গত এক মাসে কওমি মাদ্রাসায় ৪০ ছেলে শিশুকে বলাৎকারের কথা জানিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামে একটি সংগঠন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে দুই জনের।
ছেলে শিশু ধর্ষণ তথা বলাৎকারের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড করার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য পাদদেশে এক তথ্যচিত্র প্রদর্শনে এই তথ্য জানানো হয়।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসা সংবাদ বিশ্লেষণ করে এই পরিসংখ্যান পেয়েছে সংগঠনটি। তারা বলছে, এসব ঘটনায় কেবল মামলা হয়েছে, চেপে যাওয়া ঘটনা আরও বেশি।
বুধবার সকালে এই কর্মসূচিতে ধর্ষণের মতো বলাৎকারের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড করাসহ সাত দফা দফা দাবি জানানো হয়।
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণে কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক বিভিন্ন দল ও সংগঠনের বিরোধিতা ও নানা আপত্তিকর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় দেশজুড়ে নানা কর্মসূচিতে মাদ্রাসায় ছেলে শিশু ধর্ষণ তথা বলাৎকারের বিষয়টি আলোচনায় উঠেছে।
বিষয়টি আগে থেকেই আলোচনায় থাকলেও ইদানীং অভিভাবকদের মধ্যে সন্দেহভাজনদের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রবণতা বাড়ছে আর প্রায়ই কওমি মাদ্রাসার শিক্ষকরা গ্রেফতার হচ্ছেন, যদিও ধর্মভিত্তিক দলগুলো এই বিষয়ে একেবারেই চুপ।
মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ‘যারা এখন ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে কথা বলে তারা বলাৎকারের বিষয়ে চুপ থাকে। তার মানে তারা প্রমাণ করে যে তারা বলাৎকারের সমর্থনদাতা।
‘খুবই দুঃখের বিষয় এই যে, বলাৎকার নিয়ে এখন পর্যন্ত আলেম সমাজের কোনো বক্তব্য চোখে পড়েনি। নিজেদেরকে ইসলামিক দল হিসেবে দাবি করা হেফাজত ইসলামও এই ঘটনাগুলোর বিষয়ে নীরব ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।’
আমিনুল বলেন, ‘এ থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে মামুনুল-ফয়জুল- বাবুনগরীরা বলাৎকারের নীরব সমর্থনদাতা। এদের মুখোশ জাতির সামনে উন্মোচন করতে হবে। এরা মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের বাক স্বাধীনতা ও মুক্ত চিন্তা হরণ করে যাচ্ছে দিন দিন।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন বলেন, ‘আমরা হেফাজত ইসলামকে বলতে চাই, বলাৎকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে প্রমাণ করুন যে আপনারা সত্যিকার অর্থে এর সঙ্গে জড়িত নন।’
সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক হামজা রহমান অন্তর বলেন, ‘কিছু ধর্ম ব্যবসায়ী ধর্মের নাম নিয়ে বলাৎকারের মত গর্হিত অপরাধ করে যাচ্ছে। তারা জান্নাতের লোভ দেখিয়ে, কোরআনের কথা বলে বলাৎকার কে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। তারা বলাৎকারের ঘটনাতে নিশ্চুপ কেন তা জাতি জানতে চায় ‘
‘এরা আবার ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে কথা বলে! এদের উচিত আগে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করা’- বলেন অন্তর।
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ হলে সেটি ভেঙে ফেলার হুমকি দেয়ায় হেফাজতে ইসলামের আমির জুনাইদ বাবুনগরী, যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক ও ইসলামী আন্দোলনের নায়েবে আমির ফয়জুল করীমের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করেছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। তারা বেশ কিছুদিন ধরেই মাদ্রাসায় বলাৎকারের বিষয়টি সামনে আনছে।
মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সাত দফা
১. ধর্ষণের ন্যায় বলাৎকারের অপরাধে অভিযুক্ত ও সমর্থনদাতাদের শাস্তি মৃত্যুদন্ড নিশ্চিত করতে হবে।
২. ‘মহানবী (সাঃ) কে অবমাননাকারী ও বলাৎকারের সমর্থনদাতা’ মামুনুল হককে দ্রুত গ্রেফতার করে শাস্তি দিতে হবে।
৩. সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে, মাদ্রাসা মসজিদে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা বন্ধ করতে হবে।
৪. বিভিন্ন ধর্মীয় সভা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ানো অপপ্রচারকারীদের চিহ্নিত করে শাস্তি দিতে হবে।
৫. জাতির পিতাকে অববমাননাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, জেলা, উপজেলাতে জাতির পিতার ভাস্কর্য নির্মাণ করতে হবে।
৬. মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে, মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করাসহ তাদের উপর যৌন নিপীড়ন বন্ধে মনিটরিং সেল গঠন করতে হবে।
৭. সকল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত জাতীয় সংগীত বাজানো, জাতীয় পতাকা উত্তোলন, শহীদ মিনার নির্মাণ, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানানো বাধ্যতামূলক করতে হবে।