বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভাস্কর্য, মূর্তি দুটোই থাকবে: জাফরুল্লাহ

  •    
  • ৮ ডিসেম্বর, ২০২০ ০৯:১৩

‘পরিষ্কার করে বলতে চাই, ভাস্কর্য আর মূর্তি দুটোই থাকবে… হিন্দুদের মূর্তি থাকবে না এটা হতে পারে না। তাদের মা দুর্গা থাকবে না, সরস্বতী বা গণেশ থাকবে না, এটা হবে না। আমরা যদি ইসলামে বিশ্বাস করি, মানবতার ধর্মে বিশ্বাস করি, তাহলে আমি মনে করি এই হিন্দুদেরকে ভগবান বানায়নি; মুসলমানদের আল্লাহ বানায়নি। আল্লাহ যদি সর্বশক্তিমান হয়, উনিই বানিয়েছেন, হয়তো বৈচিত্র্য আনার জন্য করেছেন।’ 

ধর্মভিত্তিক দলগুলোর বিরোধিতার মুখে সরকারের পক্ষ থেকে যখন ‘ভাস্কর্য ও মূর্তি এক নয়’ বলে বক্তব্য আসছে, তখন সরকারের কঠোর সমালোচক জাফরুল্লাহ চৌধুরী অবস্থান নিয়েছেন উল্টো। তিনি বলেছেন, এই দেশে ভাস্কর্য থাকবে, মূর্তিও থাকবে।

নিউজবাংলাকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে আলোচিত এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক ভাস্কর্য ইস্যুতে তার নিজের অবস্থান তুলে ধরেছেন। কথা বলেছেন ভাস্কর্যবিরোধীদের বিরুদ্ধে ওঠা যৌন নিপীড়ন নিয়ে।

ভাস্কর্য ইস্যুতে অবস্থান কী, আর সরকারে থাকলে কীভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতেন, এমন প্রশ্ন ছিল গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতার কাছে।

 

জবাবে তিনি বলেন, ‘পরিষ্কার করে বলতে চাই, ভাস্কর্য আর মূর্তি দুটোই থাকবে…হিন্দুদের মূর্তি থাকবে না এটা হতে পারে না। তাদের মা দুর্গা থাকবে না, সরস্বতী বা গণেশ থাকবে না, এটা হবে না। আমরা যদি ইসলামে বিশ্বাস করি, মানবতার ধর্মে বিশ্বাস করি তাহলে আমি মনে করি এই হিন্দুদেরকে ভগবান বানায়নি; মুসলমানদের আল্লাহ বানায়নি। আল্লাহ যদি সর্বশক্তিমান হয়, উনিই বানিয়েছেন, হয়তো বৈচিত্র্য আনার জন্য করেছেন।’ 

জাফরুল্লাহ হেসে বলেন, তার সরকারে থাকার কোনো কারণ নেই। তবু যদি থাকতেন তাহলে বঙ্গবন্ধুকে অনুসরণ করতেন। অনেক বেশি ক্ষমা করতেন।

ধর্মভিত্তিক কিছু দল যে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করছে, তা নিয়ে কী ভাবছেন, এমন প্রশ্নও ছিল জাফরুল্লাহর কাছে।

জবাবে তিনি বলেন, ‘এই নিয়ে আমি আলেমদেরকে বলেছি, আপনারা শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি, আপনারা এই নিয়ে বিতর্কে জড়াবেন না। এটি ভুল কাজ। এটি ইসলামের না।’

তিনি বলেন, ‘আলেমদের মনে করিয়ে দিয়ে বলতে চাই যে, কাবা শরিফে একটা মূর্তি আছে।’

সেই মূর্তি কোনটি, তার ব্যাখ্যাও দেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা।

বলেন, ‘কাবাতে যে পাথরটি আছে (হাজরে আসওয়াদ) যেখানে সব হাজি গিয়ে চুমু খান। সমস্ত মূর্তি ভেঙে ফেলা হয়েছে শুধু একটি ছাড়া। আমি বলতে চাই, এটা কি উল্কা, এটা কি মূর্তি নাকি খালি পাথর?’

