কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের প্রতিবাদে বিক্ষোভ-সমাবেশ অব্যাহত আছে। সোমবার দ্বিতীয় দিনের মতো জেলায় জেলায় প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছেন আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছেন তারা।
টাঙ্গাইল: বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্য অবমাননার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু পরিষদ।
সোমবার দুপুর ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ মানববন্ধন কর্মসূচি হয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বঙ্গবন্ধু পরিষদের যুগ্ম-সম্পাদক অধ্যাপক ড. শামীম আল মামুন।
বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন ‘আমাদের সোচ্চার হতে হবে, বসে থাকলে চলবে না, রাস্তায় নামতে হবে। বঙ্গবন্ধু মানে স্বাধীনতা, পতাকা ও মাতৃভুমি। বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্য অবমাননা মানে স্বাধীনতা, পতাকা ও মাতৃভুমির উপর আঘাত।'
কুমিল্লা: বঙ্গবন্ধুর ভার্স্কয ভাংচুরের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনগুলো।
সোমবার বিকেল সাড়ে তিনটায় নগরীর টাউন হলে বিক্ষোভ শুরু হয়। এতে যোগ দেন সদর উপজলোর নানা ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত। তিনি বলেন, ’যারা বঙ্গবন্ধুর ভার্স্কয ভাংচুর করেছে তারা পাকিস্তানের এজেন্ট। ধর্মের দোহাই দিয়ে ভাস্কর্যকে মূর্তির সঙ্গে তুলনা করে জনজণকে বিভ্রান্ত করছে তারা। মহানগর আওয়ামী লীগের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেলে উচিত জবাব দেয়া হবে।'
পরে একটি প্রতিবাদ মিছিল নগরীর টাউনহল থেকে শুরু হয়ে শহরের বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করে।
গোপালগঞ্জ: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন হয়েছে।
সোমবার দুপুর ১২টায় শুরু হয় প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন। এতে সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এ. কিউ. এম. মাহবুব।
সমাবেশে কুষ্টিয়ায় জাতির পিতার ভাস্কর্য ভাংচুরের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান বক্তরা।
অনুষ্ঠানের সভাপতি মাহবুব বলেন, ‘জাতির পিতার ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেলে বাঙলি জাতির হৃদয় থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম মুছে ফেলা যাবে না। মুজিব এটি একটি আদর্শ ও চেতনা।’
অনুষ্ঠানে বিশ্বদ্যিালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশ নেন।
যশোর: যশোরে আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাখেন যশোর-৬ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার।
তিনি বলেন, ‘ঈদের সময় দান করা চামড়া ও মাংস বেচে-খেয়ে গর্দান মোটা করেছে দেশ বিরোধীরা। আমাদের সবকিছু প্রস্তুত আছে, যাদের গর্দান মোটা, তাদের গর্দান কিন্তু থাকবে না। জাতির পিতাকে নিয়ে যারা চুলকানি করবেন, তাদের ঘরবাড়ি থাকবে না।’
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক ও যশোর পৌরসভার মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু, মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহিতকুমার নাথ, জেলা মহিলালীগের সাধারণ সম্পাদক জোছনা রানী, জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি সৈয়দ মেহেদী হাসান, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম জুয়েল, সাবেক সভাপতি রওশন ইকবাল শাহী প্রমুখ।
জামালপুর: ভাস্কর্য ভাঙচুরকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে জামালপুর মানববন্ধন হয়েছে। সোমবার বিকেলে জামালপুর শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি জামালপুর শাখার ব্যানারে এই মানববন্ধন হয়।
কমিটির জামালপুর জেলা শাখার সভাপতি মুক্তা আহম্মেদের সভাপতিত্বে ঘণ্টাব্যাপী এ কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ বাকি বিল্লাহ।
বিশেষ অতিথি হিসেবে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহম্মেদ চৌধুরী, সিনিয়ির সহ-সভাপতি সৈয়দ আতিকুর রহমান ছানা, দফতর বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান আকন্দ বাবুসহ ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ও স্থানীয় সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা বক্তব্য রাখেন।
