ধর্মভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম জানিয়েছে, ভাস্কর্য ইস্যুতে তারা সরকারের সঙ্গে শত্রুতা করতে চায় না। কিন্তু একটি গোষ্ঠী সরকারকে ভুল প্ররোচনা দিয়ে সরকারদলীয় সংগঠনগুলোকে এই পথে ঠেলে দিচ্ছে।
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য টেনেহিঁচড়ে ফেলে দেয়ার হুমকি দেয়া হেফাজতের আমির জুনাইদ বাবুনগরীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা অনুমোদন দেয়ার পর এক বিবৃতিতে এ কথা বলেছে চট্টগ্রামকেন্দ্রিক সংগঠনটি।
রাজধানীর ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করতে গিয়ে প্রথমে মাঠে নামে চরমোনাইয়ের পীরের দল ইসলামী আন্দোলন। দলের সিনিয়র নায়েব আমির ফয়জুল করীম সমাবেশ করেন এই প্রকল্প বাতিলের দাবিতে।
পরে মামুনুল হক হুমকি দেন, এই ভাস্কর্য নির্মাণ হলে তিনি ২০১৩ সালের ৫ মের মতো পরিস্থিতি তৈরি করবেন।
এরপর হেফাজতে ইসলামের আমির জুনাইদ বাবুনগরী হুমকি দেন ভাস্কর্য নির্মাণ হলে টেনেহিঁচড়ে ফেলে দেবেন তারা।
ভাস্কর্য নির্মাণ হলে টেনেহিঁচড়ে ফেলে দেয়ার হুমকি দিয়েছিলেন হেফাজতের আমির জুনাইদ বাবুনগরী
এর মধ্যে শুক্রবার রাতে কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন একটি ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে পুলিশ স্থানীয় একটি কওমি মাদ্রাসার দুই ছাত্র ও দুই শিক্ষককে গ্রেফতার করেছে।
পুলিশকে দুই ছাত্র জানান, তারা মামুনুল হক ও ফয়জুল করীমের ওয়াজ শুনে ভাস্কর্য ভেঙেছেন।
সোমবার সকালে বাবুনগরী ছাড়াও হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক এবং ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র নায়েবে আমির ফয়জুল করীমের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করার অনুমতি চেয়ে আদালতে আবেদন করে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামে একটি সংগঠন। এই আবেদন গ্রহণ করে মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
বিকালে হেফাজতের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে মামলাটি প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।
কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার ঘটনায় ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়েছে
‘উগ্রগোষ্ঠী প্ররোচনা দিচ্ছে’
এতে বলা হয়, ‘সরকারের সঙ্গে শত্রুতামূলক আচরণ করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। কিন্তু ইসলামবিদ্বেষী উগ্র সেক্যুলার গোষ্ঠী সরকারকে ভুল প্ররোচনা দিচ্ছে এবং সেই সঙ্গে সরকারদলীয় সংগঠনগুলোর কতিপয় নেতা ওলামায়ে কেরামের বিরুদ্ধে অশোভন ও বেয়াদবিমূলক এবং অশ্লীল ভাষায় বক্তব্য ও উসকানি দিচ্ছে।’
কোনো ‘ষড়যন্ত্রকারী’ মহল যেন রাজনৈতিক উসকানি দিয়ে দেশের শান্তি শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করার সুযোগ না পায় সে জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বানও জানায় হেফাজত।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আপনার সঠিক ও দূরদর্শী নির্দেশনা দেশকে সংঘাতের পথ থেকে রক্ষা করতে পারে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আমরা আশা করি সরকার এমন কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত দেবে না যাতে সরকারের সঙ্গে ওলামায়ে কেরামকে চরম শত্রুতার পর্যায়ে নিয়ে যাবে।’
‘বঙ্গবন্ধুকে আজাবের মুখোমুখি করবেন না’
হেফাজত নান্দনিকতা, শিল্পকলা ও স্থাপত্যকলার বিরুদ্ধে নয় দাবি করে বিবৃতিতে দাবি করা হয়, প্রাণী বা মনুষ্য ভাস্কর্য নির্মাণে ইসলামে সুস্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ বিষয়ে আলেমদের মধ্যেও কোনো মতান্তর নেই।
হেফাজত বলে, ‘আল্লাহ ও তার রাসুল (স.) এর সুস্পষ্ট নির্দেশনার বিরুদ্ধে গিয়ে ভাস্কর্য বানিয়ে কবরে শায়িত বঙ্গবন্ধুকে আজাবের সম্মুখীন করবেন না।’
‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ চিহ্নিত সন্ত্রাসী সংগঠন’
মামলার বাদী মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চকে ‘দেশবিরোধী চিহ্নিত সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবেও উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে।
বলা হয়, ‘শুরু থেকেই এটি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য খ্যাত। সাম্প্রতিক অতীতে বিভিন্ন ছাত্র-আন্দোলনের সময় সংগঠনটি আন্দোলনরত নিরীহ ছাত্রদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।’
এদের দ্বারা প্ররোচিত না হতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অনুরোধও করেছে হেফাজত।