বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রাত পোহালেই পদ্মা সেতু

  •    
  • ৯ ডিসেম্বর, ২০২০ ২১:০৫

৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুর শেষ স্প্যানটি বসানোর জন্য সেতুর কাছাকাছি নিয়ে রাখা হয়েছে। তিন হাজার দুইশ টনের স্প্যানটি নিয়ে বুধবারই মুন্সিগঞ্জের মাওয়ার কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে রওনা হয় বিশালাকারের ক্রেনটি।

পদ্মা নদীর দুই প্রান্ত সংযুক্ত করতে আর অপেক্ষা কয়েক ঘণ্টার। ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুর আর যে একটি স্প্যান বসানোর বাকি রয়েছে, সেটি এরই মধ্যে নেয়া হয়েছে সেতুর কাছে।

রাত পোহালেই স্প্যানটি ১২ ও ১৩ নম্বর খুঁটিতে তোলা হবে। এতে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া থেকে মাদারীপুরের জাজিরা প্রান্ত পর্যন্ত পুরো সেতুই হয়ে যাবে দৃশ্যমান।

বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতি চেষ্টার অভিযোগ, পরে দাতাদের বাদ দিয়ে সরকারের নিজ অর্থে সেতু করা, রাজনৈতিক বাদানুবাদ, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অভিযোগসহ নানা কারণে এই সেতুর প্রতিটি স্প্যানই খবর হয়ে এসেছে জাতীয় গণমাধ্যমগুলোতে।

দেশবাসীর মধ্যেও সেতুটি নিয়ে আগ্রহ প্রবল। স্বভাবতই যখন শেষ কয়েকটি স্প্যান বসানো হয়, সেতু নিয়ে আগ্রহ ততই বাড়তে থাকে।

গত ৪ ডিসেম্বর যেদিন ৪১টি স্প্যানের মধ্যে ৪০তমটি বসানো হয়, সেদিন নিউজবাংলার বহুল পঠিত সংবাদটিই ছিল আর একটি স্প্যান বসলেই পদ্মাসেতু।

সেদিনই জানানো হয়, শেষ স্প্যান বসবে ১০ বা ১২ ডিসেম্বর। সেই অনুযায়ী নেয়া হয় প্রস্তুতি।

স্টিলের তৈরি স্প্যানগুলোর বিভিন্ন অংশ তৈরি হয়েছে চীনের কারখানায়। পরে সেগুলো জোড়া দিয়ে ১৫০ মিটারের আকার করা হয় মুন্সিগঞ্জের কুমারভোগের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে। সেখানে স্প্যান জোড়া লাগানোর পাশাপাশি রঙ করে পাঠানো হয় সেতুর কাছে।

তিন হাজার দুইশ টন ওজনের একেকটি স্প্যান কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে সেতু পর্যন্ত টেনে নিয়ে যেতে কাজে লাগানো হয় তিন হাজার ৭০০ টনের বিশাল একটি ক্রেন। এত শক্তিশালী ক্রেন দুনিয়াতে আছে অল্প দুই একটিই।

গত ৪ ডিসেম্বর পদ্মা সেতুর ৪০তম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় ছয় কিলোমিটার

 

পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান আব্দুল কাদের নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বুধবার বিকেলে মাওয়ার কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের স্প্যানটি ভাসমান ক্রেন তিয়ান-ই তে করে কাঙ্ক্ষিত পিয়ারের উদ্দেশে রওনা হয়। স্প্যানটিকে নির্দিষ্ট দুটি খুঁটির কাছে নোঙর করে রাখা হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে কাল সকাল ৯টা থেকে স্প্যানটি ওপরে তোলার কাজ শুরু হবে। কোনোরকম কারিগরি জটিলতা না দেখা দিলে দুপুরের মধ্যেই দেশবাসী দেখতে পারবে পুরো পদ্মা সেতু।’

শেষ স্প্যানটি পাঠানোর আগে কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে তৈরি হয় আনন্দঘন মুহূর্ত। স্প্যানটি সাজানো হয় বাংলাদেশ ও চীনের পতাকা দিয়ে। স্প্যানের গায়ে চীনা ও বাংলা হরফে লেখা হয়েছে, ‘তিন বছরের প্রচেষ্টায় দেশি ও বিদেশি শ্রমশক্তির মাধ্যমে স্বপ্নের পদ্মাসেতু আজ বাস্তবায়নের পথে। সেতুর ৪১টি ইস্পাতের তৈরি স্প্যান সোনার বাংলার উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলকে সংযুক্তির মাধ্যমে চীন ও বাংলাদেশের বন্ধুত্বের বন্ধনকে অটুট রাখবে।’ 

গত বুধবার মাওয়ার কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে শেষ স্প্যানটি সেতুতে নিতে তোলা হয় ক্রেনে

 

আনন্দঘন সেই মুহূর্তের ঢেউ এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে পদ্মার মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে। পূর্ণাঙ্গ সেতু দেখার উত্তেজনা নিয়ে রাত কাটাবেন সারা দেশের মানুষই।

