হঠাৎ অসুস্থ হয়ে দৃষ্টিশক্তি হারাতে বসেছিল স্বামী আবু তাহের। তার চিকিৎসার খরচ জোগাতে সেলাই মেশিন কিনেছিলেন ছমিরুল বেগম। নিজ ঘরে যন্ত্রটি রাখার জায়গা ছিল না। তাই প্রতিবেশির ঘরে বসিয়ে সেলাই করতেন ছমিরুল।
সামান্য যা আয় হতো তা জমিয়ে স্বামীর চিকিৎসা করান। মাস তিনেক আগে অস্ত্রোপচার মাধ্যমে আলো ফেরে তাহেরের চোখে। এবার নতুন করে স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছিলেন ছমিরুল। ভেবেছিলেন সেলাই করে ফেরাবেন স্বচ্ছলতা।
ছমিরুলের সেই সেলাই মেশিনে এখনও সুতা লাগানো আছে। কিন্তু মানুষটা আর এ জগতে নেই।
সোমবার বিকেলে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে বিআরটিসির বাসচাপায় দুই বছরের মেয়ে মারিয়া ও ছোট জা হালিমা বেগম সঙ্গে ছমিরুলও নিহত হন। ওই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন আরও পাঁচ জন।
মুড়াউড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, পরিবারের তিন জনকে হারিয়ে ছমিরুলের বাড়ি যেন ‘শ্মশানপুরী’। নবীগঞ্জ উপজেলার গ্রামটিও শোকে স্তব্ধ।
মুড়াউড়া গ্রামে ছমিরুলের বাড়িতে স্বজন ও প্রতিবেশীদের ভিড়
চার মাস আগে বিয়ে হয় হালিমার
ছমিরুলের ছোট জা দুর্ঘটনায় নিহত হালিমা বেগমের বিয়ে হয় চলতি বছরের আগস্টে। অভাবের সংসারকে নিজের মতো করে সাজাতে চেয়েছিল নববধূ হালিমা। কিন্তু সে কী জানত, সেই স্বপ্ন তার নিমেষেই ঝরে যাবে।
দুই জায়ের মধ্যেও ছিল খুবই ভালো সম্পর্ক। বোনের মতো দেখতেন একে-অপরকে। ঘটনার দিনও একসঙ্গে পানিউমদা বাজারে ডাক্তার দেখাতে যাচ্ছিলেন তারা।
তাদের শ্বশুর আব্দুল আহাদ বলেন, ‘আমার দুই বউয়ের মতো এই এলাকায় কোন বউ আছে কি না জানি না। আমার অভাবের সংসার কত কষ্ট করে তারা টিকিয়ে রেখেছে, সেটা কেবল আমিই জানি। দুজনে ভাগ-ভাটোয়ারা করে কাজ করত। বড় বউ সেলাই কাজ করলে, ছোট বউ পরিবারের অন্য সব কাজ করত।’
দুর্ঘটনা ঘটে যেভাবে
প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, কুমিল্লা থেকে সিলেটগামী বিআরটিসির একটি বাস নবীগঞ্জের সাতহাইল এলাকায় পৌঁছানোর পর নিয়ন্ত্রণ হারায়। এ সময় বিপরীত দিক থেকে আসা দুটি অটোরিকশা ও একটি মোটরসাইকেলকে চাপা দেয় বাসটি। গাড়িগুলো টেনে নিয়ে বাসটি খাদে পড়ে যায়। অটোরিকশা দুটি ওই বাসের নিচেই চাপা পড়ে।
নবীগঞ্জের সাতহাইল এলাকায় দুর্ঘটনায় পড়া বিআরটিসির বাস
খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানা, শেরপুর হাইওয়ে, গোপলার বাজার তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ, নবীগঞ্জ ও শায়েস্তাগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট উদ্ধার কাজ শুরু করে। একে একে বের করে আনা হয় আটটি মরদেহ।
চালকের বিরুদ্ধে মামলা
দুর্ঘটনার পর চালকের বিরুদ্ধে শেরপুর থানায় মামলা করেছেন আবু তাহের। মঙ্গলবার বিকেলে তিনি মামলাটি করেন।
শেরপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এরশাদুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘চালকের নাম না জানায়, শুধু ‘চালক’ উল্লেখ করে মামলা করা হয়েছে।
চালকের ভুলেই আট জন প্রাণ হারিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। এ ঘটনায় চালকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানিয়েছেন তারা।