টানা কয়েকদিন থেকে উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামে শীত জেঁকে বসেছে। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বয়ে যাচ্ছে জেলার উপর দিয়ে। মাঝ রাত হতে গুড়িগুড়ি বৃষ্টির মতো কুয়াশা আর উত্তরের হিম ঠান্ডায় চরম ভোগান্তিতে দিন কাটছে নিম্ন আয়ের মানুষজনের।
চলতি বছর এই জেলায় ছোট বড় ছয় দফা বন্যায় ব্যাপক ফসলহানিতে গৃহস্থসহ প্রান্তিক চাষীরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে। বন্যায় আবাদি অনেক কৃষি জমি বালুতে ঢেকে গেছে। নদী ভাঙনের শিকার প্রায় আট হাজার পরিবার রাস্তা, বাঁধ ও বিভিন্ন উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। পুনর্বাসনের প্রহর গুণছেন তারা।
টানা কর্মহীনতা আর চালসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির কারণে অভাব বেড়েছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর। অর্থাভাবে শীতবস্ত্র কিনতে না পেরে শিশু, নারী ও বয়স্ক মানুষরা চরম কষ্টে দিনাতিপাত করছেন।
প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশু-কিশোররা কাজের সন্ধানে ছুটছেন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। ঘনকুয়াশার কারণে শ্রমিক, রিক্সাচালক, কৃষি দিনমুজুরসহ অন্যান্য শ্রমজীবী মানুষ ঠিকঠাক মতো কাজে যোগ দিতে পারছেন না। অর্থাভাবে অনেক পরিবারের সদস্যরা এক কাপড়েই শীত মোকাবিলা করছেন।
শহরের ভেলাকোপা এলাকার শ্রমজীবি নারী বুলবুলি আক্তার জানান, টানা কয়েকদিন ধরে শীত আর ঠান্ডা পড়েছে। কৃষি কাজ করেই সংসার চলে। শীতের কারণে কাজে পড়েছে। আরও দীর্ঘ দিনের বন্যায় গৃহস্থদের আবাদ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কাজও তেমন জোটে না।
‘এখন সংসার চালানো দায় হয়ে পড়েছে। শীতের কাপড় কেনা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। বন্যা, করোনার কারণে সংসারে ভাত-কাপড়ের অভাব যাচ্ছে। শীতের মধ্যে কম্বল না থাকায় বাঁচ্চাদের নিয়া খ্যাতা গাত দিয়া থাকি।’
একই এলাকার হানাগড় বাসিন্দা মোকছেদ আলী (৬৫), আজগর আলী (৫৫) জানান, শীত পর্যায়ক্রমে বাড়ছে। যেভাবে শীত বাড়ছে তাতে করে দুই-এক দিনের মধ্যে শীতের তীব্রতা আরও বেড়ে যাবে। এই ঠান্ডায় বয়স্ক আর শিশুরা ভোগান্তিতে পড়েছে বেশি।
হলোখানা ইউনিয়নের সারডোব এলাকার বাসিন্দা আছিয়া খাতুন বলেন, ‘বন্যার পর থেকেই এক ধরনের অভাব যাচ্ছে আমাদের। এর মধ্যে চালসহ অন্যান্য জিনিসপত্রের দাম বেশি। ঠান্ডা কাপড় কেনার শক্তি নাই। নদী ভাঙা মানুষ কোনো রকমে একনা ছাপড়া তুলে দিন কাটাচ্ছি।’
কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের কালো গ্রামের বাসিন্দা ছকমল মিয়া, শমসের আলী, দিদারুল হোসেনসহ অনেক দিনমজুর জানান, বর্তমানে কাজের খোঁজ নেই বললেই চলে। কাজের ডাক পাওয়ার জন্য প্রতিদিন কাঁঠালবাড়ি বাজারে এসে বসে থাকেন তারা। কিন্তু কাজ মেলে না।
ছকমল মিয়া বলেন, ‘সপ্তাহের দুদিন কাজ জুটলেও বাকি দিন ফাঁকা যাচ্ছে। যেখানে সংসার চালানো দায়, সেখানে শীতের কাপড় কেনা খুব কষ্ট সাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারি কোনো সাহায্য সহযোগিতা পাইনি। পামু কি না জানিনা। যে কাপড় চোপড় আছে তাই দিয়ে শীত পার করা লাগবে।’
জেলা ত্রাণ ও পূণর্বাসন কর্মকতা মো. আব্দুল হাই জানান, জেলার শীতার্ত মানুষের জন্য ১ লাখ কম্বল বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৩৫ হাজার কম্বল পাওয়া গেছে। সেগুলো ৯টি উপজেলায় বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতি উপজেলার জন্য ৬ লাখ টাকা শীতবস্ত্র কেনার জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা বিতরণের প্রক্রিয়া চলছে। শুকনা খাবার হিসেবে ৯ হাজার প্যাকেট মজুদ রয়েছে।