বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পদ্মা সেতু: এমন নজির মিলবে না সহজে

  •    
  • ১১ ডিসেম্বর, ২০২০ ১৫:৩৫

তীব্র স্রোতের কারণে পদ্মার তলদেশে কখনও কখনও ৪০ মিটারের মতো মাটি সরে যায়। ফলে ভিত্তি মজবুত করতে স্টিলের তৈরি পাইলগুলো গড়ে ১১৪ মিটার অর্থাৎ ৪০০ ফুট গভীরে বসানো হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১২২ মিটার গভীরে বসানো পাইলও আছে। বিশ্বে কোনো নদীর এতটা গভীরে গিয়ে পাইলিংয়ের নজির খুবই কম।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও প্রমত্তা নদীগুলোর একটা পদ্মা। সবচেয়ে বেশি পলি বহনকারী গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার পানি এই পদ্মা দিয়েই নামে বঙ্গোপসাগরে।

নদীর দুই তীরকে সেতু দিয়ে বাঁধতে পলির পাশাপাশি উজান থেকে নেমে আসা স্রোতের ধাক্কা সামলানোই পদ্মা সেতুর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল বলে জানিয়েছেন সেতু প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ দলের প্রধান অধ্যাপক এম শামিম জেড বসুনিয়া। বলেছেন, এই সেতু করা ছিল খুবই কঠিন কাজ।

৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যানটি বসানোর দিন সেতুটির প্রকৌশল ও অবকাঠামোগত দিক নিয়ে কথা বলেছেন নিউজবাংলার সঙ্গে।

অধ্যাপক বসুনিয়া বলেন, ‘পদ্মা নদী খুবই খরস্রোতা। আর বিশেষ করে মাওয়া অংশে এর গভীরতা অনেক বেশি। ভাঙনও আরেকটি সমস্যা। যে কারণে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসেই অনেকগুলো স্প্যান তৈরি থাকলেও আমরা তা সময়মতো বসাতে পারিনি।’

‘এ ছাড়া এই প্রকল্পের ক্ষেত্রে আরেকটি সমস্যা হচ্ছে পলি। এ বছরেই পলি পড়েছে প্রায় ১০ মিটার অর্থাৎ ৩০ থেকে ৩৫ ফুট। এ ছাড়া এবার পানির উচ্চতাও বেড়ে গিয়েছিল অনেক বেশি’- বলেন তিনি।

ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক-এর ইমেরিটাস অধ্যাপক বসুনিয়া জানান, তীব্র স্রোতের কারণে পদ্মার তলদেশে কখনও কখনও ৪০ মিটারের মতো মাটি সরে যায়। ফলে ভিত্তি মজবুত করতে স্টিলের তৈরি পাইলগুলো গড়ে ১১৪ মিটার অর্থাৎ ৪০০ ফুট গভীরে বসানো হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১২২ মিটার গভীরে বসানো পাইলও আছে।

তাঁর ভাষ্য, বিশ্বে কোনো নদীর এতটা গভীরে গিয়ে পাইলিংয়ের নজির খুবই কম। যেটা ছিল পদ্মা সেতু প্রকল্পের প্রকৌশলীদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

গল্পে গল্পে জানা যায়, ২০১৭ সালে প্রতিটি খুঁটির নিচে মাটি পরীক্ষায় ২২টি খুঁটির নিচে নরম মাটি পাওয়া যায়। তখন নকশা সংশোধনের প্রয়োজন দেখা দেয়।

অধ্যাপক বসুনিয়া বলেন, শুরুতে প্রতিটি খুঁটি অর্থাৎ পিয়ারের নিচে ছয়টি করে পাইল বসানোর পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু ২২টি পিয়ারের নিচে নরম মাটির কারণে আমরা একটা করে পাইল বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই। যুক্তরাজ্যের পরামর্শক প্রতিষ্ঠানও এতে সায় দেয়। যে কারণে পিয়ারের কাজসহ পাইলিংয়ের পুরো কাজ শেষ করতে এক বছরের বেশি সময় লেগে যায়।’

