বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

যেসব কারণে বেড়েছে পদ্মা সেতুর ব্যয়

  •    
  • ১০ ডিসেম্বর, ২০২০ ১৫:৫৯

শুরুতে পরিকল্পনা ছিল এক তলা সেতুর। পরে রেল সংযুক্ত হয়। মাঝ নদীতে ১৪টি পিলারের নিচে একটি করে পাইল বেশি বসাতে হয়েছে। জমি অধিগ্রহণও করতে হয়েছে প্রাথমিক পরিকল্পনার দ্বিগুণ।

পাঁচ বছরের চেষ্টায় শেষ হলো পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামোর নির্মাণ কাজ। আর এক বছরের মধ্যেই শুরু হবে যান চলাচল। এর মধ্য দিয়ে ঢাকার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে বিচ্ছিন্ন দক্ষিণাঞ্চলের জনপদ। পদ্মা সেতুকে বাস্তব রূপ দিতে সরকারের মোট ব্যয় হচ্ছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।

পদ্মা সেতুর স্বপ্নের বুনন হয়েছিল ২০০৭ সালে। তখন রাষ্ট্র ক্ষমতায় সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তাদের আমলে সেতু নির্মাণে ১০ হাজার ১৬১ কোটি ৭৫ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয় একনেক। যদিও বিপুল এই কর্মযজ্ঞের কিছুই শুরু করতে পারেনি তারা।

তখন সেতুর পরিকল্পনা ছিল এক তলা ঢালাইয়ের সড়ক সেতু করার। যদিও পরে স্টিল স্ট্রাকচার্ড দুই দলা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

পরে সেতুর নকশা যেমন পাল্টেছে, তেমনি জমি অধিগ্রহণ, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের নীতিমালাও পাল্টেছে। দাম বেড়েছে নির্মাণ সামগ্রীরও। এসব কারণে প্রকল্প ব্যয়ও বেড়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. শামসুল আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘২০০৭-০৮ সাল থেকে আজকে ২০২০ সাল। প্রতিটি জিনিসের দাম কয়গুণ বেড়েছে, সেটা হিসেব করে দেখেন তো! প্রতি পাঁচ বছরে সব জিনিসের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। আমাদের দেশে মূল্যস্ফীতি তাই দেখিয়েছে। ২০০৭-০৮-০৯ থেকে যদি শুরু হয়ে থাকে, ২০২০ সালে এসে এটার আনুপাতিক ব্যয় তো বাড়তেই হবে। এটা যুক্তিসঙ্গত।’

পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. শামসুল আলম

২০০৯ সালে ভূমিধস বিজয় নিয়ে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণে দায়িত্ব বুঝে নিয়েই পদ্মা সেতুর নকশা প্রণয়নে পরামর্শক নিয়োগ দেয় তারা।

ক্ষমতা গ্রহণের দুই বছরে পা রেখেই দক্ষিণাঞ্চলের মানুষকে নতুন স্বপ্ন দেখায় সরকার। পদ্মা সেতুতে যুক্ত করা হয় রেলপথ। ফলে প্রথম দফায় সংশোধন করা হয় পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয়। তখন প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে যায় সেতু নির্মাণের খরচ।

২০১১ সালে একনেকে সংশোধিত প্রকল্পে এই ব্যয় দাঁড়ায় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি ২০ লাখ টাকায়। এই প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. শামসুল আলম বলেন, ‘রেল সংযুক্ত হলো সেটাও তো একটা নতুন মাত্রা। এর জন্যও খরচ অনেক বেড়েছে। ফলে ব্যয় বৃদ্ধিটা যৌক্তিক এবং সঙ্গত।’

৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার বলা হলেও, পদ্মা সেতুর প্রকৃত দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৩০ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার পদ্মার ওপর ৪১টি স্প্যান দিয়ে যুক্ত। আর বাকিটা ডাঙায়, যা তৈরি করা হচ্ছে রড–কংক্রিট দিয়ে। এটি ভায়াডাক্ট নামে পরিচিত।

সেতু নির্মাণে নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে কর্তৃপক্ষকে। নদীর তলদেশের মাটির জটিলতার কারণে মাঝ নদীতে ১৪টি পিলারের নিচে একটি করে পাইল বেশি বসাতে হয়েছে। যুক্তরাজ্যের একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করে পিলার জটিলতা নিরসন করা হয়। আর তাই নকশা সংশোধনও করতে হয়েছে। কিন্তু পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ও বাড়তি পাইলের খরচ আগের হিসাবে ছিল না।

ফলে নানা দিক বিবেচনায় রেখে, ২০১৬ সালে আবার আট হাজার ২৮৬ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ে এই সেতুর। তাতে নির্মাণ ব্যয় হয় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।

সবশেষ, ২০১৮ সালের জুনে আর বেশি জমি অধিগ্রহণের কারণে তৃতীয় দফায় সেতুরটির ব্যয় বাড়ে এক হাজার চারশ কোটি।

