কুষ্টিয়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙচুরকারীদের বিচার চেয়েছেন ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর। একই সঙ্গে তিনি ভাঙচুরের ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়েছেন।
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে এসব দাবি করেন তিনি।
গত শুক্রবার গভীর রাতে কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুর করে দুই মাদ্রাসাছাত্র। এ ঘটনায় দুই ছাত্র ও দুই শিক্ষককে চার দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিয়েছে আদালত।
ওই ভাস্কর্য ভাঙচুরের আগে থেকেই ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করে আসছিল ইসলামপন্থি বিভিন্ন সংগঠন। তাদের প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে সমাবেশ করছিল সরকারপন্থিরা।
বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুর বলেন, ‘ভাস্কর্য নিয়ে সরকারি দল ও আলেমরা মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে, যেটা দেশের জন্য অশনি সংকেত। আমরা দেখেছি আলেমরা তাদের জায়গা থেকে একটু নমনীয় হয়েছেন। তারা ভাস্কর্য নিয়ে তাদের দাবি জানিয়েছেন, সেই দাবি সরকার মানবে কি না সেটা তাদের বিষয়। তারপরও কেন এই আলেমদেরকে গালিগালাজ করে, কুরুচিপূর্ণ কথা বলে সমাজে ইসলাম বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে?
‘আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ এই সময় তারা ক্ষমতায় থেকে ধর্ম বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে। কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য যে দুষ্কৃতকারীরা ভেঙেছে আমরা তাদের বিচার চাই৷ এর সাথে যারা জড়িতদের তাদের খুঁজতে হবে। দেখতে হবে এই ঘটনা কেউ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ঘটিয়েছে কি না৷ এর তদন্ত করতে হবে৷’
সরকারের সমালোচনা করে নূর তার বক্তব্যে আরও বলেন, ‘সরকার আজকে কারও কথা শুনতে চায় না। তারা আজকে ক্ষমতা হারানোর ফোবিয়াতে ভুগছে। যখনই কেউ তাদের কাছে যৌক্তিক ও ন্যায়সঙ্গত দাবি দাওয়া জানায়, রাজপথে আসে তখনই সরকার ভাবে, এই বুঝি তাদের গদি নড়বড়ে হলো। সেই আতঙ্কে তারা কারো কথা শোনে না। তারা নিপীড়ন করে মানুষের কণ্ঠকে দমন করতে চায়।
‘মুক্তিযুদ্ধের নামধারী সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় বিজয়ের মাসে শ্রমিক, শিক্ষক, আইনজীবীদের ওপর রাতের অন্ধকারে হামলা হয়। এটা আমাদের ৪৯ বছরের স্বাধীনতার জন্য লজ্জাজনক ঘটনা।’
সরকারের ক্ষমতা হারানোর ভয় আছে মন্তব্য করে এ ছাত্রনেতা বলেন, ‘জনগণকে বলব যে, আজকে সরকার তাদের ক্ষমতা হারানোর ভয়ে আছে। সুতরাং আপনারা যদি ঐক্যবদ্ধ হন, এই স্বৈরশাসন আর টিকতে পারবে না। সরকারকে বলব, আপনারা যদি সম্মানজনক বিদায় চান, অতি দ্রুত সব রাজনৈতিক দল, সংগঠনগুলোকে নিয়ে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থার জন্য একটি কার্যকর উদ্যোগ নিন। অন্যথায় আপনাদের গণআন্দোলনের মুখে বিদায় নিতে হবে।
‘আপনার যতই টালবাহানা করেন আজকে জনগণ কিন্তু ক্ষুব্ধ। আজকে আপনাদের সেই সমর্থন নাই। কাজেই আপনাদের বিদায়ের ঘণ্টা বেজে গেছে। যতই দলকে চাঙ্গা করার চেষ্টা করেন, এ দেশের জনগণ কিন্তু তাদের ভোটাধিকার আদায়ে শিগগিরই রাজপথে নামবে।’
রোহিঙ্গা সমস্যা সরকার উপেক্ষা করছে অভিযোগ করে নুর বলেন, ‘রোহিঙ্গার মতো একটি আন্তর্জাতিক সমস্যাকে শুরু থেকেই সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পাশ কাটিয়ে তারা তাদের তথাকথিত বন্ধুরাষ্ট্র ভারতের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সমাধান করতে পারেনি। না পেরে জটিল পরিস্থিতিতে এখন পড়েছে, যেখানে জাতিসংঘসহ অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীরা বলছে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের না নেয়ার জন্য।
‘সবার মতামত উপেক্ষা করে সরকার রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নিয়ে সমাধানের পথ বন্ধ করে দিচ্ছে।’