কর্মজীবী নারীদের নিরাপদ আবাসন গড়ে তুলতে সব উপজেলায় হোস্টেল গড়ে তোলা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার সকালে রোকেয়া দিবসের আলোচনা সভায় অনলাইনে যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা জানান।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী নারীর ক্ষমতায়নে সরকারের নানা উদ্যোগ তুলে ধরেন।
এ বছর নারী শিক্ষায় অধ্যাপক ড. শিরীন আখতার, পেশাগত উন্নয়নের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নে কর্নেল ডা. নাজমা বেগম, নারীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদানে মঞ্জুলিকা চাকমা বেগম রোকেয়া পদক পান।
এ ছাড়া সাহিত্য ও সংস্কৃতির মাধ্যমে নারী জাগরণের ক্ষেত্রে বীর মুক্তিযোদ্ধা বেগম মুশতারী শফি ও নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় অবদানে বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরিদা আক্তার এ পদক পান।
বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা পদক তুলে দেন।
এ সময় সশরীরে উপস্থিত থেকে পদক তুলে না দিতে পারায় দুঃখ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আজকে আমার খুব খারাপ লাগছে যে, আপনাদের হাতে পদকটা তুলে দিতে পারলাম না।’
অনুষ্ঠানে বেগম রোকেয়ার জীবনাদর্শ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বেগম রোকেয়ার জন্ম না হলে মুসলমান মেয়েরা পড়ালেখা করে সমাজে নিজেদের অবস্থান করতে পারত কি না সন্দেহ রয়েছে।’
‘১৯ শতকের গোড়ার দিকে মেয়েদের ঘরের বাহিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না, শিক্ষা গ্রহণের কোনো সুযোগও ছিল না। কিন্তু বেগম রোকেয়া সমাজে একটা বিবর্তন নিয়ে এসেছিলেন।’
নারীর ক্ষমতায়নে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিভিন্ন উদ্যোগও তুলে ধরেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার পর মেয়েদের নেতৃত্ব গড়ে তুলতে জাতির পিতা আমাদের সংবিধানে মেয়েদের সমান অধিকারের কথা যেমন বলেছেন, জাতীয় সংসদে মেয়েদের জন্য নির্দিষ্ট আসনও তিনি রেখে দেন।
‘পাকিস্তান আমলে অনেক ক্ষেত্রে মেয়েদের চাকরির পরীক্ষায় অংশ নেয়ারও সুযোগ ছিল না। যেমন জুডিশিয়াল সার্ভিসে কোনো মেয়ে যেতে পারবে না, পাকিস্তান আমলে এমন আইন ছিল। কিন্তু দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু সে আইন পরিবর্তন করে দেন, যাতে মেয়েরা সবক্ষেত্রে কাজের সুযোগ পান।’
শেখ হাসিনা বলেন, নারী ও পুরুষের বৈষম্য কমে যাওয়াতেই দেশের এ উন্নয়ন অগ্রযাত্রা।
তিনি বলেন, ‘একটা সমাজকে যদি উন্নত করতে চাই, আর অর্ধেকের উন্নয়ন যদি না হয়, দাঁড়াতে না দেই, তাহলে সে সমাজকে তো খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলতে হবে। এ কারণেই স্বাধীনতার পর বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়। এর ফলেই আজ বাংলাদেশে নারীদের ক্ষমতায়নে আমরা যথেষ্ট এগিয়েছি।
‘আমি যখন সরকার গঠন করি, উচ্চ আদালতে কোনো নারী বিচারক ছিল না। ক্ষমতায় আসার পর আমরা এ উদ্যোগ নিই। কোনো নারী সচিবও ছিলেন না। আমরা সরকার গঠনের পরই তা করি।’
এ সময় নির্যাতনের শিকার নারীদের জন্য লিগ্যাল এইড সিস্টেম চালুর কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি শিক্ষাক্ষেত্রে মেয়েদের উপবৃত্তি দেয়ার বিষয়টিও উঠে আসে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে।
দেশে নারীর ক্ষমতায়নের উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের সংসদে, এটা ঠিক যে, এটা একটা ইউনিক ব্যবস্থা। স্পিকার, লিডার অব দ্য হাউজ, লিডার অব দ্য অপজিশন সবাই নারী এবং দীর্ঘদিন এ অবস্থাটা চলছে। সারা বিশ্বেও এটা বেশ সমাদৃত হয়।’
এ সময় নিজের মেয়ে সায়মা ওয়াজেদের জন্মদিনে তার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘সে অটিজম নিয়ে কাজ করছে। তার উদ্যোগে জাতিসংঘে একটা রেজুলেশন পাস হয়েছে। অটিস্টিক শিশু নিয়ে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি এখন পরিবর্তন এসেছে।’