বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিশ্ব অবাক তাকিয়ে রয়

  •    
  • ১০ ডিসেম্বর, ২০২০ ১১:০৭

বসে গেল শেষ স্প্যানটি। এর মধ্য দিয়ে প্রমত্তা পদ্মার বুকে দৃশ্যমান হলো ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু।

দুর্নীতিচেষ্টার অভিযোগ এনে বিশ্বব্যাংকের মুখ ফিরিয়ে নেয়া, রাজনৈতিক বাদানুবাদ, গুজবকে ছাপিয়ে স্বপ্ন হলো সত্যি। প্রমত্তা পদ্মার বুকে দৃশ্যমান হলো ৬.১৫ কিলোমিটারের পূর্ণাঙ্গ সেতু। বিশ্বকে অবাক করে দিয়ে গৌরবের অংশ হলো বাংলাদেশ।

বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ৮ মিনিটে শেষ স্প্যানটি বসে। এরপর চলে দীর্ঘকায় ক্রেন থেকে সেটিকে বিচ্ছিন্ন করার কাজ। পরে শুরু হয় ওয়েল্ডিংয়ের কাজ, যার মধ্য দিয়ে নিখুঁতভাবে যুক্ত হবে ৪০ ও ৪১ নম্বর প্রান্ত। সেটি শেষ হতে অন্তত সাত দিন সময় লাগে বলে জানিয়েছেন নির্মাণশ্রমিকরা।

 

এর আগে সকাল থেকে তীব্র কুয়াশায় আচ্ছন্ন ছিল চারপাশ। মাঝনদীতে কুয়াশা ছিল বেশি ঘন। কারিগরি দিক থেকে সেতু কর্তৃপক্ষ প্রস্তুত থাকলেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে কিছুটা অনিশ্চয়তা দেখা দেয়।

তবে দমবার পাত্র ছিলেন না প্রকৌশলী আর নির্মাণশ্রমিকরা। সময় তখন সকাল ১০টা। বিকট শব্দের সাইরেন বাজিয়ে ক্রেনটি জানান দেয়, শুরু হলো স্প্যান বসানোর কাজ।

কুয়াশার চাদর ভেদ করে স্প্যান নিয়ে ধীর লয়ে এগোতে থাকে ক্রেন। ক্রমশ দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু। প্রায় ঘণ্টাখানেকের চেষ্টায় ১৫০ মিটার দীর্ঘ ৪১ নম্বর স্প্যান যুক্ত করল পদ্মা সেতুর ১২ ও ১৩ নম্বর পিলারকে। রচিত হলো বাংলাদেশের আরেক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস।

সেতু নির্মাণকাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিজয়ের মাসে বাংলাদেশ তার সক্ষমতা তুলে ধরল বিশ্ববাসীর কাছে। বুধবারই স্প্যান নিয়ে আসা হয় পদ্মা সেতুর নির্ধারিত পিলারের কাছে। আনার আগে স্প্যানটি সাজানো হয় বাংলাদেশ ও চীনের পতাকা দিয়ে।

স্প্যানের গায়ে চীনা ও বাংলা হরফে লেখা ছিল, ‘কয়েক বছরের প্রচেষ্টায় দেশি ও বিদেশি শ্রমশক্তির মাধ্যমে স্বপ্নের পদ্মা সেতু আজ বাস্তবায়নের পথে। সেতুর ৪১টি ইস্পাতের তৈরি স্প্যান সোনার বাংলার উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলকে সংযুক্তির মাধ্যমে চীন ও বাংলাদেশের বন্ধুত্বের বন্ধনকে অটুট রাখবে।’

তবে শেষ স্প্যান বসানো উপলক্ষে সেতু কর্তৃপক্ষের বাড়তি কোনো আয়োজন ছিল না। উল্টো জমায়েত এড়াতে কড়াকড়ি আরোপ করেছে প্রশাসন। তিন হাজার ২০০ টন ওজনের একেকটি স্প্যান কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে সেতু পর্যন্ত টেনে নিতে কাজে লাগানো হয় তিন হাজার ৭০০ টনের বিশাল একটি ক্রেন।

এত শক্তিশালী ক্রেন দুনিয়াতে আছে অল্প দুই একটিই। পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. শামসুল আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিজয়ের মাসে স্বাধীনতার পর এটি আমাদের আর একটি উজ্জ্বল ঐতিহাসিক বিজয়। এ বিজয় হলো আমাদের অনমনীয়তার। এ বিজয় হলো, আমরা যে করতে পারি, সে সক্ষমতা প্রমাণের বিজয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই সেতু বাংলাদেশের অর্থনীতিকে বড় রকমের নাড়া দেবে। ইতিবাচক পথে নিয়ে যাবে দেশের অর্থনীতিকে। দেশজ সম্পদে যে করতে পারলাম, এটা আমাদের সক্ষমতা প্রমাণ করল।’

 

ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে পদ্মা সেতুর কাঠামো। সেতুর উপরের অংশে যানবাহন ও নিচ দিয়ে চলবে ট্রেন।

সম্প্রতি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, সেতুকে যানবাহন চলাচলের উপযোগী করতে সময় লাগবে আরও ১০ থেকে ১২ মাস।

পদ্মা বহুমুখী সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলামও বললেন একই কথা। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমাদের সেতুর মূল কাঠামো হয়ে গেল। সুসম্পন্ন করতে আমাদের সময় লাগবে।’

দ্বিতল এই সেতুতে বেশ জোরেশোরে চলছে সড়ক ও রেলপথে তৈরির কাজ। প্রথম তলায় চলছে রেলপথ নির্মাণের কাজ আর উপর তলায় চলছে সড়ক নির্মাণের কাজ। বিরামহীন খেটে যাচ্ছেন দেশি-বিদেশি নির্মাণ শ্রমিকরা।

সড়কপথ ও রেলপথ নির্মাণের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘মূল কাজ হলো রোডওয়ে স্ল্যাব বসানো। আমরা ৪০ শতাংশের বেশি কাজ করেছি। ৬০ শতাংশের কাছাকাছি বাকি আছে।

‘রেলওয়ে স্ল্যাব ৬০ শতাংশ করেছি, ৪০ শতাংশ বাকি আছে। আমাদের গ্যাস সংযোগের পাইপলাইন এখনও বসানো হয়নি।’

তবে যত দ্রুত সম্ভব এই সেতুর কাজ সম্পন্ন করার বিষয়ে চেষ্টার ত্রুটি নেই বলেও জানান প্রকল্প পরিচালক।

এই সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৪ সালের ৭ ডিসেম্বর। আর ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর ভিত্তি স্থাপন করেন। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারে প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু।

২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তের ৩৫ ও ৩৬ নম্বর পিলারের ওপর ধূসর রঙের সপ্তম স্প্যান বসানোর পর সেতুর এক কিলোমিটার দৃশ্যমান হয়।

 

শুরুতে তিন চার মাস পরপর স্প্যান বসানো হত। তবে ২০১৮ সাল থেকে বদলে যায় পরিস্থিতি। প্রতি মাসে একাধিক স্প্যান বসাতে সক্ষম হয় সেতু নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান। আর ৪১ নম্বর স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে শেষ হলো পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামোর নির্মাণ কাজ।

মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন।

শুরুতে এই মহাপ্রকল্পের নির্মাণের ব্যয় ধরা হয় ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। তবে তিন ধাপে বাড়ানো হয়েছে প্রকল্প ব্যয়। শেষ পর্যন্ত ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকারও বেশি।

এ বিভাগের আরো খবর