বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

হার না মানা চার দৃষ্টিহীন মানুষ

  •    
  • ১১ ডিসেম্বর, ২০২০ ১২:২৮

নিজেকে কখনও প্রতিবন্ধী মনে করিনি। বরং এই প্রতিবন্ধকতাকে শক্তি ভেবে দ্বিগুণ গতিতে এগিয়ে গেছি। যারা অজুহাতের বেড়াজালে নিজেদের আটকে রাখে তাদের জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চেয়েছি।

শরীয়তপুরের দৃষ্টিহীন আমির, মালেক, বিল্লাল আর রফিক এখন সমাজের দৃষ্টান্ত। কোনো প্রতিবন্ধকতা দমাতে পারেনি তাদের। নিজেরা যেমন প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন তেমনি সমাজ গড়ার কাজেও রাখছেন অবদান। তারা এখন অনেকের কাছেই অনুপ্রেরণা।

আমির হোসেন পেশায় আইনজীবী। শরীয়তপুর জজ কোর্টে করছেন ওকালতি। সমাজের নির্যাতিতা নারী আর প্রতিবন্ধীদের মামলায় বেশি লড়ে থাকেন। ওকালতি পেশায় তার বেশ সুনাম।

আমিরের বাড়ি শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার জব্বর আলী আকনকান্দি গ্রামে। সাড়ে তিন বছর বয়সে হাম হয়ে অন্ধ হয়ে যান।

দরিদ্র পরিবারের সন্তান আমির ছিলেন বেশ মেধাবী। পড়াশোনার প্রতি ছিল প্রবল ঝোঁক। অনেক কষ্টে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। ভর্তি হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। সফলতার সঙ্গে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেন।

নারী ও শিশুদের নিয়ে কাজ করে এমন একটি এনজিওতে চাকরি শুরু করেন। কিছুদিন পর সেই চাকরি ছেড়ে বার কাউন্সিলের পরীক্ষা দেন। পাস করে শরীয়তপুর জজ কোর্টে শুরু করেন প্র্যাকটিস।

তিনি নিউজবাংলাকে জানান, প্রতিবন্ধী এবং নারী ও শিশুরা আইনি সেবা পেতে অনেক অবহেলার শিকার হন। তাদের পাশে দাঁড়াতেই তার এই পেশায় আসা।

এক সন্তানের বাবা আমির সংসার জীবনেও সুখী।

নড়িয়া উপজেলার উত্তর কেদারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবদুল মালেক। সংগীতের ক্লাস নেন তিনি। গান, কবিতা আর সাহিত্য-সংস্কৃতিতে মাতিয়ে রাখেন ছোটো ছোটো শিক্ষার্থীদের। মনে জ্ঞানের আলো থাকলেও তার চোখে নেই আলো।

আব্দুল মালেক, শিক্ষক, উত্তর কেদারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নড়িয়া। ছবি: নিউজবাংলা 

 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা মালেকের গানের গলা খুব ভালো। জানেন হস্তশিল্প, সঙ্গে আছে প্রযুক্তিগত দক্ষতা।

মালেক বলেন, ‘নিজেকে কখনও প্রতিবন্ধী মনে করিনি। বরং এই প্রতিবন্ধকতাকে শক্তি ভেবে দ্বিগুণ গতিতে এগিয়ে গেছি। যারা বিভিন্ন অজুহাতে নিজেদের আটকে রাখে তাদের জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চেয়েছি।’

জন্ম থেকেই দৃষ্টিহীন শরীয়তপুর সদর উপজেলার দাসার্তা গ্রামের বিল্লাহ হোসেন। ছোটবেলা থেকে ছিল সুরের প্রতি প্রবল টান। গান শিখেছেন শরীয়তপুর শিল্পকলা অ্যাকাডেমিতে।

বিল্লাহ হোসেন, কণ্ঠশিল্পী। ছবি: নিউজবাংলা 

 

দেশের বিভিন্ন জায়গায় গানের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে জিতে নিয়েছেন পুরস্কার। কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলেও গান করে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন বিল্লাল।

নিউজবাংলাকে বিল্লাল বলেন, ‘আমাকে দেখে অনেকেই এখন হতাশা ছেড়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। আমার স্বপ্ন ভবিষ্যতে আরও বড় শিল্পী হব।’

শরীয়তপুরের আরেক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী রফিক মুন্সি। বাঁশির সুরে মানুষকে মুগ্ধ করে তাদের কাছে বিক্রি করেন বাঁশি আর চকলেট।

সদর উপজেলার পালং ইউনিয়নের ভুচুড়া গ্রামে তার বাড়ি। চার বছর বয়সে টাইফয়েড হয়। চিকিৎসার অভাবে দুটি চোখই নষ্ট হয়ে যায়। ২২ বছর বয়সে রফিকের বাবার মৃত্যু হয়। সংসারের ভার পড়ে তার কাঁধে।

বাঁশিওয়ালা রফিক মুন্সি। ছবি: নিউজবাংলা

 

শুরু করেন হাটে বাজারে বাঁশি বাজানো। তার সঙ্গে বিক্রি করেন চকলেট আর বাঁশি। ৪৫ বছর ধরে তিনি এই একই কাজ করছেন। সবার কাছে এখন তিনি পরিচিত ‘বাঁশিওয়ালা রফিক ভাই’ নামে। এলাকার সবাই পছন্দ করেন এই মানুষটিকে।

রফিক জানান, তার খুব ইচ্ছা ছিল পড়ালেখা করার। কিন্তু পরিবারের সেই সামর্থ্য ছিল না। তাই পেশা হিসেবে এমন কাজ বেছে নেন যা তাকে আনন্দও দেবে।

এ বিভাগের আরো খবর