বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

চট্টগ্রামে বন্ধ ৩০ ওষুধ কারখানা

  •    
  • ১১ ডিসেম্বর, ২০২০ ১০:৩৯

উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, কাঁচামাল প্রয়োজন হলেও সেটা ঢাকা থেকে আনতে হচ্ছে। বিপণনও ঢাকা থেকে করতে হয়। সব কার্যক্রম ঢাকাকেন্দ্রিক।

আশির দশকে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বিসিক শিল্প এলাকায় গড়ে ওঠে ওষুধ তৈরির প্রতিষ্ঠান ‘থেরাপিউটিকস বাংলাদেশ লিমিটেড’। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোরশেদ খান প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলতে বিনিয়োগ করেন প্রায় ১০০ কোটি টাকা। ১২ ধরনের ওষুধ তৈরি করত প্রতিষ্ঠানটি।

২০০৪ সালে থেরাপিউটিকসের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। চাকরি হারায় এক হাজারের বেশি কর্মী। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানের কারখানাটি পরিত্যক্ত।

শুধু থেরাপিউটিকস নয়, গত তিন দশকে চট্টগ্রামে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইনের (জিএসকে) ওষুধ কারখানাসহ ৩০টি ওষুধ কোম্পানি বন্ধ হয়ে গেছে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের হিসেব অনুযায়ী, এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়াতে অন্তত চার হাজার কর্মী চাকরি হারিয়েছেন। বিনিয়োগ হাত ছাড়া হয়েছে আনুমানিক ২৫০ কোটি টাকা।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হোসাইন মোহাম্মদ ইমরান নিউজবাংলাকে বলেন, জিএমপি নীতিমালা না মানার কারণে চট্টগ্রামের কিছু প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন বাতিল করা হয়। এ ছাড়া কিছু প্রতিষ্ঠানের ওষুধ বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল। পরে তারা নীতিমালা অনুসরণ করে উৎপাদন আসতে পারেনি। এরপর ধীরে ধীরে এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) গুড ম্যানুফকচারিং প্র্যাকটিস (জিএমপি) নীতিমালা অনুসরণ না করা, প্রশাসনিক জটিলতাসহ একাধিক কারণে কোম্পানিগুলো বন্ধ হয়ে গেছে বলে খাত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

জিএমপি কী জানতে চাইলে হোসাইন মোহাম্মদ ইমরান বলেন, একটি ওষুধ কোন কাঁচামালে উৎপাদন হবে, কী পরিমাণ কাঁচামাল প্রয়োগ করতে হবে, উৎপাদনে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি মান, উৎপাদিন ওষুধের মান ও বিপণন ব্যবস্থা কেমনে হবে – সবকিছুই জিএমপি নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত। চট্টগ্রামে এখন যেসব প্রতিষ্ঠান আছে, তারা জিএমপি নীতিমালা অনুসরণ করে উৎপাদন করছে।

এদিকে কালুরঘাট বিসিক শিল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, থেরাপিউটিকস বাংলাদেশ লিমিটেডের কারখানার প্রধান ফটক পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ভেতরে কারখানার যন্ত্রপাতি পানিতে ডুবে আছে বলে জানিয়েছেন নিরাপত্তারক্ষীরা। জরাজীর্ণ হয়ে গেছে অবকাঠামো।

১৯৮৫ সালে ঢাকা শেয়ার বাজারে থেরাপিউটিকস নিবন্ধিত হয়। ২০১৫ সাল পর্যন্ত শেয়ার বাজারে প্রতিষ্ঠানটি লেনদেন চালু ছিল।

থেরাপিউটিকসের মালিক এম. মোরশেদ খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ব্যবসার জন্য চট্টগ্রাম ভালো জায়গা। থেরাপিউটিকস অনেক ভালো করেছে। তবে একাধিক কারণে এখন বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক কারণও আছে। তবে সবকিছু বলা যাচ্ছে না।’

একই শিল্প এলাকার ম্যাফনাজ ফার্মাসিউটিক্যালস ও নাসিরাবাদ শিল্প এলাকায় সিটি ফার্মাসিউটিক্যালস খোঁজ নিতে গেলে সেখানে প্রতিষ্ঠান দুইটির কোনো অস্তিত্ব মেলেনি।

বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান জিএসকেতে ফার্মাসিস্ট হিসেবে কাজ করতেন তালহা জুবায়ের। প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রায় তিন মাস বেকার ছিলেন জুবায়ের। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হঠাৎ চাকরি চলে যাওয়ায় বিপদে পড়ি। বেকার থাকার পর অনেক কষ্টে নতুন একটি চাকরি হয়েছে। তবে জিএসকের মতো সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছি না।’

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, কাঁচামাল প্রয়োজন হলেও সেটা ঢাকা থেকে আনতে হচ্ছে। বিপণনও ঢাকা থেকে করতে হয়। ওষুধের মান পরীক্ষা, আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়াসহ সব কার্যক্রম ঢাকা কেন্দ্রিক হওয়ার কারণে যে কোনো সমস্যা সমাধানে রাজধানীতে যেতে হয়। চট্টগ্রামে সম্ভাবনা থাকলেও প্রশাসনিক জটিলতায় আটকে আছে ওষুধ খাতটি।

