কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার মাধ্যমে অনভিপ্রেত পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে মন্তব্য করে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক বলেছেন, বিষয়টা অনাকাঙ্ক্ষিত, দুঃখজনক ও অত্যন্ত নিন্দনীয়।
সোমবার সন্ধ্যার পর ফেসবুক লাইভে এসে তিনি আরও বলেন, ঘটনার সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্ট করে ওলামায়ে-কেরামদের ঘায়েল করার চেষ্টা করছে একটি মহল।
গোটা দেশে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় আছেন জানিয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বানও জানিয়েছেন মামুনুল হক।
রাজধানীর ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করতে গিয়ে প্রথমে মাঠে নামে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন। দলের সিনিয়র নায়েব আমির ফয়জুল করীম সমাবেশ করেন এই প্রকল্প বাতিলের দাবিতে।
পরে মামুনুল হক হুমকি দেন, এই ভাস্কর্য নির্মাণ হলে তিনি ২০১৩ সালের ৫ মের মতো পরিস্থিতি তৈরি করবেন। এরপর হেফাজতে ইসলামের আমির জুনাইদ বাবুনগরী হুমকি দেন ভাস্কর্য নির্মাণ হলে টেনেহিঁচড়ে ফেলে দেবেন তারা।
গত ২৭ নভেম্বর চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে এক মাহফিলে ভাস্কর্য নির্মাণ হলে হেনেহিঁচড়ে ফেলে দেয়ার হুমকি দেয় হেফাজতে ইসলাম
এর মধ্যে শুক্রবার রাতে কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন একটি ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে পুলিশ স্থানীয় একটি কওমি মাদ্রাসার দুই ছাত্র ও দুই শিক্ষককে গ্রেফতার করেছে। পুলিশকে দুই ছাত্র জানান, তারা মামুনুল হক ও ফয়জুল করীমের ওয়াজ শুনে ভাস্কর্য ভেঙেছেন।
এসব ঘটনাপ্রবাহের পর সোমবার বাবুনগরী, মামুনুল ও ফয়জুলের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের দুটি মামলার আবেদন গ্রহণ করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে ঢাকার একটি আদালত।
বাদীদেরকে ‘ইসলামের শত্রু’ বলা হয়েছে আসামিদের পক্ষ থেকে। হেফাজত নেতা মামুনুল হকের দল খেলাফত মজলিস বিবৃতিতে বলেছে, বাদীরা ‘ইসলাম, আলেম-ওলামা ও দেশের শত্রু।’
মামুনুল হক ফেসবুক লাইভে বলেন, ‘যখন আলোচনার মাধ্যেমে শান্তিপূর্ণভাবে চলমান এই বিতর্কের একটা সুন্দর নিরসন আমরা আশা করছিলাম, ঠিক ওই সময় রাতের অন্ধকারে কুষ্টিয়ায় নির্মিতব্য বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার মাধ্যমে যে অনভিপ্রেত পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে, তা অনাকাঙ্ক্ষিত, দুঃখজনক ও অত্যন্ত নিন্দনীয়।’
গ্রেফতার দুই ছাত্র মামুনুল হক ও ফয়জুল করীমের ওয়াজ শুনে ভাস্কর্য ভাঙার কথা বললেও মামুনুল বলছেন, তিনি কখনোই কাউকে আইন হাতে তুলে নিতে বলেননি।
মামুনুল হক বলেন, ‘এর সঙ্গে আমি এও লক্ষ্য করলাম, কেউ কেউ এর সঙ্গে আমার নাম জড়ানোর চেষ্টা করছে। আমি অত্যন্ত দ্ব্যর্থহীনভাবে বলছি, আমার কোনো বক্তব্য বা কোথাও কোনো কথায় এভাবে আইন হাতে তুলে নেয়ার মতো কথা কস্মিনকালেও বলিনি।
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ হলে আরেকটি শাপলা চত্বর তৈরির হুমকি দিয়েছেন মামুনুল হক
‘এটা কোনো দেশপ্রেমিক মানুষ, দেশের আইন ও শৃঙ্খলার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনকারী কোনো ব্যক্তি এটা করতে পারে না। সুতরাং আমি এমন কোনো কথা আদৌ বলিনি।’
এসময় তিনি জানান, তারা কোনোদিন রাষ্ট্রক্ষমতায় আসতে পারলে শরীয়ার আলোকে সকল কার্যক্রম ঢেলে সাজাবেন।
মামুনুল হক বলেন, ‘আমার বক্তব্য স্পষ্ট, ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে ভাস্কর্য রাখা নাজায়েজ ও হারাম- সে কথা আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছি।
‘আমরা আমাদের এ বক্তব্য স্পষ্ট করেছি যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যদি আমাদের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সক্ষমতা দান করেন, তাহলে শরীয়ার আলোকে সকল কার্যক্রম আমরা ঢেলে সাজাব। সেক্ষেত্রে ভাস্কর্য শরীয়া আইনে পরিচালিত কোনো ভূখণ্ডে থাকতে পারবে না ইনশা আল্লাহ।’
এসময় কুষ্টিয়ার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সুতরাং এই যে কুষ্টিয়ায় যারা এ কার্যক্রম করেছে, আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানাব যে, এভাবে নিজের হাতে আইন তুলে নিয়ে দেশের মধ্যে সংঘাতমূলক পরিবেশ তৈরি করার জন্য যারা দায়ী, এটার দায় যেন শুধুমাত্র তাদেরকেই দেয়া হয়। এবং এর জন্য তাদের বিরুদ্ধে যেন ব্যবস্থা নেয়া হয়।’
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ইস্যুতে প্রথমে মাঠে নামে চরমোনাইয়ের পীরের দল ইসলামী আন্দোলন
মামুনুল বলেন, ‘এর সঙ্গে আমাদেরকে সংশ্লিষ্ট করে, ওলামায়ে-কেরামদের ঘায়েল করার চেষ্টা করছে একটি স্বার্থান্বেষী ও বিদ্বেষী মহল। তারা যেন এখানে কোনোভাবেই সুযোগ নিতে না পারে।
‘এর মাধ্যমে গোটা দেশে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার একটি আশঙ্কা আমি করছি এবং সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকল মহলকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।’