রাজশাহীতে ধূমপানের কারণে এক তরুণীকে হেনস্তার ঘটনায় নেতৃত্ব দেয়া ব্যক্তি বলছেন, মেয়েদের ‘নষ্ট হয়ে যাওয়া’ ঠেকাতেই তিনি কাজটি করেছেন। রোববারের ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা। ওই তরুণী বলছেন, হেনস্তার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার কারণে তিনি আইনের আশ্রয় নেয়ার কথা ভাবছেন।রাজশাহীর সার্কিট হাউজ থেকে একশ’ গজ দূরে সিঅ্যান্ডবি মোড়। সেখানে আছে গণপূর্তসহ আরও কয়েকটি সরকারি দফতরের কার্যালয়। ফলে দিনভরই ব্যস্ত থাকে এলাকাটি।ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পথচারীদের জন্য সড়ক ঘেঁষে বসার জায়গা করে দিয়েছে সিটি করপোরেশন। সেখানে বিশ্রামের পাশাপাশি আড্ডা দেন অনেকে। তবে রোববারের ঘটনার পর অনেকটাই থমকে গেছে প্রাণবন্ত পরিবেশ।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই তরুণী ও তার সঙ্গীকে হেনস্তা করেন স্থানীয় শহিদ হোসেন বারেকসহ অন্তত ২০ জন। বারেক ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা। ওই ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে দুই বার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও প্রতিবারই ভরাডুবি হয় তার। এখন তিনি ঠিকাদারি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। বারেকের আচরণ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা চললেও নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমি খারাপ কিছু করিনি। মেয়েটি প্রকাশ্যে ধূমপান করছিল। এটি আমারা খারাপ লেগেছে। তাই তাকে উঠে যেতে বলেছি।‘ওই মেয়েকে দেখে যেন অন্য মেয়েরা নষ্ট হয়ে না যায় এবং এলাকার পরিবেশ খারাপ না হয়- সেজন্যই তাকে উঠিয়ে দিয়েছি।’ছেলে আর মেয়ে ‘এক জিনিস না’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, এ কারণেই মেয়েদের ধূমপান তাকে পীড়া দেয়। ভিডিও ছড়ানোর বিষয়ে বারেক বলেন, ‘ওই সময় আশপাশের অনেকেই জমে গিয়েছিল। এর মধ্যে কে ভিডিও করল আর তা ছড়াল সেটা তো আমি বলতে পারব না।’এলাকাটি রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত। এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মতিউর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সার্কিট হাউজ রোডটি ধূমপানমুক্ত এলাকা নয়। প্রতিদিন প্রচুর মানুষ এদিকে ঘুরতে আসে। তারা রাস্তার পাশের জায়গায় বসে আড্ডা দেয়।’মতি বলেন, এসব এলাকায় কারো ধূমপান করা উচিত নয়। আর কেউ যদি করে তবে তাকে ভালো আচরণের মাধ্যমেই নিষেধ করা যেতে পারে। হেনস্তার শিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় প্রতি মুহূর্তেই হয়রানির শিকার হচ্ছি, অপমানিত হচ্ছি।’ওই দিনের ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি জানান, ২৫ নভেম্বর রাজশাহীতে এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। রোববার সকালে সিঅ্যান্ডবি মোড় এলাকায় ঘুরতে যান। ফটোগ্রাফিতে জড়িত এক বড় ভাই তার সঙ্গে ছিলেন। ঘটনাস্থলে বসে তারা একটি কোম্পানির শুটিংয়ের বিষয়ে কথা বলছিলেন। ওই ছাত্রী বলেন, ‘আড্ডার ফাঁকে সিগারেট ধরালে বারেক এসে চড়াও হন। এ সময় আরও প্রায় ২০ জন এসে হেনস্তা করে। আমি মেয়ে বলেই এমন আচরণ করা হয়েছে। ‘যারা আমাকে হেনস্তা করেছে, তারা অশালীন কথা বলছিল। আমার গলার ট্যাটু নিয়ে আপত্তিকর কথা বলেছে। আমার তাকানো নিয়ে আপত্তিকর কথা বলেছে। আমি তাদের কথার প্রতিবাদ করেছি।’আইনি পদক্ষেপ নেয়ার চিন্তা করছেন জানিয়ে ওই তরুণী বলেন, ‘আমি কোনো অপরাধ করিনি। আমাকে শাসাবে এটা আমি মানব কেন? আমার সঙ্গে যে বড়ভাই ছিলেন তিনি সিগারেট খাননি। কিন্তু তাকেও অপমান করা হয়েছে।’এ ঘটনায় থানায় এখনো কেউ অভিযোগ করেনি বলে জানিয়েছেন রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
মেয়েদের ‘নষ্ট হওয়া’ ঠেকাতে চেয়েছিলেন বারেক
হেনস্তার শিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় প্রতি মুহূর্তেই হয়রানির শিকার হচ্ছি, অপমানিত হচ্ছি। এ ঘটনায় আইনের আশ্রয় নেব বলে ভাবছি।’
-
ট্যাগ:
- হেনস্তা
এ বিভাগের আরো খবর/p>