বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শ্যালকের স্ত্রীর পিছু না ছাড়ায় খুন শহিদুল

  •    
  • ৮ ডিসেম্বর, ২০২০ ২২:৪১

২০১৭ সালের ২৩ ডিসেম্বর নিখোঁজ হন শহিদুল ইসলাম। এরপর তার মা তমিরুন নেসা কুষ্টিয়ার আদালতে অপহরণ মামলা করেন। মামলায় শহিদুলের প্রয়াত শ্যালক মোতাহারের স্ত্রী রোজিনা বেগম, তার বাবা জব্বার শেখ ও মা মতিরন নেসাকে আসামি করা হয়।

কুষ্টিয়ার কুমারখালীর গরু ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম (৪৭) হত্যার রহস্য উদঘাটনের দাবি জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

২০১৭ সালের ২৩ ডিসেম্বর নিখোঁজ হন শহিদুল ইসলাম। এরপর তার মা তমিরুন নেসা কুষ্টিয়ার আদালতে অপহরণ মামলা করেন। মামলায় শহিদুলের প্রয়াত শ্যালক মোতাহারের স্ত্রী রোজিনা বেগম, তার বাবা জব্বার শেখ ও মা মতিরন নেসাকে আসামি করা হয়।

আদালত শহিদুল অপহরণ মামলাটি থানায় নিয়মিত মামলা হিসেবে নেয়ার নির্দেশ দেয়। প্রথমে থানা পুলিশ, এরপর পুলিশ সদর দফতর ২০১৯ সালের নভেম্বরে অপহরণ মামলাটি সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেয়।

মঙ্গলবার সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির ডিআইজি শেখ নাজমুল আলম বলেন, ‘অপহরণ মামলার তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর গত ২২ নভেম্বর কুমারখালী থেকে রোজিনা বেগমকে গ্রেফতার করি। পরবর্তীতে রোজিনা স্বীকারোক্তিমূলক জবাবন্দি দেন। তিনি শহিদুলকে হত্যার কথা স্বীকার করেন।’

যে কারণে হত্যা

সংবাদ সম্মেলনে হত্যার কারণ জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সুজিৎ কুমার ঘোষ। তিনি জানান, শহিদুলের শ্যালক মোতাহেরের সঙ্গে রোজিনা বেগমের বিয়ে হয়। মোতাহেরের ভালো ঘর না থাকায় বউ নিয়ে দুলাভাই শহিদুলের বাড়িতে থাকতেন তারা। সে সময় শ্যালকের বউ রোজিনার প্রেমে পড়েন শহিদুল। বিষয়টি জানাজানি হলে মোতাহারের স্ত্রীসহ আলাদা বাড়িতে চলে যান।

তদন্ত কর্মকর্তা জানান, এর কয়েক বছর পর মোতাহার মারা যান। মারা যান শহিদুলের স্ত্রীও। তখন শহিদুল শ্যালকের স্ত্রীর সঙ্গে আবারও সম্পর্ক নিয়মিত করার চেষ্টা করেন; তাকে বিয়ে করতে চান। সম্পর্ক থাকলেও শহিদুলকে বিয়ে করতে রাজি হননি রোজিনা। তাদের সম্পর্ক নিয়ে গ্রামে নানা কথা হয়। তাই রোজিনা চলে যান বাবার বাড়ি। তবে যোগাযোগ ছিল শহিদুলের সঙ্গে।

সুজিৎ কুমার ঘোষ জানান, কয়েক মাস পর রোজিনা মানিকগঞ্জে এসে আকিজ গ্রুপে কাজ শুরু করেন। সেখানে মোমিন নামের একজনের সঙ্গে তার প্রেম হয়; পরে বিয়ে করেন তারা। মোমিনের গ্রামের বাড়ি মাগুরার শ্রীপুরে। বিয়ের পরও রোজিনাকে ফোন দিতেন শহিদুল। এরপর মোমিন-রোজিনা পরিকল্পনা করেন শহিদুলকে খুন করার। তারা দুজনে মাগুরার শ্রীপুরে চলে যান। রোজিনা শহিদুলকে ফোন করে বিয়ে করতে চান। শহিদুল রোজিনাকে বিয়ে করতে ২০১৭ সালের ২৩ ডিসেম্বর শ্রীপুরে যান। 

শহিদুল শ্রীপুরে গিয়ে লাঙ্গলবাদ বাজার থেকে মিষ্টি কেনেন। বাজারে আগে থেকেই শহিদুলের অপেক্ষায় ছিলেন রোজিনা ও মোমিন। তারা শহিদুলকে একটি খোলা মাঠের মধ্যে দিয়ে হাঁটিয়ে দূরের আলো দেখিয়ে বলেন, সেটা রোজিনার বান্ধবির বাড়ি, সেখানে বিয়ে হবে। এরপর বিশাল খোলা মাঠের মাঝে গিয়ে রোজিনা ও মোমিন মিলে শহিদুলকে জাপটে ধরেন। প্রায় আধাঘণ্টা ধস্তাধস্তির পর শহিদুল ক্লান্ত হয়ে পড়েন। তখন রোজিনা তার বুকের ওপরে বসে দুই হাত চেপে ধরেন। মোমিন চাকু দিয়ে গলায় পোঁচ দেন। চাকু ধারালো না হওয়ায় প্রথমে শহিদুলের গলা কাটেনি। পরে চাকুর সরু মাথা দিয়ে মোমিন খোঁচাতে থাকেন। এক পর্যায়ে নিস্তেজ হয়ে পড়েন শহিদুল। মৃত্যু নিশ্চিত করতে তার হাত ও পায়ের রগ কেটে দেন মোমিন। পরে মরদেহ ফেলে তারা বাড়ি যান।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পর দিন শ্রীপুর থানা পুলিশ অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে শহিদুলের মরদেহ উদ্ধার করে। চরমপন্থিরা তাকে হত্যা করেছে বলে ধারণা করে পুলিশ। এ ঘটনায় হত্যা মামলা হলেও থানা পুলিশের তদন্তে কূলকিনারা হচ্ছিল না। এরপর পুলিশ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। কারণ, ওই এলাকায় শহিদুলকে কেউ চিনতেন না।

তদন্ত কর্মকর্তা সুজিৎ বলেন, ‘আমি অপহরণ মামলা তদন্ত করতে গিয়ে প্রথমে শহিদুলের সর্বশেষ অবস্থান কোথায় ছিল তা শনাক্তের চেষ্টা করি। তার ব্যবহৃত মোবাইলের সর্বশেষ অবস্থান ছিল মাগুরার শ্রীপুরের লাঙ্গলবাদ বাজারে। রোজিনার ব্যবহৃত সিমটিও একই এলাকায় ছিল। পরে রোজিনাকে ঢাকার আশুলিয়া থেকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করি। রোজিনা সব স্বীকার করেন। পরে মোমিনকে গ্রেফতার করি। তিনিও হত্যার কথা স্বীকার করেন।’

তিনি জানান, পরে সিআইডি মামলার নথি দেখে জানতে পারে ২০১৭ সালের ২৪ ডিসেম্বর ওই মাঠ থেকে এক জনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে তাকে অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে দাফন করা হয়। হত্যা মামলা হলেও সেটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে।

ডিআইজি শেখ নাজমুল আলম বলেন, ‘আমরা অপহরণ মামলাটি তদন্ত করতে গিয়ে জানতে পেরেছি শহিদুলকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যা মামলাটি আবারও পরিচালনার আবেদন করব আমরা।’

এ বিভাগের আরো খবর