আবার সেতুর পিয়ার অর্থাৎ খুঁটি বসানোর কাজে অতি ভারী হ্যামার (হাতুড়ি) ব্যবহারের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে এই খ্যাতিমান প্রকৌশলী বলেন, ‘পিয়ার বসানোর কাজে সাধারণত দুই ধরনের হ্যামার ব্যবহার করা হতো। আমরা ছোটটার নাম দিয়েছিলাম জুনিয়র। আর বড়টা সিনিয়র।

‘এর মধ্যে জুনিয়র হ্যামার পাঁচ হাজার টন পর্যন্ত লোড তৈরি করতে পারে। সিনিয়র পারে দ্বিগুণ। কখনো দেখা গেছে, তলদেশের অতি শক্ত মাটির কারণে পিয়ার বসছে না। এ অবস্থায় দুই একটা বড় হ্যামার নষ্ট হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

আলাপচারিতায় দেশের সবচেয়ে বড় এই নির্মাণযজ্ঞের আরও কিছু বিষয় সামনে আসে। যেমন- বিশেষভাবে তৈরি শক্তিশালী টাগবোটের ওপর বসানো ক্রেনের মাধ্যমে যখন একেকটি স্প্যান তোলা হয়েছে, তখন তার ওজন দাাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৩০০ থেকে ৪০০ টন পর্যন্ত। আবার প্রায় স্থলভাগের ওপর প্রথম স্প্যান বসানোর ক্ষেত্রেও মাটি কেটে পানির ওপর দিয়েই বোট ও ক্রেন আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

অধ্যাপক বসুনিয়া বলেন, ‘অনেকে মনে করেন মূল সেতুটিই সব। আসলে তা না। এর সঙ্গে আছে দুই পাশের সংযোগ সড়ক তৈরি, সার্ভিস এলাকা নির্মাণ ও নদীশাসনের মতো বিষয়।’

তিনি জানান, সেতুর উপরের অংশে স্প্যানের ওপর যে রোডওয়ে স্ল্যাবগুলো বসানো হচ্ছে তার প্রতিটি প্রস্থে দুই মিটার ও দৈর্ঘ্যে ২২ মিটার করে। একেকটির ওজন ৮০ টন। এখন পর্যন্ত ২৩টি স্প্যানে রোডওয়ে স্ল্যাব বসানো বাকি আছে। একেকটি স্প্যানে স্ল্যাব বসানোর কাজ শেষ করতে লাগে এক মাসের মতো। এ ছাড়া মূল সেতুর দুই তৃতীয়াংশে রেলওয়ে স্ল্যাব বসানোর কাজও শেষ হয়েছে।

স্ল্যাব বসানোর কাজ শেষ হলে রোডওয়ে সারফেস তৈরি, রেলিং বসানো, ও সেফটি গিয়ার বসানোর কাজ শেষ হলে যান চলাচলের উপযোগী হবে সেতুটি।

তবে নদী শাসনের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা এখনো থেকে গেছে জানিয়ে অধ্যাপক বসুনিয়া বলেন, ‘এবার ধারণার চাইতে পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে নতুন চ্যানেল তৈরি করতে হয়েছে। ফেরির রুট চেঞ্জ করতে হয়েছে।’

সেতুটির ভূমিকম্পে টিকে থাকার সক্ষমতার কথা বলতে গিয়ে অধ্যাপক বসুনিয়া জানান, ‘পদ্মা সেতুর স্প্যানের ওপরে লাগানো ফ্রিকশন পেন্ডুলাম বিয়ারিংয়ের সক্ষমতা ১০ হাজার টন। যে কারণে সেতুটি ৯ মাত্রার ভূমিকম্পেও টিকে থাকতে পারবে।’

এ বিভাগের আরো খবর