অনলাইন ক্যাসিনো কারবারি সেলিম প্রধানের বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশিট (অভিযোগপত্র) অনুমোদন দেয়া হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) মঙ্গলবার এক বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়।
সংস্থার পরিচালক প্রণব কুমার ভট্টাচার্য বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, দুদকের তদন্তে দেখা গেছে সেলিম প্রধান ৪৭ লাখ ৪৬ হাজার টাকার স্থাবরসহ ৫৭ কোটি ৭৯ লাখ ২৮৮ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। যা তার আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিবিহীন ও জ্ঞাত আয় বর্হিভূত অবৈধ সম্পদ বলে তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।
জ্ঞাত আয়বর্হিভূত সম্পদ অর্জন করে ও তা নিজ ভোগ দখলে রেখে তিনি দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। অবৈধ আয়ের ২১ কোটি ৯৯ লাখ ৫১ হাজার ১৪৫ টাকা বিদেশে (থাইল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্র) পাচার করেছেন। এভাবে তিনি মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ৪ (২) ও ৪ (৩) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলেও জানান প্রণব।
তিনি জানান, এরই মধ্যে থাইল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করা অর্থের সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি সংগ্রহের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়েছে দুদক।
এর আগে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (উপপরিচালক, দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রধান কার্যালয়, ঢাকা) গুলশান আনোয়ার প্রধান ও তদারককারী কর্মকর্তা (পরিচালক, দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রধান কার্যালয়, ঢাকা) সৈয়দ ইকবাল হোসেন গত ৯ নভেম্বর অনলাইন ক্যাসিনো কারবারি সেলিম প্রধানের যুক্তরাষ্ট্র ও থাইল্যান্ডে বিপুল সম্পদের সন্ধান পাওয়ার কথা প্রকাশ করেন।
তারা জানান, থাইল্যান্ডে সেলিম প্রধানের মালিকানাধীন প্রধান গ্লোবাল ট্রেডিং, এশিয়া ইউনাইটেড এন্টারটেইনমেন্ট, তমা হোম পাতায়া কোম্পানি লিমিটেডসহ সাতটি কোম্পানির সন্ধান পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ব্যাংকক ব্যাংক ও সায়েম কমার্শিয়াল ব্যাংকে ২০ কোটি টাকার আর্থিক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।
দুদকের তদন্তে যুক্তরাষ্ট্রের জেপি মর্গান ব্যাংকে সেলিম প্রধানের দুটি ব্যাংক হিসাবে আর্থিক লেনদেনের তথ্য মিলেছে। তবে হিসাববহির্ভূত ৬১ কোটি টাকার উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেনি দুদক। এ টাকা থাইল্যান্ডে পাচার হয়েছে কি না সে বিষয়ে কোনো তথ্য পায়নি কমিশন।
দুদকের তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী সেলিম প্রধান লাসভেগাসে ক্যাসিনো খেলতেন এবং কয়েক কোটি টাকা দিয়ে ক্যাসিনো চিপস লাসভেগাস থেকে ক্রয় করেছিলেন।
২০১৯ সালের ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চলাকালে ৩০ সেপ্টেম্বর ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সেলিম প্রধানকে আটক করে র্যাব। পরে গুলশান-বনানীতে তার বাসা ও অফিসে অভিযান চালিয়ে ২৯ লাখ নগদ টাকা এবং বিপুল পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা ও মদ উদ্ধার করা হয়।
পরদিন গুলশান থানায় মাদক ও মুদ্রাপাচার আইনে তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা করে র্যাব।
‘প্রধান গ্রুপ’ নামে একটি ব্যবসায়ী গ্রুপের চেয়ারম্যান সেলিম প্রধান। এই গ্রুপের অধীনে পি২৪ গেইমিং নামের একটি কোম্পানি ওয়েবসাইটে ঘোষণা দিয়ে ক্যাসিনো ও অনলাইন ক্যাসিনোর কারবার করছিল।
দুদক জানিয়েছে, সেলিম প্রধানের স্থাবর সব সম্পদ জব্দ করা হয়েছে। তার অর্ধশত ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে।