বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘জোড়াতালির পদ্মা সেতু’ নিয়ে খালেদার বক্তব্য ফের ভাইরাল

  •    
  • ১০ ডিসেম্বর, ২০২০ ১৭:১৭

২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি ছাত্রদলের এক আলোচনায় বিএনপি নেত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতুর স্বপ্ন দেখাচ্ছে সরকার। কিন্তু পদ্মা সেতু আওয়ামী লীগের আমলে হবে না। এ সেতু জোড়াতালি দিয়ে বানানো হচ্ছে। এ সেতুতে কেউ উঠবেন না। অনেক রিস্ক আছে।’

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকেই তুমুল আলোচনা পদ্মা সেতু নিয়ে। দুই বছর পর বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ঋণচুক্তি করার পর থেকে এক দিনে তৈরি হয় আশাবাদ তেমনি বিশ্বব্যাংক দুর্নীতি চেষ্টার অভিযোগ তোলার পর শুরু হয় রাজনৈতিক আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ।

২০১৭ সালে কানাডার আদালত দুর্নীতির চেষ্টার অভিযোগকে ‘গালগপ্প’ বলে উড়িয়ে দেয়ার আগ পর্যন্ত সরকারকে দুর্নীতির অভিযোগের জবাব দিতে হতে থাকে।

বিএনপির পক্ষ থেকে বরাবরই বলে আসা হয়েছে, পদ্মা সেতু করতে পারবে না আওয়ামী লীগ। তবে সবচেয়ে আলোচিত সমালোচিত বক্তব্যটি আসে বিরোধী দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কাছ থেকে।

 

২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি ছাত্রদলের এক আলোচনায় বিএনপি নেত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতুর স্বপ্ন দেখাচ্ছে সরকার। কিন্তু পদ্মা সেতু আওয়ামী লীগের আমলে হবে না। এ সেতু জোড়াতালি দিয়ে বানানো হচ্ছে। এ সেতুতে কেউ উঠবেন না। অনেক রিস্ক আছে।’

পদ্মা সেতুতে বসছে শেষ স্প্যান। ছবি: নিউজবাংলা

পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যানটি বসানোর পর এই বক্তব্যের ভিডিওটি আবার ভাইরাল হয়েছে সামাজিক মাধ্যমে। সরকারপন্থিরা বিএনপি নেত্রীকে কটাক্ষ করে বক্তব্য রাখছেন। যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য আসেনি।

দুই বছর আগে অবশ্য এই বক্তব্য নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া পাল্টা প্রতিক্রিয়া হয়েছে।

খালেদা জিয়া এই বক্তব্য দেয়ার চার দিন পর গণভবনে ছাত্রলীগের এক অনুষ্ঠানে এই বক্তব্যের জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘আজকে পদ্মা সেতু তৈরি হচ্ছে, সেটা নাকি জোড়াতালি দিয়ে! হ্যাঁ, একদিক দিয়ে ঠিক। যেহেতু এক একটা পার্ট তৈরি করে একেকটা বসায়। যার এইটুকু জ্ঞান নেই, একটা জিনিস নির্মাণ করতে হলে কীভাবে কী পদ্ধতিতে করতে হয়, যার মাথায় ওই টুকু ঘিলু নাই। উনার মাথায় যে ঘিলু আছে সেটা কিসের? চুরি করা, টাকা বানানো, এতিমের টাকা খাওয়া, মানুষ পোড়ানো, মানুষ মারা…।’

প্রধানমন্ত্রী কথা বলেন জাতীয় সংসদেও। সেখানে বিএনপি নেত্রীকে ‘পাগল’ বলে মন্তব্য করেন।

বিএনপির পক্ষ থেকে আবার জবাব দেয়া হয় ১২ জানুয়ারি। বিষয়টি নিয়ে সংসাদ সম্মেলন করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি তার নেত্রীর বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, খালেদা জিয়া ভুল বলেননি।

ফখরুল সেদিন বলেন, পদ্মাসেতু টিকবে না। তার বক্তব্যটা ছিল এমন- ‘একটা ভ্রান্ত ও ভুল ডিজাইনের উপরে পদ্মাসেতু নির্মিত হলে সেটা যে টিকবে না, সেটা তো উনি (খালেদা জিয়া) ভুল বলেননি। বরং তিনি সাচ্চা দেশপ্রেমিকের কাজ করেছেন। তোমরা এখনও এলার্ট হও, চেঞ্জ দ্য ডিজাইন এবং সেটা সঠিকভাবে নির্মাণ হতে হবে।’