তবে শেষ স্প্যান বসানো উপলক্ষে সেতু কর্তৃপক্ষের বাড়তি কোনো আয়োজন নেই। বরং জমায়েত এড়াতে কড়াকড়ি আরোপ করেছে প্রশাসন। কেবল সেতুর কাছে যেতে পারবেন সরকারের অনুমোদিত লোকজন আর গণমাধ্যমকর্মীরা।

সেতুর মোট দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিলোমিটার। শেষ স্প্যান বসানোর পর পুরোটাই দৃষ্টিসীমার মধ্যে চলে এলেও আরও ১০ মাস থেকে এক বছর অপেক্ষা করতে হবে সেতুটি চালুর জন্য।

পদ্মা সেতুর মূল কাঠামোতে থাকছে কংক্রিট ও স্টিল। সেতুর ওপরের অংশে তৈরি হচ্ছে সড়ক পথ। সেতুর সড়ক তৈরির কাজে প্রয়োজন হবে দুই হাজার ৯২৭টি রোড স্ল্যাব। গত শুক্রবার শেষ স্প্যানের আগেরটি বসানোর দিন অবধি বসানো হয় এক হাজার দুইশটির বেশি স্ল্যাব।

থেমে নেই নিচ তলায় রেলপথ নির্মাণ কাজ। সেতুর নিচতলায় এসে দেখা যায়, লোহার রডের কাঠামো তৈরি করে দেয়া হয়েছে কংক্রিটের ঢালাই। সেগুলো ঠিকঠাক রক্ষণাবেক্ষণে কাজ করছেন শ্রমিকরা।

১৫০ মিটারের এই স্প্যানটি নির্মাণের মধ্য দিয়েই কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে একটি কর্মযজ্ঞ শেষ হয়

 

দেশের সবচেয়ে বড় এই সেতুটির জন্য শুরু থেকে অর্থায়ন জটিলতা ছাড়াও নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হয়েছে। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায় মাটির নিচের গঠনজনিত জটিলতা। ৪২টি পিলারের মধ্যে ১৪টির নকশা পাল্টাতে হয়েছে। সেটির সমাধানও হয়েছে অভিনব উপায়ে।

২০১৪ সালের ৭ ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর মূল নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুর মূল কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তখন ২০১৮ সালের মধ্যে সেতুর নির্মাণ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক হয়।

২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হতে শুরু করে পদ্মা সেতু। শুরুর দিকে স্প্যান বসানে সময় লেগেছে বেশি। এক কিলোমিটার দৃশ্যমান হতে সময় লেগেছে দেড় বছর। ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি সপ্তম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে সেতুর এক কিলোমিটার দৃশ্যমান হয়।

ওই বছরের ২৯ জুন ১৪তম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে সেতুর দুই কিলোমিটারের কিছু বেশি দৃশ্যমান হয়।

২০২০ সালের ১ জানুয়ারি ২০তম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় সেতুর তিন কিলোমিটার।

চলতি বছর সেতুর কাজ আরও দ্রুত গতিতে আগায়। গত ২৮ মার্চ ২৭তম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় সেতুর চার কিলোমিটারের কিছু বেশি।

৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুর নিচ তলায় চলছে রেল লাইন বসানোর কাজ। ওপরের সড়কে বসানো হচ্ছে রোড স্ল্যাব

 

পরের এক কিলোমিটার দৃশ্যমান হতে তুলনামূলক বেশি সময় লাগে করোনা পরিস্থিতির কারণে। মার্চে করোনা সংক্রমণ শুরু হলে সেতুর চীনা কর্মীদের একটি অংশ দেশে ফিরে যান। তখন সেতুর কাজ অনেকটাই থমকে দাঁড়ায়।

২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন

তবে অক্টোবর থেকে সেতুর কাজে আবার গতি আসে। তখন থেকে প্রতি সপ্তাহেই একটি করে স্প্যান বসানো হতে থাকে। গত ২৫ অক্টোবর ৩৪তম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে সেতুর পাঁচ কিলোমিটারের বেশি দৃশ্যমান হয়। 

৪ ডিসেম্বর ৪০তম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে সেতুর ছয় কিলোমিটার দৃশ্যমান হয়। আর ছয় দিনের মাথায় বসানো হচ্ছে শেষ স্প্যানটি। এর আগে এত কম সময়ে বসেনি কোনো স্প্যান।

গত ৭ ডিসেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কাছে সাংবাদিকরা প্রশ্ন রাখেন কবে খুলে দেয়া হবে সেতুটি। তিনি বলেন, ‘১০ মাস থেকে এক বছর লাগবে।’

তিনি বলেন, ‘এটা ডাবল ডেকার সেতু। ইটস অ্যা ইউনিক ব্রিজ ইন দ্যা ওয়ার্ল্ড। এখানে রেলও চলবে, সড়কের যানবাহনও চলবে। কাজে ওটাকে সেভাবেই তো তৈরি করতে হবে। ইট উইল টেক টাইম।’

এ বিভাগের আরো খবর