বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভাস্কর্য ইস্যুতে সন্ধি চান ইসলামী দলের নেতা

  •    
  • ৮ ডিসেম্বর, ২০২০ ১৩:৫৬

ভাস্কর্য ইস্যুতে তিনি এবং তার পার্টি কী চান এমন প্রশ্নের জবাবে মাওলানা মো. ইসমাইল হোসাইন বলেন, ‘আমরা সন্ধি চাই। খালি মাঠে যেন কেউ গোল দিতে না পারে।’

ভাস্কর্য ইসলামে বৈধ নয় মন্তব্য করে সরকারের সঙ্গে সন্ধি করতে চায় ইসলামপন্থি একটি সংগঠন।

মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের এ অবস্থানের কথা জানান ইউনাইটেড ইসলামিক পার্টির সভাপতি মাওলানা মো. ইসমাইল হোসাইন।

ভাস্কর্য ও দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ইউনাইটেড ইসলামিক পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি।

ভাস্কর্য ইস্যুতে তিনি এবং তার পার্টি কী চান এমন প্রশ্নের জবাবে মাওলানা মো. ইসমাইল হোসাইন বলেন, ‘আমরা সন্ধি চাই। খালি মাঠে যেন কেউ গোল দিতে না পারে।’

এ নেতা আরও বলেন, ‘যদিও ভাস্কর্য বা মূর্তি ইসলামে বৈধ নয়, কিন্তু তারপরও বাংলাদেশে ভাস্কর্য নির্মাণ কোনো নতুন বিষয় নয়। সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা যাবে না। হুংকার দিয়ে সমাজ প্রতিষ্ঠিত করা যায় না। ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করা যাবে না।’

ভাস্কর্য ইসলামে বৈধ নয় এটি ইসলামের কোথায় আছে এ নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি মাওলানা, মুফতি না। ইসলামী সকল ফতোয়া মুফতি সাহেবগণ দিবেন।’

এ সময় তিনি বলেন, ‘অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনকের ভাস্কর্যের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে তার নামে হাসপাতাল, শহর, এয়ারপোর্ট, মসজিদ এমনকি মিনার। সরকারকে আহ্বান জানাই, এই বিষয় তিনি যেন বিবেচনা করেন৷’

ভাস্কর্য নির্মাণ চাচ্ছেন কি চাচ্ছেন না, এ নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘ইমাম সাহেবরা আমাদের ইমাম, আমাদের নেতা। তাদের পেছনে দাঁড়িয়ে আমরা সবাই নামাজ পড়ি। ইমাম সাহেবরা যা চাইবেন তাই হবে। তবে অবশ্যই আলোচনার ভিত্তিতে৷ আবার ইমামদের খেদাইয়া নদীতে ফালায় দিবেন, তা হইতে পারে না।’

১৯৭১ সালে হাক্কানি উলামারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে দেশ স্বাধীন করেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘যুদ্ধের পাশাপাশি আলেমরা মসজিদের কোনায় বসে বসে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য দেশের জন্য দোয়া করেছিল। তাই এই হাক্কানি উলামারা যা চাইবেন, তাই সরকারের মেনে নেয়া উচিত।’

তিনি বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরেই বাংলাদেশে ভাস্কর্য বিষয়টি নিয়ে একটি উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করে বিষয়টি এখন আলোচনার তুঙ্গে।

‘বাংলাদেশ একটা গণতান্ত্রিক দেশ। এ দেশ সংবিধান অনুযায়ী চলে। আলেমদের অবশ্যই দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণের কথা চিন্তা করতে হবে। অন্য কোনো মহলকে সুযোগ দেয়া যাবে না। বিষয়টিকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।’

এ সময় তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধী কিছু কুচক্রী মহলের আলেমরা দেশে হাক্কানি আলেমদেরকে উসকানি দেয়ার চেষ্টা করছে। আপনাদের বলতে চাই, সাধারণ মাদ্রাসার ছাত্র ও কওমি মাদ্রাসা ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল, জননিরাপত্তা নষ্ট করবেন তো কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে যাচ্ছি।’

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রতীক হাতপাখার দিকে ইঙ্গিত করে এ নেতা বলেন, ‘পাখা মার্কায় নির্বাচন করলেন সব আমলে। তখন সরকারের সাথে বসতে পারছেন। মাধুর্য ভাষায় বলতে পারছেন।

‘ভাস্কর্য ইস্যুতে কেন মাধুর্য ভাষায় বলেননি। কেন মাঠে বসে হুংকার দিছেন? ইসলাম হুংকার দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় নাই। নবী রাসুলদের ভাষা কী ছিল?’

