পদ্মা সেতু নিয়ে সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইনের মূল্যায়ন এই সেতুতে লাগামহীন দুর্নীতি হয়েছে। দুর্নীতি বন্ধ করতে না পারলে উন্নয়নের সুফল পাবে না জনগণ।
তবে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সিলেটের নেতা শফিউল আলম নাদেল মনে করেন, নিজ অর্থায়নে এই সেতু নির্মাণ বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম বড় সাফল্য।
পদ্মা সেতুর সব কটি স্প্যান বসে যাওয়ায় দেশের সবচেয়ে বড় সেতুটি যখন দৃশ্যমান তখন, সিলেটে দুই প্রধান দলের মূল্যায়ন ভিন্ন।
এই সেতুটির কাজ শুরুর আগ থেকেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে বাদানুবাদ বিতর্ক ছিল তুঙ্গে। বিশ্বব্যাংক দুর্নীতি চেষ্টার অভিযোগ তোলার পর বিএনপির পক্ষ থেকে আক্রমণের পর আক্রমণ হয়েছে। তখন আওয়ামী লীগ নেতারা অনেকটাই ছিলেন রক্ষণাত্মক অবস্থানে।
তবে ২০১৭ সালে কানাডার আদালত বিশ্বব্যাংকের অভিযোগকে গালগপ্প বলে উড়িয়ে দেয়ার পর পাল্টে যায় পরিস্থিতি। আওয়ামী লীগ নেতারা বিশ্বব্যাংকের পাশাপাশি তাদের সমালোচনা করে আসা বিএনপিরও কঠোর সমালোচনা করতে থাকে। আর বিএনপি নেতারা চলে যান রক্ষণাত্মক অবস্থানে।
সেতুর পুরোটা দৃশ্যমান হওয়ার পর সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতির কাছে মূল্যায়ন জানতে চায় নিউজবাংলা।
তিনি বলেন, ‘আরও আগেই সেতুর কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কয়েক দফা সেতুর কাজের সময় বাড়ানো হয়েছে। নির্মাণ ব্যয়ও বেড়েছে কয়েক দফা। এই সেতু নির্মাণ নিয়ে লাগামহীন লুটপাট হচ্ছে। সব উন্নয়ন কাজেই লুটপাট হচ্ছে। ফলে সেতু নির্মাণ করে দেশের যে উন্নয়ন হবে লুটপাট করে তার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। লুটপাট-দুর্নীতি বন্ধ করতে না পারলে এসব উন্নয়ন কোনো কাজে আসবে না।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম নাদেল বলেন, ‘এই সেতু যাতে না হয়, সেজন্য দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবিচল ছিলেন। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন- ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে দমানো যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের পাশপাশি বহির্বিশ্বেও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উন্নত হবে। বাংলাদেশ চ্যালেঞ্জ নিলে যে জিততে পারে তার প্রমাণ পদ্মা সেতু।’
বিতর্ক আর চাপ উপেক্ষা করে সেতুর কাজ এগিয়ে নেয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বড় সফলতা বলে মনে করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘নানা বিতর্কের পর প্রধানমন্ত্রী এই চ্যালেঞ্জটি নিয়েছিলেন। তিনি চ্যালেঞ্জে বিজয়ী হয়েছেন। এর মাধমে প্রমাণ হয়েছে আমরা যে কোনো চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলে তাতে জয়ী হতে পারি।’
ফারুক মাহমুদ বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশে অবকাঠামোগত অনেক উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা তার সুফলও ভোগ করছি। এ জন্য সরকারের ধন্যবাদ প্রাপ্য। একই সঙ্গে মানবউন্নয়নে আমরা পিছিয়ে পড়ছি। শিক্ষার হার বাড়লেও মানুষের রুচি ও সংস্কৃতিবোধ বাড়ছে না। দুর্নীতি বাড়ছে। ধর্মচর্চা বাড়ছে কিন্তু ধর্মের নীতিকথা কেউ অনুসরণ করছে না।
‘সম্প্রীতির ঐতিহ্য ভুলে সংঘাতের দিকে ঝুঁকছি আমরা। সবমিলিয়ে জীবনবোধের একটা সংকট তৈরি হয়েছে। এসব থেকে উত্তরণে মনোযোগী হতে হবে। কেবল অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে আধুনিক ও উন্নত রাষ্ট্রগঠন সম্ভব নয়।’