বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

খালের বুকে গরুর খামার

  •    
  • ৯ ডিসেম্বর, ২০২০ ২২:২৮

ঢাকা মহানগর এলাকায় ৭৫ টি খাল ছিল। ঢাকাকে ঘিরে রাখা বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও টঙ্গী নদীর সংযোগ স্থাপনকারী ১৭টি খালও হারিয়ে গেছে।

রাজধানীর হাজারীবাগের বাসিন্দা আব্দুর রহিমের জন্ম দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে। বাড়ির পাশের কালুনগর খাল ঘিরে তার অনেক স্মৃতি। এক সময় খালে গোসল করতেন। প্রতিদিন মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করতেন।

কিন্তু খালটি অপরিকল্পিত নগরায়ণের বলি হয়েছে। দখল ও ভরাটে খালটি অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে। এই হাল শুধু কালুনগর খালের নয়, ঢাকার অধিকাংশ খালের।

 

 

স্থানীয় বাসিন্দারা নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন, হাজারীবাগ স্ল্যুইচগেট থেকে কালুনগর খালটি বুড়িগঙ্গার সোয়ারিঘাট পর্যন্ত প্রায় ৩.৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ছিল। ধীরে ধীরে খালটি প্রভাবশালীদের দখলে চলে যায়। খাল ভরাট করে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়। গড়ে ওঠে কলকারখানা। ১০০ ফুট প্রস্থ খালটি এখন বড়জোর ১০ ফুটে পরিণত হয়েছে। ইতিমধ্যে খালে ম্যাপও পরিবর্তন হয়ে গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, হাজারীবাগ স্ল্যুইচগেট থেকে প্রায় ১০০ গজ পশ্চিমে খালটি ঘেঁষে বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। এর পেছনে খালের বুকে একটি গরুর খামার। সেখানে ৩০-৪০টি গরু রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক জন বাসিন্দা নিউজবাংলাকে বলেন, খাল ভরাট করে বছর দুই আগে গরুর এই খামার করা হয়। খামারের ময়লা-আবর্জনা পাইপের মাধ্যমে খালে ফেলা হয়।

আব্দুল মজিদ নামের আরেক জন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ২০ থেকে ২৫ বছর আগেও মানুষ এই খালে নৌকা ও জাহাজে করে সদরঘাট যাওয়া আসা করত। এখন সেটা ময়লা আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। আস্তে আস্তে বাড়িঘর নির্মাণ করা হয়েছে। বিভিন্ন কোম্পানি কারখানা নির্মাণ করেছে। মাটি ও বালু ফেলে খালটি ভরাট করে এখনও চলছে শিল্পকারখানা নির্মাণ।  

তিনি আরও বলেন, আগে খালের পানি অনেক পরিষ্কার ছিল। তারা অনেকেই এখানে মাছ ধরেছেন। কিন্তু সেই খাল এখন আর নেই। খালটি মেরে ফেলা হয়েছে।

 

সিটি করপোরেশন কিছু দিন আগে একবার খালটি পরিষ্কার করেছিল। এর কিছু দিনের মধ্যে খালটি আবার ময়লার ভাগাড় হয়ে ওঠে। খালে এখন পানির কোনো চিহ্ন নেই। খালের জায়গা দখল করে ১০ তলা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে।

মজিদ আরও বলেন, অভিযোগ পেয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা এই ভবন পরিদর্শনে এসেছেন। কিন্তু তাদের ম্যানেজ করে এই ভবন নির্মাণের কাজ অব্যাহত আছে। এমনকি সিএস নকশা পরিবর্তন করা হয়েছে।

আতিকুল ইসলাম নামের আরেক জন বাসিন্দা বলেন, পাকিস্তান আমল থেকে তিনি এখন খালের পাশেই বসবাস করে আসছেন। তিনি বলেন, খালের আশপাশে যেসব বাড়ি করা হয়েছে, সেগুলো এক প্রকার দখল করে গড়ে উঠেছে। কালুনগর স্ল্যুইসগেটের পাশে একটা বড় ঘাট ছিল। এখান থেকে নৌকা ও জাহাজে মালামাল সদরঘাটে নেয়া হতো। এক সময় একটিই ছিল রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র। আশপাশে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠেছিল। খালের পানিতে দুর্গন্ধ ছিল না।

তিনি আরও বলেন, আগে এখানে জমির দাম তেমন বেশি ছিল না। এখানকার মতো ঘনবসতি ছিল না। অথচ এখন মানুষ গিজ গিজ করছে। সিটি করপোরেশনের কাছে তাদের পত্যাশা খালটি দখল মুক্ত করে হাতিরঝিলের মতো দৃষ্টিনন্দন কোনো প্রকল্প হাতে নেয়া হোক।

তিনি বলেন, তাদের এলাকায় এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে পানি। এ সমস্যার সমাধান জরুরি। এখানে যদি সিটি করপোরেশন একটা পানির পাম্প স্থাপন করে, তাহলে তাদের পানি সমস্যার সমাধান হবে।

গবেষণা সংস্থা রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের দুটি জরিপে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ও ঢাকা মহানগর এলাকায় ৭৫ টি খাল ছিল। ঢাকাকে ঘিরে রাখা বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও টঙ্গী নদীর সংযোগ স্থাপনকারী ১৭টি খালও হারিয়ে গেছে। গত ৫০ বছরে এসব নদী ও খাল ভরাট করে গড়ে উঠেছে বড় বড় অট্টালিকা।

এ বিষয়ে রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ বলেন, বর্তমানে ৫৮টি খালের অস্তিত্ব রয়েছে। তবে যেগুলোর অস্তিত্ব রয়েছে, সেগুলোর বেশিরভাগ এখন দখল-ভরাটের কবলে। আবার কোথাও কলকারখানার রাসায়নিক বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে পানিসহ আশপাশের পরিবেশ।

ওয়াসার পানির সংকটও দিন দিন প্রকট থেকে প্রকটতর হচ্ছে। পরিবেশের যে বিপর্যয় শুরু হয়েছে, তা অব্যাহত থাকলে রাজধানী শিগগিরই বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে।

 

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) প্রতিষ্ঠাতা ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, সরকারের নানা পদক্ষেপেও রাজধানীর খাল ও নদীগুলোকে দখল মুক্ত করা সম্ভব হয়নি। এজন্য টেকসই পরিকল্পনাভিত্তিক প্রকল্প নেয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘কালুনগর খাল নিয়ে আমাদের বড় পরিকল্পনা রয়েছে। এ বছরের মধ্যে রাজধানীর খালগুলোর সীমানা নির্ধারণ করে হাতিরঝিলের মতো দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা গড়ে তোলা হবে ‘

তিনি আরও বলেন, ‘দখলদাররা বাধা দিলেও উচ্ছেদ অভিযান চলবে। আমরা সংকল্প নিয়ে মাঠে নেমেছি। অবৈধভাবে যারা খাল-নদী বা রাস্তা দখল করেছে, শিগগিরই তাদের উচ্ছেদ করা হবে। এমনকি দখলদারদের সহযোগীদেরও অপসারণ করা হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর