বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

অবৈধ গর্ভপাত ঘটিয়ে কোটিপতি নার্স

  •    
  • ৭ ডিসেম্বর, ২০২০ ২৩:২৬

ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নার্স মমতাজ চারতলা ফাউন্ডেশন দিয়ে একতলা ভবন করেছেন। তা ছাড়া ময়মনসিংহ নগরীর চয়না মোড়ে ছয় শতাংশ জমি কিনেছেন। যার বাজার মূল্য কোটি টাকা।

ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক জন নার্স অবৈধ গর্ভপাত ঘটানোর কাজ করে কোটিপতি হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

মমতাজ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংলগ্ন দিউ এলাকায় নিজের বাড়িতে বসবাস করেন। তার স্বামী আবু বকর সিদ্দিক স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেনে শিক্ষকতা করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফুলপুর পৌর শহরের বাসিন্দা এক নারী বলেন, ২০১৪ সালে কলেজে পড়ার সময় এক ব্যবসায়ীর প্রেমে পড়েন। একপর্যায়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। দুঃশ্চিন্তায় ভেঙে পড়েন। পরে এক জনের পরামর্শে উপায় খোঁজার জন্য যান নার্স মমতাজ বেগমের কাছে। তিনি ৬ হাজার টাকায় গর্ভপাত ঘটান।

এরপর নানা শারীরিক সমস্যায় ভোগেন তিনি। বলেন, গর্ভপাতের কিছুদিন পর জরায়ুতে ব্যথা অনুভব করেন। দুই বছর পর বিয়ে হয়। কিন্তু তার গর্ভে আর কোনো বাচ্চা আসেনি। এজন্য নার্স মমতাজের মাধ্যমে অপরিকল্পিত গর্ভপাত ঘটনোকেই দায়ী করেন তিনি।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, প্রাইভেট ক্লিনিক ও বাসাবাড়িতে চুক্তিতে অনেকের গর্ভপাত ঘটানোর কাজ করেন মমতাজ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কয়েক জন নার্স বলেন, মমতাজের কাছাকাছি সময়ে তারাও চাকরিতে যোগ দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। আর মমতাজ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কাছে জায়গা কিনে চারতলা ফাউন্ডেশন দিয়ে একতলা ভবন করেছেন।

তা ছাড়া মমতাজ ময়মনসিংহ নগরীর চয়না মোড়ে ছয় শতাংশ জমি কিনেছেন। যার বাজার মূল্য কোটি টাকা। তার এক মেয়ে কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (সিবিএমসিবি) পড়াশোনা শেষ করে ইন্টার্ন করছেন। যেখানে ভর্তি হতেই কয়েক লাখ টাকা লাগে। মমতাজের স্বামীর আয়ও খুব বেশি নয়।

তারা বলেন, ফুলপুর, হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া এবং তারাকান্দায় মমতাজের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট রয়েছে। গর্ভপাত ঘটাতে চান, এমন তরুণী ও নারীদের তার কাছে নিয়ে আসেন এই চক্রের সদস্যরা। একেক জনের গর্ভপাতের কাজ করতে তিনি ৩ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা নেন।

অনেকেই গর্ভপাত করাতে গিয়ে সমস্যায় পড়েছেন। কিন্তু লোকলজ্জার ভয়ে কেউ মুখ খোলেননি। মমতাজও থেকে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

স্থানীয় বাসিন্দা রুহুল আমিন ও মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নার্স মমতাজের মতো অনেকেই আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন। আমরা এর সঠিক তদন্ত চাই। মমতাজের বিষয়টি সামনে এলেই, বাকিদেরও আসবে।’  

তবে মমতাজ বেগম বলেন, তিনি ২৫ বছর ধরে সুনামের সঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চাকরি করছেন। এক সময় তিনি গর্ভপাত ঘটাতে সাহায্য করতেন। অন্যায় কিছু করেনেনি। তবে এখন আর বিবেকের তাড়নায় এসব করেন না। বাড়ি ও জমি তিনি অন্যায়ভাবে করেননি।মমতাজের স্বামী আবু বকর সিদ্দিক বলেন, তিনি ফুলপুরে একটি কিন্ডার গার্টেনে শিক্ষকতা করেন। প্রাইভেট শিক্ষক হিসেবে তার জনপ্রিয়তা রয়েছে। প্রাইভেট পড়িয়ে তিনিও সংসারে টাকা দেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা প্রাণেশ চন্দ্র পণ্ডিত বলেন, তিনি যোগ দেয়ার পর গর্ভপাত করানো নিয়ে মমতাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে তা তদন্ত করে সত্যতা পান। মমতাজকে সতর্কও করেন। এসব আর করবেন না মর্মে মমতাজ অঙ্গীকার করেছেন। তার জানামতে, মমতাজ এখন আর গর্ভপাত ঘটানোর কাজ করেন না।

বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন (বিএনএ) ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল শাখার সভাপতি লুৎফুর রহমান বলেন, এক জন নার্সের দায়িত্ব রোগীর সেবা করা। গর্ভপাত করানো তার দায়িত্ব না। তবে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হলে চিকিৎসকের অনুমতি নিয়ে তা করতে পারবেন। অন্যথায় তিনি অপরাধী বলে গণ্য হবেন।  সিভিল সার্জন এবিএম মসিউল আলম বলেন, চিকিৎসকের অনুমতি নিয়েই এক জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স গর্ভপাতে সাহায্য করতে পারেন। তবে কেউ গণহারে এসব করতে পারবেন না।

মমতাজ বেগমের বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। সত্যতা পেলে, আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

 

এ বিভাগের আরো খবর