বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সেই খুকির হাতে জয়িতা পুরস্কার

  •    
  • ৯ ডিসেম্বর, ২০২০ ২১:৫০

বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে রাজশাহীর সপুরায় মানবসম্পদ উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের হলরুমে দিল আফরোজ খুকির হাতে তুলে দেয়া হয় জয়িতা পুরস্কার। তাকে দেয়া হয়েছ সংবর্ধনাও।

রাজশাহী শহরের একমাত্র নারী পত্রিকা বিক্রেতা দিল আফরোজ খুকি এবার পেলেন জয়িতা পুরস্কার।

বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে বুধবার সকালে রাজশাহী মহানগরীর সপুরায় মানবসম্পদ উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের হলরুমে তার হাতে তুলে দেয়া হয় এ পুরস্কার।

জেলা প্রশাসন ও মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের আয়োজনে অনুষ্ঠানে খুকিসহ পুরস্কার পেয়েছেন আরও ১০ জন। তাদের দেয়া হয়েছে সংবর্ধনাও।

এর আগে খুকির দায়িত্ব নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে খুকির দায়িত্ব নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয় রাজশাহী জেলা প্রশাসককে।

খুকির ওপর তৈরি একটি পুরনো ভিডিও সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। তারপর থেকে তার সংগ্রামী জীবনের গল্প নিয়ে দেশব্যাপী শুরু হয় আলোচনা। এর পরই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আসে নির্দেশনা।খুকির বাড়ি রাজশাহী নগরীর শিরোইল এলাকায়। কিশোরী বয়সে ৭০ বছরের এক বৃদ্ধের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল তার। মাস না যেতেই স্বামী মারা যান। এরপরই শুরু হয় তার সংগ্রামী জীবন।১৯৮০ সালে স্বামীর মৃত্যুর পর খুকি অসহায় হয়ে পড়েন। ভাইদের আপত্তিতে বাবার বাড়িতে তার জায়গা হয়নি। এর পর কিছুটা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন তিনি। পাগলি মনে করে কেউ আশ্রয়ও দেয় না তাকে। পরে কারও দয়ার দিকে না তাকিয়ে খুকি বেছে নেন সংবাদপত্র বিক্রির পেশা।এরপর থেকে রাজশাহী শহরে গত প্রায় ৪০ বছর ধরে পত্রিকা বিক্রি করছেন খুকি। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন সংবাদপত্র বুকে চেপে ধরে দোকানে দোকানে গিয়ে বিক্রি করেন তিনি।প্রতিদিন ভোরে খুকি বাড়ি থেকে বের হয়ে হেঁটে নগরীর রেলওয়ে মার্কেটে পত্রিকার এজেন্টদের কাছ থেকে পত্রিকা কেনেন। তারপর সেখান থেকে হেঁটে হেঁটে রাজশাহীর রেলস্টেশন, শিরোইল বাস টার্মিনাল, সাগরপাড়া, আলুপট্টি, সাহেববাজার, আরডিএ মার্কেট ও নিউমার্কেটে পত্রিকা বিক্রি করেন। এসব স্থানে তার কিছু নিয়মিত ক্রেতা আছে।

খুকি তাদের কাছে পত্রিকা বিক্রি করেন আবার সড়কে চলাচল করা বা বাজারে কেনাবেচা করতে আসা মানুষদের কাছে নিয়ে গিয়েও পত্রিকা কিনতে অনুরোধ করেন। তবে পত্রিকা বিক্রির বিনিময়ে তিনি কখনও অতিরিক্ত কোনো টাকা পয়সা নেন না।নিজে কষ্ট করে চললেও তিনি তার উপার্জিত টাকায় কিছু অংশ দিয়ে সমাজসেবা করেন।আগে খুকির প্রতিদিন আয় ছিল ৩০০ টাকা। করোনা মহামারির কারণে আয় কমেছে। খুকির প্রতিদিন আয় এখন ১৫০ টাকা। এই টাকা থেকে নিজের খরচ মাত্র ৫০ টাকা। কিছু টাকা নিজের কাছে রাখেন। বাকি টাকা গরিব মানুষকে দান করেন।

খুকির জীবনসংগ্রামের ওপর তৈরি যে ভিডিওটি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে সেটা ২০০৯ সালে প্রচার করেছিল একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল। তখন সেটি নিয়ে তেমন সাড়া পড়েনি। কিন্তু কয়েকদিন আগে হঠাৎ করেই খুকির সেই ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এরপরই বিভিন্ন পর্যায় থেকে খোঁজ খবর নেয়া শুরু হয়। অনেকেই তার বাড়িতে যান।সম্প্রতি খুকি কথা বলেন নিউজবাংলার প্রতিবেদকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘পেপার বিক্রির কাজটা আমার ভালো লাগে। তাই আমি এটি করে যাচ্ছি।’খুকি আরও জানান, অসহায় অনেক নারীকে তিনি সেলাই মেশিন এবং তাদের স্বামীদের সাইকেল কিনে দিয়েছেন। এতিমখানা, মসজিদ এবং মন্দিরেও দান করছেন। বেশ কয়েকটি পরিবারকে স্বাবলম্বী হতে গবাদি পশু কিনে দিয়েছেন। এর সবই করেছেন সংবাদপত্র বিক্রির আয় আর উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া নিজের সম্পত্তি থেকে। সমাজসেবা করতে গিয়ে নিজের বলতে কিছুই রাখেননি তিনি।প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নির্দেশনা পাওয়ার পর জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল খুকির বাড়িতে গিয়ে তাকে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। খুকির বাড়িটিও সংস্কার করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

এ বিভাগের আরো খবর