বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আসল পোড়াবাড়ির চমচমে চাই ধলেশ্বরীর গরু

  •    
  • ১১ ডিসেম্বর, ২০২০ ০৯:৪৯

টাঙ্গাইলের কারিগরদের দাবি, ধলেশ্বরী নদীর পানি স্বচ্ছ, আর পারে জন্মায় সবুজ ঘাস। দেশি গরুর দল এই ঘাস আর পানি খেয়ে খাঁটি যে দুধ দেয়- তার কোনো তুলনা নেই। এই দুধই পোড়াবাড়ির চমচম সুস্বাদু হওয়ার মূল কারণ।

মিষ্টির ভিতরের অংশ রসালো ও নরম, আর বাইরের দিকটি লালচে পোড়া ইট রঙের। সুস্বাদু এই চমচমের উপরিভাগে ছড়ানো চিনির গুড়ো মুখে এনে দেয় কড়া মিষ্টির স্বাদ।

কী এমন রহস্য আছে পোড়াবাড়ির চমচম ঘিরে অথবা দেশের আর কোথাও কেন মেলে না এমন স্বাদের চমচম- সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে চেয়েছে নিউজবাংলা। আদি কারিগরদের উত্তরসূরিরা জানিয়েছেন, পোড়াবাড়ির চমচমের ইতিহাস আর স্বতন্ত্র স্বাদের কারণ।

টাঙ্গাইল সদর থেকে চার কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে পোড়াবাড়ি গ্রাম। এর কাছেই একটি গ্রাম চারাবাড়ি। চারাবাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ধলেশ্বরী। একসময় এখানে ছিল স্টিমারঘাট। ব্রিটিশ আমলে এখান দিয়েই আসাম, কলকাতা স্টিমার চলাচল করত।

পোড়াবাড়ির মিষ্টির কারিগরেরা সে সময় এই ঘাটেই তৈরি করতেন চমচম। পোড়াবাড়ি এলাকার দেবনারায়ণ গৌড় ও বাঙালি গৌড় (বাঙালি হালুই নামে বেশি পরিচিত) পঞ্চাশ-ষাটের দশকে খুব নাম করেছিলেন চমচম বানিয়ে।

ধীরে ধীরে নদীতে চর পড়ে বন্ধ হয়ে যায় নৌযান চলাচল। আর অস্তিত্ব রক্ষায় চমচম কারিগরেরা ধলেশ্বরীর তীরে ব্যবসা গুটিয়ে চলে যান টাঙ্গাইল শহরের দিকে। এ কারণে পোড়াবাড়িতে এখন চমচমের দোকান নেই বললেই চলে। দুই-একটি দোকান জীর্ণদশা নিয়ে সাক্ষ্য দিচ্ছে অতীতের জমজমাট ইতিহাসের।

চমচমের তীর্থ পোড়াবাড়ি জৌলুস হারালেও এখন জমজমাট টাঙ্গাইল শহরের ‘আসল পোড়াবাড়ির মিষ্টি’!

শহরের নিরালা মোড়ে পাঁচ আনি বাজারে মিষ্টির দোকানগুলোতে সারাদিনই দেখা যায় ক্রেতার ভিড়। এখানকার ১৫ থেকে ২০টি মিষ্টির দোকানের প্রতিটিতেই চলে জমজমাট বিক্রি।

অনেকেই বলেন, দক্ষ কারিগরেরাও টাঙ্গাইলের বাইরে গিয়ে পোড়াবাড়ির ‘আসল’ স্বাদের চমচম বানাতে ব্যর্থ হন। কী এর কারণ- সেই প্রশ্নে চমচমের কারিগরদের অনেকেই বলছেন ধলেশ্বরীর গুরুত্বের কথা।

তাদের দাবি, এই নদীর পানি স্বচ্ছ আর পারে জন্মায় সবুজ ঘাস। দেশি গরুর দল এই ঘাস আর পানি খেয়ে খাঁটি যে দুধ দেয়- তার কোনো তুলনা নেই। এই দুধই পোড়াবাড়ির চমচম সুস্বাদু হওয়ার মূল কারণ।

গৌর ঘোষ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের মালিক স্বপন কুমার ঘোষ নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন চমচম তৈরির পদ্ধতি।

স্বপন ঘোষের দোকানে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ মণ দুধ সংগ্রহ করা হয়। প্রতি রাতে সেই দুধ চুলায় জ্বাল দিয়ে পাওয়া যায় প্রায় ১০০ কেজি ছানা। এই ছানা দিয়ে তৈরি হয় ৩০০ কেজি চমচম। সেই সঙ্গে আরো ৭/৮ কেজি দুধ লাগে মাওয়া তৈরিতে। মাওয়াকে স্থানীয় ভাষায় বলা হয় ক্ষীর। দুধ অতিরিক্ত জ্বাল দিয়ে শুকিয়ে মাওয়া তৈরি করা হয়।

চমচম তৈরির প্রণালি জানিয়ে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রথমে ছানা গোল করে মিষ্টির আকার দেয়া হয়। এরপর গঠন শক্ত করতে কিছু সময় রেখে কড়া চিনির সিরায় ঢেলে মিষ্টি আকৃতির ছানা ভাজা হয়। প্রায় ৪৫ মিনিট ফুটন্ত সিরায় ভেজে ঠান্ডা করা হয়, এরপর মাওয়ায় জড়িয়ে নিলেই তৈরি হয়ে যায় সুস্বাদু চমচম। ’

‘নকল পোড়াবাড়ির চমচম’ নিয়ে সতর্ক করে স্বপন বলেন, ‘এখন টাঙ্গাইলে পোড়াবাড়ির চমচমের নাম বলে অনেক দোকান গড়ে উঠেছে। কিন্তু আসলে সেগুলোর ছানা আসে পাবনা অঞ্চল থেকে। ফলে এসব দোকানের চমচমের মান খুবই কম।’

টাঙ্গাইলের বাইরের জেলার ছানা দিয়ে তৈরি চমচম ১২০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানান স্বপন ঘোষ। তিনি বলেন, ‘আমরা যারা আদি ব্যবসায়ী আছি তারা চমচমের মান ধরে রাখতে পূর্ব পুরুষদের পথেই হাঁটছি। এজন্য আমাদের চমচমের দাম প্রতি কেজিতে ২২০-২৫০ টাকা রাখতে হচ্ছে।’

এ বিভাগের আরো খবর