বাংলাদেশ কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস সমিতি চট্টগ্রামের সভাপতি সমীর কান্তি সিকদার নিউজবাংলাকে বলেন, চট্টগ্রাম হচ্ছে ব্যবসায়িক হাব। এখান থেকে রপ্তানি প্রক্রিয়া সহজ। সবমিলিয়ে চট্টগ্রাম ব্যবসায়ীদের জন্য ওষুধ ব্যবসা আশীর্বাদ। কিন্তু চট্টগ্রামে উৎপাদিত ওষুধ এখানে পরীক্ষা করার সুযোগ নেই। এখানকার পরীক্ষাগার দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। রপ্তানি প্রক্রিয়াটিও ঢাকায় করতে হয়। এইসব প্রশাসনিক জটিলতার কারণে এখান থেকে ওষুধ প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসা গুটিয়ে চলে গেছে।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বর্তমানে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, খুলনা, পাবনাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ১ হাজার ৩৩৮টি ছোট-বড় ওষুধ উৎপাদনকারী কারখানা রয়েছে। দেশের চাহিদার ৯৫ শতাংশ মিটিয়ে বিশ্বের ১৬০টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে বাংলাদেশি ওষুধ। পাশাপাশি সরকার ওষুধশিল্পকে আরও এগিয়ে নিতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে।

ওষুধের উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনতে দেশেই কাঁচামাল (এপিআই) উৎপাদনের জন্য দেশে একটি এপিআই পার্ক স্থাপন করা হচ্ছে। এই খাতে ২০২১ সালে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ হাজার কোটি ডলার।

বিশ্বে বর্তমানে ওষুধের রপ্তানি বাজার ১৭০ বিলিয়ন ডলারের। আগামী ১০ বছরের মধ্যে ১০ শতাংশ বাজার ধরা গেলে এ খাতে রপ্তানি আয় দাঁড়াবে ১৭ বিলিয়ন ডলার বা ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলার। এ জন্য সরকারের এই খাতে নজরদারি বাড়ানো এবং ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে আরো শক্তিশালী করার কোনো বিকল্প নেই।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন (জিএসকে), থেরাপিউটিকস বাংলাদেশ লিমিটেড, ম্যাফনাজ ফার্মাসিউটিক্যালস, ইউনাইটেড ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড, সিটি ফার্মাসিউটিক্যালস, স্ট্যান্ডার্ড ল্যাবোরেটরিজ, ইস্টার্ন হার্বাল প্রোডাক্টস ও দেশ ল্যাবরেটরিজ, দামোদর ঔষধালয়, মোহাম্মদিয়া আয়ুর্বেদিক ঔষধালয়, বাংলাদেশ ঔষধালয়, দেশজ ঔষধালয়, তপোবন ঔষধালয়, ভাইটাল ফার্মাসিউটিক্যালস, ফ্লোরা ফার্মাসিউটিক্যালস, বিন্দু মাধব শাহ অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড, শরত রক্ষিত ঔষধালয়, ওরিসন ফার্মাসিউটিক্যালস, জনতা ফার্মাসিউটিক্যালস, শান্তি আয়ুর্বেদীয় ঔষধালয়, এপসিস ফার্মাসিউটিক্যালস, প্রিমিয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, কসমিকো হারবালস লিমিটেড, পিউর ইউনানী ফার্মা, হ্যালিজ ড্রাগ লিমিটেড, শাহ আমানত ইউনানী ড্রাগ ল্যাবরেটরিজ, নিকন ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড, উদয়ন ফার্মাসিউটিক্যালস, ম্যাগ ল্যাবরেটরিজ, পপুলার ইউনাীন ফার্মা।

তবে আশার কথা হচ্ছে, চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত যেসব প্রতিষ্ঠান টিকে আছে তাদের মধ্যে কেউ কেউ ব্যবসা সম্প্রসারণ করছে। বর্তমানে চট্টগ্রামে চালু ওষুধ কোম্পানিগুলো হচ্ছে: ইউনাইটেড কেমিক্যালস অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, অ্যালবিয়ন লাবরেটরিজ লিমিটেড, অরবিট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, রেকিট বেনকিজার বাংলাদেশ লিমিটেড, ফার্মিক ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড, রয়েল ফার্মাসিউটিকালস।

অরবিট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ম্যানেজার মো. ইয়াছিন নিউজবাংলাকে বলেন, ওষুধ ব্যবসায় মূলধন দরকার হয় বেশি। মুনাফা হয় ধীরে ধীরে। কিন্তু চট্টগ্রামের উদ্যোক্তারা আমদানি ব্যবসার ওপর নির্ভরশীল। এজন্য মূলত চট্টগ্রামে ওষুধ ব্যবসা সম্প্রসারণ হচ্ছে না। প্রশাসনিক জটিলতা কিছুটা রয়েছে। তবে এখানকার উদ্যোক্তাদের মনমানসিকতা পরিবর্তন হলে চট্টগ্রামে ওষুধ ব্যবসার সম্প্রসারণ সম্ভব।

এ বিভাগের আরো খবর