‘তাই এসব বিতর্কে যাওয়া মোটেও ভালো কাজ না।’

তিনি বলেন, ‘ভাস্কর্য নিয়ে এ রকম আচরণ তাদের সংকীর্ণ মনের পরিচয়।’

বিষয়টি নিয়ে সরকার পক্ষ চালাকি করছে বলেও মনে করেন জাফরুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ তো বেরোতে পারছিল না। সরকার তাদের সুযোগ করে দিল। তাদের পুনর্বাসন করে দিল।’

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের পক্ষে হলেও তা সংখ্যায় যেন কম থাকে, সেটি চান জাফরুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘তাই বলে রাস্তার মোড়ে মোড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বসিয়ে তাকে ট্রাফিক পুলিশ বানায় দিয়েন না।’

ভাস্কর্যবিরোধীদের বক্তব্যের প্রতিবাদে মাদ্রাসায় যৌন নিপীড়ন বা বলাৎকার তথা ছেলে শিশু ধর্ষণের মতো চাপা দেয়া বিষয়টি সামনে এসেছে। ধর্মভিত্তিক দলগুলোর বিরুদ্ধে মাঠে নামা রাজনৈতিক কর্মীরা প্রশ্ন তুলছেন, বলাৎকার নিয়ে ধর্মীয় নেতারা কেন কথা বলছেন না।

জাফরুল্লাহ নিজেও এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। রাজধানীতে মানববন্ধনে তিনি বলেন, ‘মাদ্রাসায় যৌন নিপীড়নে মৌলভী সাহেবদের সম্মান নষ্ট হচ্ছে।’

একটি বেসরকারি টেলিভিশনে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ভাস্কর্য নিয়ে কথা বলার আগে মাদ্রাসায় বলাৎকার বন্ধ করা উচিত।

গত কয়েক বছরে জাফরুল্লাহ সরকারবিরোধীদের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। বাইরে নয় কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক দল, সংগঠনগুলোও।

এরা আবার তাদের পছন্দের মানুষের কাছে মাদ্রাসায় বলাৎকারের কথা শুনে আহত হয়েছেন। একাধিক সংগঠন জাফরুল্লাহকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

তাদের এমন প্রতিক্রিয়ার বিষয়েও প্রশ্ন ছিল আলোচিত এই রাজনৈতিক ধারাভাষ্যকারের কাছে।

জাফরুল্লাহ জানান, তাকে যে ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছে, সেটা জানেন না।

তিনি বলেন, ‘আমি আলেমদের আহ্বান করে বলেছি, মাদ্রাসা শিক্ষকেরা কেন বলাৎকারে জড়িত হবে, ইমাম-মোয়াজ্জিনরা কেন নিপীড়নে জড়িত হবে। আপনারা মানবিক দিক দিয়ে এটা দেখুন। একজনের নামেও যেন এমন অভিযোগ না আসে তা নিশ্চিত করুন।’

ধর্মীয় নেতাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ তোলার পর নানা সময় আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছে। ‘আপনি কি ভয় পান?’, এমন প্রশ্ন ছিল জাফরুল্লাহর কাছে।

জবাবে তিনি বলেন, ‘কেউ যদি আমাকে মুরতাদ ঘোষণা করে তাতেও আমি ভয় পাই না। কারণ তাদের যুক্তিতে আসতে হবে।

‘অপরাধ করলে শাস্তি পাব। যেখানে ভুল কিছুই বলিনি, ক্ষমা চাইব কেন?’  

তিনি বলেন, ‘কিছু কিছু মাদ্রাসা, সবাই না। আমি শুনেছি, সেখানে নাকি জাতীয় সংগীত গাওয়া হয় না। বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানো হয় না। আপনারা এই ভুল কাজটা কইরেন না। এই পাগলামি কইরেন না।’

এ বিভাগের আরো খবর