ফখরুল বলেন, ‘এটা সত্য প্রমাণিত হয়েছে যে, পদ্মা সেতু একটা রং ডিজাইনের উপরে নির্মিত হচ্ছে। এটা আমাদের কথা নয়, এটা বিশেষজ্ঞদের কথা। তারা বলছেন, ড্রিল মেশিন যে পর্যন্ত যায়, তার অনেক নিচে দেওয়া দরকার ছিল। এখন যে নকশা করা হয়েছে যার ভিত্তিতে দুইটা পিলার নির্মাণ করতে পেরেছে-এটা ঠিকই আছে। বাকীগুলো টিকছে না। কারণ স্লাইডিং মাড নিয়ে চলে যাচ্ছে। ফলে ওখানে পিলার দাঁড় করানো সম্ভব হচ্ছে না। এটা আপনার ইঞ্জিনিয়ারদের কথা।’

সেতুর কাঠামো পুরোপুরি দাঁড়িয়ে যাওয়ার পর বিএনপির পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো বক্তব্য আসেনি।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান বিএনপি ছাড়াও অর্থনীতিবিদদের একাংশের বিরোধিতার বিষয়টি নিয়েও কথা তুলেছেন। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘অনেকেই তখন বলেছিল আমাদের অর্থনীতি এ সেতুর নির্মাণব্যয়ের চাপ নিতে পারবে না। বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ পেলে হয়তো ভালো হতে। কিন্তু আমরা নিজস্ব সক্ষমতায় যে সেতু নির্মাণ করেছি, এটা আমাদের সক্ষমতাই নির্দেশ করে।’

সেতু নির্মাণের কৃতিত্ব এককভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেই দিতে চান আওয়ামী লীগের এ নেতা। তিনি বলেন, ‘সে সময় দলের ভেতরেও অনেকে বলেছিল, এ সেতু করা যাবে না। কিন্তু শেখ হাসিনা দেখিয়েছেন দেশপ্রেম আর মানুষের প্রতি ভালোবাসা থাকলে অনেক কঠিন কাজ কত সহজেই করা যায়।’

পাঁচ বছরের কাজ শেষে পূর্ণাঙ্গ রূপ পেল পদ্মা সেতু। ছবি: নিউজবাংলা

পদ্মা সেতুতে শেষ স্প্যান বসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘একমাত্র শেখ হাসিনার দৃঢ়তার কারণেই এ সেতু বাস্তবরূপে আসছে। এটা বাংলাদেশের মানুষের জন্য মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর উপহার।’

১৪ দলের আরেক শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ যে স্বাবলম্বী, তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে এই পদ্মা সেতু। এ সেতু বিদেশ নির্ভরতার বদলে স্বাবলম্বীতার ভিত্তিতে অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের যুগান্তকারী উদ্যোগ। বঙ্গবন্ধু যেমন স্বাধীন দেশ দিয়েছেন, ঠিক তেমনি শেখ হাসিনা আমাদের দিয়েছেন স্বাবলম্বী হওয়ার আত্মবিশ্বাস। আমরাও যে পারি, পদ্মা সেতু সেই সাক্ষরই বহন করছে।’

পদ্মা সেতু প্রকল্প যে সময় নিজস্ব অর্থায়নে করার সিদ্ধান্ত হয়, সে সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ছিলেন আতিউর রহমান। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পদ্মা সেতু নির্মাণের পুরো কৃতিত্ব আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেই দেব। সে সময় তার মন্ত্রিসভার অনেকেই এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিল। কিন্তু তিনি সাহস আর দৃঢ়তার সাথে এটি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নেয়। এটি ছিল তার এক দূরদর্শী সিদ্ধান্ত যার সুফল খুব সহজেই আমরা পাবে।’

বাংলাদেশ ব্যংকের সাবেক এ গভর্নর বলেন, ‘এত কঠিন প্রকল্প হাতে নেয়ার ফলে অন্য মেগা প্রকল্পগুলো করার সাহসও কিন্তু আমরা পেয়েছি। এটা শুধু যে আমাদের সক্ষমতা বাড়িয়েছে তাই নয়, বরং আমাদের আত্মবিশ্বাসও কিন্তু এর মধ্য দিয়ে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।’

 

বৃহস্পতিবার শেষ স্প্যানটি বসানোর মাধ্যমে দৃশ্যমান হয়েছে সেতুর ৬.১৫ কিলোমিটারের পুরো কাঠামো। আগামী এক বছরের মধ্যে সেতুর নির্মাণ শেষে যান চলাচল শুরু হবে বলে আশা করছে সরকার।

বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে প্রকল্প থেকে সরে যাওয়ায ২০১৪ সালে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর পাইলিং এর কাজ উদ্বোধন করেন তিনি

এতে মোট খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। সেতুতে একই সাথে সড়ক ও রেলযোগাযোগ স্থাপন করা হবে।  

এ বিভাগের আরো খবর