ফারুক আহম্মেদ চৌধুরী বলেন, 'জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উপর আঘাত মানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার উপর আঘাত। আমরা বাবুনগরীসহ ইসলামের অপব্যাখাকারী মাওলানাদের সতর্ক করে দিতে চাই। সঠিক পথে আসুন, না হলে নিজামী, সাঈদীর যে পরিণতি হয়েছে, বাবুনগরী আপনার পরিণতি এর চেয়ে ভয়াবহ হবে। আপনাকে আইনের আওতায় নয়, বাংলার জনগণ রাস্তায় পিটিয়ে মেরে ফেলবে।’
মানববন্ধনে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেয়।
মেহেরপুর: মেহেরপুরের গাংনীতে জেলা ও উপজলো আওয়ামী লীগের আয়োজনে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। শহীদ রেজাউল চত্বরে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সাংসদ মোহাম্মদ সহিদুজ্জামান খোকন।
তিনি বলেন, 'দেশ বিরোধীদের বিষয়ে আমাদের সোচ্চার হবে হবে। স্বার্বভৌমত্ব রক্ষায় সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। জনগণ এক হলেই তাদের রুখে দেয়া সম্ভব।'
গাংনী উপজলো আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুজ্জামান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও বক্তব্য রাখেন।
নেত্রকোণা: সোমবার সকালে শহরের পৌরভবনের সামনের সড়কে জেলা যুব মহিলা লীগ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। এতে বক্তব্য রাখেন জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি শামছুন্নাহার বিউটি, সাধারণ সম্পাদক অনিতা নন্দী, মঞ্জুরাণী সরকারসহ বেশ কয়েকজন নেতা।
শামছুন্নাহার বিউটি বলেন, 'কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙ্গার মধ্য দিয়ে দেশজুড়ে মৌলবাদী গোষ্ঠীর আস্ফালন চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে। এদের মদদদাতাদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
মানববন্ধনে যুব মহিলা লীগের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরাও অংশ নেন।
পাবনা: মানববন্ধন করেছে স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ। সোমবার সকালে পাবনা প্রেসক্লাবের সামনে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে ভার্স্কয ভাঙার সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তির দাবি জানান তারা।
এসব ভার্স্কয ভাঙার পেছনে বিএনপি- জামায়াত জোটের নীলনকশা আছে বলে অভিযোগ করেন বক্তারা।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন সদর উপজলা চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন, পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি তসলিম হাসানসহ জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা।
সিরাজগঞ্জ: ভাস্কর্য ভাঙচুরের প্রতিবাদে প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন হয়েছে সিরাজগঞ্জে। সোমবার দুপুরে রায়গঞ্জ প্রেসক্লাব চত্ত্বরে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন 'আমাদের ঠিকানা ও আলেয়া মেমোরিয়াল স্পোটিং ক্লাব' এই কর্মসূচির আয়োজন করে।
সংগঠনের সভাপতি এম.এম হাসানাজ্জামানের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভায় বক্তারা বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্য ভাঙচুরের মতো জঘন্য ঘটনায় জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তির দাবি জানান।
ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে ছিলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগসহ মুক্তিযোদ্ধের চেতনায় পক্ষের সকল সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও এলাকার সর্বস্তরের জনগণ।
কক্সবাজার: কক্সবাজারে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছেন আট উপজেলা যুবলীগের নেতাকর্মীরা।
কক্সবাজার শহরে জেলা যুবলীগ সভাপতি সোহেল আহমদ বাহাদুর ও সাধারণ সম্পাদক শহীদুল হক সোহেলের নেতৃত্বে বিক্ষভ মিছিল ও সমাবেশ হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম বদি।
মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে পৌরসভা গেইট চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।
সেখানে সমাবেশে বক্তারা বলেন, 'জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙা দৃষ্টতা যারা দেখিয়েছে, তাদের কোনোভাবেই ক্ষমা করবে না যুবলীগ। জাতির পিতা মুজিবের আদর্শ লালনকারীরা প্রয়োজনে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিবে, তবুও জামায়াত-শিবিরসহ স্বাধীনতাবিরোধী চক্রকে দেশের মাঠি থেকে চিরতরে উৎখাত করে দিতে প্রস্তুত আছে।
ভাস্কর্য ভাঙার প্রতিবাদে এর আগে রোববার সারা দেশেই বিক্ষোভ-সমাবেশ করেন আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।