্দিকবাজার ফায়ার স্টেশন থেকে মোট ১৩টি ইউনিট যোগ দেয়। কাছাকাছি পানির উৎস না থাকায় ১৫টি হোস পাইপ জুড়ে দূরবর্তী একটা জায়গা থেকে পানি আনা হয়।

স্থানীয় বাসিন্দারাও হাত লাগান আগুন নেভানোর কাজে। সব মিলিয়ে ঘণ্টা দেড়েকের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

ফায়ার সার্ভিস বলছে, এখন পর্যন্ত ভবনটিতে যে পরিমাণ প্লাস্টিকের দানা মজুত আছে তার সবগুলোতে আগুন ছড়িয়ে পড়লে চুড়িহাট্টার মতো আরেকটি প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটতে পারত।

এক দশক আগে ২০১০ সালের ৩ জুন পুরান ঢাকার নিমতলীতে রাসায়নিকের আগুনে পুড়ে মারা যান ১২৪ জন। আবার গত বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে চকবাজারের চুড়িহাট্টায় একই ধরনের দুর্ঘটনায় ৭০ জনের মৃত্যু হয়।

চুড়িহাট্টায় আগুনের পর পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিকের গুদাম অপসারণে টানা ১১দিন অভিযান চালিয়েছিল বিভিন্ন সেবা সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত টাস্কফোর্স। আশপাশের ভবনের বাসিন্দারা বলছেন, সেই অভিযানে সময় নোয়াখালী বিল্ডিংয়েও তালা লাগিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যে আবার তা চালু হয়। এর পর থেকে তারা সব সময় ভয়ে ভয়েই থাকতেন।

আজ সকাল সাড়ে আটটায় ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ভবনটির সামনে ভিড় করেছেন শত শত উৎসুক জনতা। তথনো ভবনের তৃতীয় তলা থেকে ধোঁয়া উড়ছে। কিন্তু ফায়ার আগুনে পুড়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি আরও ঝুরঝুরে হয়ে পড়ায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সে পর্যন্ত পৌঁছাতে পারছেন না।

ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা সদর জোন-১ এর উপসহকারী পরিচালক বজলুর রশীদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখন ভবনটির সব কিছু ভেঙে ভেঙে পড়ছে। আমরা খুবই ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছি। যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে তাতে ভবনটি যে কোনো সময় ধসে পড়েতে পারে।’

ভবনটির ভেতরে ঢুকে দেখা যায়, নিচে এক চিলতে জায়গা ঠাসাঠাসি করে গড়ে তোলা হয়েছে অন্তত ১৫টি প্লাস্টিক প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা। ভেতরে গ্যাসের সিলিন্ডারসহ নানা ভারী যন্ত্রপাতি রাখা। বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা বস্তাভর্তি প্লাস্টিকের বোতল, ফোম। এর মধ্যেই ধসে পড়ে তিন তলার একটা কার্নিশ।

পাশের ভবনের বাসিন্দা কবির হোসেন বলেন, ‘এখানে জীবন হাতে নিয়ে থাকি আমরা। রাতে সবাই এক কাপড়ে ঘর থেকে বের হয়ে এসেছি। ধরেই নিয়েছিলাম আরেকটা চুড়িহাট্টা হতে যাচ্ছে এখানে।’

আরেক ভবনের বাসিন্দা শেখ আনোয়ার বলেন, ‘আমরা যে ‍যার মতো হাত লাগাইছি আগুন নেভানোর কাজে। রাতের বেলায় রাস্তা ফাঁকা থাকায় ফায়ার সার্ভিস দ্রুত আসতে পারছে। এই বারের মতো বাঁচা গেছে।’

ভবনটির প্রকৃত মালিক কে তা এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। তবে স্থানীয়রা বলছেন, এর মালিক মৃত আমির আলী নামের এক ব্যক্তি। এখন তার ভাই ইকবাল এর দেখাশোনা করেন। এ ছাড়া এলাকার আলী আহমেদ, বিন আমিন ওরফে বিনা, শাকিল মহাজনসহ আরো কয়েক জন এখানে কারখানা চালান।

আগুন লাগার কারণ সম্পর্কেও এখন পর্যন্ত কিছু জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, ভবন লাগোয়া ট্রান্সফর্মার থেকেই আগুনের উৎপত্তি।

এ বিভাগের আরো খবর