দুই সন্তানসহ চার জনের সংসার। কিন্তু মাথার উপরে ছাদ বলতে পলিথিন। চৌকির সঙ্গে বাঁশের খুঁটিতে বাঁধা সেই পলিথিন। সঙ্গে ছেঁড়া কাপড়। এই হলো আল্পনা-সেকেন্দারের ‘বসতবাড়ি’।
সেই পলিথিন মোড়া ঘরটুকুও অন্যের বাড়ির পেছনে গোয়াল ও শৌচাগারের কাছে। চৌকিসর্বস্ব এই বাড়িতে গাদাগাদি করে জীবনযাপন করছেন এই দম্পতি। ভূমিহীনদের আবাসনের তালিকাতে ওঠেনি নাম।
কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার বল্লভের খাষ ইউনিয়নের হাছিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আজিজার রহমানের বাড়ির গোয়ালঘর এবং টয়লেটের মাঝখানে এক টুকরো ফাঁকা জায়গায় ঠাঁই এই পরিবারের।
খোলা আকাশের নিচে পাতা পাঁচ ফুট দীর্ঘ ও ৪ ফুট উচ্চতার চৌকির ঘরের বাসিন্দা সেকেন্দার আলী অসুস্থ। সংসারের হাল ধরেছেন স্ত্রী আল্পনা বেগম। বড় মেয়ে আট বছরের সাথী স্থানীয় নূরানী মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। ছোট ছেলে রাকিব হাসানের বয়স দুই বছর।
২০ বছর আগে নদীভাঙনের শিকার হয়ে সর্বস্ব হারান আল্পনার বাবা। স্বামী সেকেন্দার দিনমজুর ও মৌসুমি রিকশাচালক। বিভিন্ন সময়ে উদ্বাস্তু হয়ে বিভিন্ন শহরে বসবাস করেছেন তারা।
করোনার লকডাউনে পরিবারটিকে ফিরে আসতে হয়েছে নিজ গ্রামে। চাচার বাড়ির কোনায় এভাবেই সাত মাস আগে ঠাঁই হয় তাদের। এখানে বসে পড়াশোনা চালাতে হয় বড় সন্তান সাথীকে। রাতে শেষ সম্বলগুলো তুলে রাখতে হয় এখানেই। কখনও বসে, কখনও আধশোয়া হয়ে রাত পার করতে হয়।
সেকেন্দার নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে অক্ষম হয়ে পড়েছেন। এখন একমাত্র উপার্জন করেন আল্পনা। কখনও দিনমজুরি, আবার কখনও অন্যের বাড়িতে কাজ করে দুমুঠো ভাত জোগানোর চেষ্টা করেন তিনি। তবে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তার বেষ্টনীর প্রকল্পে নাম নেই তার।
আল্পনা জানান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে অনেক ঘুরেও কোনো সহযোগিতা পাননি। আল্পনার স্বামী সেকেন্দার আলী জানান, অতিকষ্টে এই চৌকিতে দুই সন্তানসহ চার জনের রাত পার করতে হয়। এই দুঃখের কথা লজ্জায় কাউকে জানাতে পারেননি তিনি।
সাথী আকতার জানান, রাতে এখানে ঘুমাতে তার অনেক কষ্ট হয়। তা ছাড়া রাতে এখানে বসে কুপির আলোতে লেখাপড়া করতেও কষ্ট হচ্ছে।
আল্পনার চাচা আজিজার রহমান জানান, পরিবারটির কোনো জমি নেই। তিনি এখানে থাকার জায়গা দিয়েছেন। কিন্তু তাদের ঘর তুলে থাকার মতো সামর্থ্যও নেই।
বল্লভের খাষ ইউপি চেয়ারম্যান আকমল হোসেন বলেন, পরিবারটির অসহায়ত্বের কথা তিনি শুনেছেন।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক রেজাউল করিম বলেন, ‘মুজিববর্ষে কেউ গৃহহীন থাকবে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীনদের গৃহনির্মাণ চলমান রয়েছে। আল্পনা বেগমকে এই প্রকল্পে জমিসহ একটি ঘর নির্মাণ করে দেয়া হবে।’