 

সেতু বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মূল ডিপিপিতে এক হাজার ৫৩০ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ব্যয় ধরা হয় এক হাজার ২৯৯ কোটি টাকা। কিন্তু দেখা গেল, পৃথিবীর বহুল আলোচিত এই সেতু নির্মাণে ভূমি অধিগ্রহণ করতে হয় দুই হাজার ৬৯৮ হেক্টর। অতিরিক্ত জমি অধিগ্রহণের ফলে এই ব্যয় দাঁড়ায় দুই হাজার ৬৯৯ কোটি টাকায়।

সব মিলিয়ে পদ্মা সেতুর মোট ব্যয় দাঁড়ায় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। পদ্মা বহুমুখী সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, কাজ শেষ হতে আরও বছর খানেক সময় লাগলেও ব্যয় আর বাড়বে না।

নিউজবাংলাকে শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকার আমাদের যে অনুমোদিত ডিপিপি (ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রোফাইল) আছে, আমরা এর মধ্যেই ইনশাল্লাহ থাকব আশা করছি। এখন পর্যন্ত আমাদের কোনো ইনডিকেশন নেই এই খরচ এর থেকে বাড়বে।’

কয়েক দফা ব্যয় বাড়ানোর কারণ জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘আগে কীভাবে (ব্যয় নির্ধারণ) করেছে সেটা আমার জানা নেই। তখন আমি ছিলাম না। দ্বিতীয় দফাতেও যখন ব্যয় বাড়ানো হয়, সেটাও আমার জানা নেই। আমি তখনও ছিলাম না।’

তার দাবি, তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর উন্মুক্ত টেন্ডার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে এই ব্যয়।

‘শেষ পর্যন্ত ৩০ হাজার কোটি টাকা হলো, সেটা আমি নিয়েছি ঠিকাদারদের কাছ থেকে। এর আগে ছিল অনুমাননির্ভর। আমরা ওপেন টেন্ডার করেছি। সেখানে ঠিকাদারের কাছ থেকে যে সর্বনিম্ন দর পেয়েছি, সেই অনুযায়ী আমি ডিপিপি বানিয়েছি। এখন পর্যন্ত সেটার কোনো চেঞ্জ নাই।’

শফিকুল আরও বলেন, তার দায়িত্ব গ্রহণের পর ডিপিপিতে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। করার প্রয়োজনও আর পড়বে না।

‘আগেরগুলো ছিল অনুমান নির্ভর। যেহেতু তখন আমি ছিলাম না, সে বিষয়ে আমি বলতে গেলে জবাবদিহিতা পুরোপুরি সঠিক হবে না। আমার ধারণা, তখন যেহেতু ডিজাইন, ড্রয়িং কোনো কিছু ফাইনাল হয়নি, তখন একটা কিছু অনুমান করেছিল।’

পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. শামসুল আলম বলছেন, বাজার দরের ভিত্তিতেই ব্যয় নির্ধারণ করা হয়।

‘বাজার দর যদি বেড়ে যায়, সেখানে ব্যয় তো বাড়বেই। ব্যয় বাড়ার ফলে আমি অস্বাভাবিক কিছু দেখি না এবং সময় গেলে ব্যয় বাড়বে সকল কিছুতেই। আমার বেতন ২০০৭-০৮ সালে যা ছিল, সেই বেতন তো এখন চার-পাঁচ গুণ বেড়ে গেছে। ব্রিজের ক্ষেত্রে ২০০৭ সালে আটকে থাকব সেটা কি হয়?’

 

ব্যয় বাড়ার যৌক্তিকতা প্রমাণে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘আজকে ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৫ বছরে। তার মানে তিনগুণ বেড়েছ। আর এই সময়ের মধ্যে জিনিসপাতির দামও প্রায় তিন-সোয়া তিন গুণ বেড়েছে। তাহলে, পদ্মা সেতুতে আপেক্ষিকভাবে বেশি বাড়ল কোথায়?’

পদ্মা সেতুর ব্যয় নিয়ে যারা সমালোচনা করে, ‘তারা কিছু না ভেবে উসকানি দেয়ার চেষ্টা করে’ বলেও মন্তব্য করেন পরিকল্পনা কমিশনের এই সদস্য।

পদ্মা সেতু নির্মাণে কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। আর নদী শাসনের কাজ পেয়েছে ওই দেশটির আরেক প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো করপোরেশন। কাজ শুরু করতে প্রতিষ্ঠান দুটিকে চিঠি দেয়া হয় ২০১৪ সালের নভেম্বরে। চার বছরের মধ্যে অর্থ্যা‌ৎ ২০১৮ সালে কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু নদীর গঠন প্রকৃতি, নকশা পরিবর্তন, বন্যা, নদী-ভাঙন এসব মিলিয়ে কাজ পিছিয়ে যায়। এটিও ব্যয় বাড়ার বড় কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এ বিভাগের আরো খবর