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে লড়বেন, জ্বালাও-পোড়াও এগুলো করবেন, মাদ্রাসার ছাত্রদের মাঠে নিয়ে আসবেন। এগুলো হবে না। তার সাথে বসে মাধুর্য ভাষায় বলুন।’

ভাস্কর্য নিয়ে উসকানিতে বিএনপি-জামায়াত জড়িত দাবি করে ইসলামপন্থি দলের এ নেতা বলেন, ‘জামায়াত-বিএনপি চায় হেফাজতে ইসলামকে উসকানি দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে। এর আগে-পরেও দেখেছেন, কোটি কোটি টাকা দিয়ে তাদেরকে দিয়ে নিকৃষ্ট কাজ করানো হয়েছে। আমরা এর বিরোধিতা করছি।’

ভাস্কর্য যারা ভেঙেছে তাদের বিষয়ে অবস্থান কী, সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সব ভাস্কর্য ভাঙা যাবে না। ভাস্কর্য নিয়ে দ্বিমত থাকলে সেটা সরকারের নীতি নির্ধারকদের সাথে বসে সমস্যা সমাধান করা সম্ভব৷ বিশ্বে কোনো যুদ্ধ হলে সেটা আলোচনার ভিত্তিতে সমাধান করা যায়।’

সরকারের ওলামায়ে কেরাম, মাদ্রাসা ছাত্রদের যেন পুলিশ দ্বারা হয়রানি না করা হয়, সে আহ্বান জানান তিনি।

বাংলাদেশ সরকার ও দেশবরেণ্য ওলামায়ে কেরাম, পীর-মাশায়েখদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানিয়ে ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘আমরা অবশ্যই অবগত আছি যে, সভ্যতার শুরু থেকে মানুষের শিল্প চর্চার অন্যতম মাধ্যম হিসাবে গণ্য হয়েছে ভাস্কর্য। সংস্কৃতির সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন ব্যক্তির চরিত্র স্থান পেয়েছে ভাস্কর্য শিল্পে। শুধু মানুষ নয় বিভিন্ন দেশ ও জনপদের সম্পৃক্ত বিভিন্ন প্রাণী, চরিত্র অনুভূতি এবং উপলব্ধিও প্রকাশিত হয় ভাস্কর্যে, প্রাচীন কাল থেকে বাংলদেশেও ভাস্কর্য শিল্পের চর্চা চলছে।’

পৃথিবীর অন্যান্য দেশসহ মুসলিম অধ্যুষিত সব দেশেও ভাস্কর্য রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সেসব দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তি, রাষ্ট্রপ্রধান, জাতীয় নেতা, কবি, শিল্পীসহ বিভিন্ন চরিত্র স্থান পেয়েছে তাদের ভাস্কর্যে।’

বঙ্গবন্ধুর পূর্বপুরুষরা ইরাক থেকে ইসলাম প্রচারের জন্য বাংলাদেশে এসেছেন বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, যার নেতৃত্বে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি, তার পূর্বপুরুষরা ইরাক থেকে ইসলাম প্রচারের জন্য এ দেশে এসেছিলেন। সেই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু ইসলামের জন্য অনেক কাজ করে গেছেন। তার হাত দিয়েই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।

‘তারই সুযোগ্যকন্যা, বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ইসলামের জন্য, আলেম সমাজের জন্য যা কিছু করেছেন, অন্য কোনো সরকার তা করে নাই। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নির্দেশে দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় মডেল মসজিদ নির্মাণ হচ্ছে। দেশে প্রায় এক লক্ষ মসজিদভিত্তিক মক্তব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে প্রতি জন আলেম সরকারি ভাতা পাচ্ছে সাড়ে ৪ হাজার টাকার বেশি, যেটি কিছুদিন পরে আরও বাড়বে। পাকিস্তান আমল থেকে দাবি করলেও কেউ দেয়নি।’

শেখ হাসিনা কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতি দিয়েছে জানিয়ে ইসমাইল হোসাইন বলেন, ‘কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতির দাবি প্রায় ১০০ বছরের পুরােনাে। আমরা পাকিস্তান আমলে এই স্বীকৃতি চেয়েছিলাম, জিয়া-এরশাদ সাহেবের আমলেও চেয়েছিলাম। কিন্তু এই কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতি কেউ দেয়নি।

‘বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা এই কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতি দিয়েছেন। শুধু স্বীকৃতিই দেননি, এই স্বীকৃতির পর সেখানকার উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকুরিও পেয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এই উপমহাদেশে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য বহু বছর ধরে দাবি জানিয়ে এসেছি। কেউ এই দাবি পূরণ করেনি। বঙ্গবন্ধুকন্যাই ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন।’ 

ভাস্কর্য নিয়ে এ নেতা বলেন, ‘বাংলাদেশ মুসলিম প্রধান দেশ। ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান। এ দেশে ভাস্কর্য পুরোনো জিনিস। প্রাচীন ঈশা খাঁর আমলের সোনারগাঁয়ে ভাস্কর্য রয়েছে।

‘সারা দেশে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ভাস্কর্য রয়েছে, জিয়াউর রহমান, মাওলানা ভাসানীর ভাস্কর্য আছে। পৃথিবীতে সৌদি আরব, দুবাই, ওমান, কাতার, মিসর, পাকিস্তান ও তুর্কিতেও ভাস্কর্য রয়েছে। ভাস্কর্য রয়েছে ইতিহাসকে সংরক্ষণের জন্য।’

এ বিভাগের আরো খবর